| শনিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 17 বার পঠিত
রাশিয়াকে সামাল দিতে দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে ট্যাংক চাইছিল ইউক্রেন। ইউক্রেনের ওই আহ্বানে সাড়া মিলেছে। দেশটিকে ট্যাংক দিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, পোল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ। ট্যাংক নিয়ে বোঝাপড়া শেষে এবার আরেকটি নতুন দাবি সামনে এনেছেন কিয়েভের নেতারা। দাবিটি হলো, তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে পশ্চিমা যুদ্ধবিমান।
এ ব্যপারে চলতি সপ্তাহেই সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে কথা বলছিলেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ। আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, গত বছর খ্রিষ্টীয় বড়দিনের সময় সান্তা ক্লজের কাছে নিজের বিভিন্ন ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ওই তালিকায় নাকি যু্দ্ধবিমানও ছিল। ওই বক্তব্যের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে পশ্চিমাদের কাছে যু্দ্ধবিমান চাইছেন তিনি।
শুক্রবার বিষয়টি আরও পরিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি। সিএনএনকে তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন সরকারের কাছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির যুদ্ধবিমান চেয়েছেন। ইউক্রেনীয়দের কী প্রয়োজন, তা নিয়ে আমরা সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছি। তাদের দরকার মেটাতে আমরা সর্বোচ্চ করছি। কোনো চাহিদা যদি মেটাতে না–ও পারি, আমাদের মিত্রদেশগুলো তা পূরণ করবে।
এফ–১৬–এর কথা বলা হচ্ছে, কারণ গত সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওপকে হোয়োকস্ত্রাকে দেশটির একজন পার্লামেন্ট সদস্য এ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে সরবরাহ করা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘নেদারল্যান্ডস (ইউক্রেনকে) কী দিতে পারবে এ নিয়ে যখন কথা উঠেছে, তখন আমি বলব কোনো কিছু দিতে কোনো বাধা নেই।’
এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের নির্মাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সেগুলোর প্রথম ব্যবহার শুরু হয় গত শতকের সত্তরের দশকে। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে এ যুদ্ধবিমান আর কিনছে না। ইউরোপের দেশগুলোও বেশ পুরোনো এ বিমান বদলে পঞ্চম প্রজন্মের এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করছে। ফলে পুরোনো এফ–১৬ যুদ্ধবিমানগুলো অন্য দেশের কাছে বিক্রি করতে পারে তারা। যেমন বাহরাইন ও জর্ডানের মতো অনেক দেশ তাদের সামরিক বাহিনীর জন্য এই বিমান এখনো কিনছে।
নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গত সপ্তাহের বক্তব্যে এটা অনেকটা আন্দাজ করা যাচ্ছে যে ইউক্রেন তাদের কাছে এফ–১৬ চেয়েছে। নেদারল্যান্ডসের হাতে বর্তমানে ২৪টি এফ–১৬ আছে। আগামী বছর নাগাদ দেশটির এ যু্দ্ধবিমান বদলে এফ–৩৫ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে ১২টি এফ–১৬ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহারের জন্য বিক্রি করেছিল দেশটি।
এ নিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পিটার উইজনিনগা বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের হাতে অনেগুলো এফ–১৬ আছে, যেগুলো অন্য দেশের কাছে বিক্রি করা যেতে পারে বা বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে দেওয়া যেতে পারে। আমি মনে করি, নেদারল্যান্ডস সরকার কিয়েভের হাতে এ যুদ্ধবিমানগুলো তুলে দেওয়ার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছে।’
সমরবিদদের অনেকের মতে, শুধু এফ–১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের জন্য আলাদা কোনো সুবিধা বয়ে আনবে না। এমনই একজন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য হেগ সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক টিম সুইজ। তিনি বলেন, ‘শুধু এ বিমানগুলো যুদ্ধের মোড় বদলে দিতে পারবে না। সেনাসদস্য, ট্যাংক, হিমার্সের মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উপক্ষেপণ ব্যবস্থা এবং রাশিয়ার রাডার ব্যবস্থা ফাঁকি দেওয়ার ব্যবস্থার সঙ্গে এফ–১৬ মাঠে নামানো হলে যুদ্ধে ইউক্রেনের পালে হাওয়া লাগতে পারে।’
এফ–১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর জন্য রাশিয়ার অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বড় একটি বাধা হতে পারে বলে মনে করছেন রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) জ্যেষ্ঠ গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক। তাঁর ভাষায়, ‘পশ্চিমা যুদ্ধবিমানগুলো ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়া ভূখণ্ডে গিয়ে হামলা চালাতে পারবে, এটা আকাশকুসুম চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। বাস্তবতাটা হলো রুশ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যেমন ইউক্রেনের যুদ্ধবিমানগুলোর জন্য বড় হুমকি, তেমনই পশ্চিমা যুদ্ধবিমানগুলোর জন্যও হুমকি ডেকে আনবে।’
Posted ১:১৯ এএম | শনিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।