মঙ্গলবার ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

যেভাবে গজলসম্রাট পঙ্কজ উদাস হয়েছিলেন তিনি

বিনোদন ডেস্ক   |   সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   67 বার পঠিত

যেভাবে গজলসম্রাট পঙ্কজ উদাস হয়েছিলেন তিনি

গুজরাটের জোতপুরে এক কৃষক পরিবারে জন্ম পঙ্কজ উদাসের। সময়টা ১৯৫১ সালের ১৭ মে। অবশ্য পূর্বপুরুষদের একসময় জমিদারি ছিল। সেই পরিবারেই সংগীতের সঙ্গে বড় হতে থাকেন তিনি। শৈশব কাটে দুই ভাইয়ের গান শুনে। তাঁর ভাই নির্মল উদাস ও মানহার উদাস গান করতেন। সে সময় গান গেয়ে তাঁরা সফলতার খাতায় নাম লেখান। যে কারণে পঙ্কজ উদাসকে আর গান গাওয়া নিয়ে পরিবার থেকে কেউ কিছু বলেননি। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে গানের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেওয়ায় সংগীতই ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে তাঁর। সংগীত দিয়েই তিনি ভক্তদের কাছে হয়ে ওঠেন পঙ্কজ উদাস। সব ছেড়ে আজ সোমবার তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তাঁর সংগীতজীবনের বিস্তার চার দশকের বেশি সময়। আজ মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বেলা ১১টা নাগাদ মৃত্যু হয় শিল্পীর।

পঙ্কজের ভাই নির্মল সিনেমায় নিয়মিত গান করতে থাকেন। পরে মানহারের ক্যারিয়ারের সফলতাও এগিয়ে নেয় পঙ্কজ উদাসকে। সে সময় নির্মল ও মানহার উদাস একের পর এক গান করার সুযোগ পান। তাঁদের ভাই কিশোর পঙ্কজ উদাসও যে গান করতে পছন্দ করেন, এটা অনেকেই জানতেন।

মাত্র ১৩ বছর বয়সেই পঙ্কজ উদাসের ডাক পড়ে মঞ্চে গান করার জন্য। একদিন মঞ্চে ‘অ্যায় মেরে ওয়াতান কে লোগো’ গানটি গেয়ে প্রশংসিত হন কিশোর পঙ্কজ। সেদিন তাঁর গান গাওয়ার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিলেন শ্রোতারা। এই কিশোরকে ঘিরে একসময় ভিড় লেগে যায়। এই ভিড়ের মধ্যে তিনি দেখেন যে তাঁর গান শুনে একজন পকেটে ৫১ রুপি বকশিশ দিয়েছেন। সেই ছিল গান গেয়ে তাঁর প্রথম প্রাপ্তি।

দুই ভাই তখন নিয়মিত গান করতেন। সে সময় উদাস পরিবার গুজরাট থেকে মুম্বাইয়ে চলে আসে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন পঙ্কজ উদাস। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ডিগ্রি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। তখনো পেশাগতভাবে গান শুরু করেননি। বিজ্ঞানের জ্ঞান নিয়ে ক্ল্যাসিক ভোকাল মিউজিকে মুম্বাইয়ের মাস্টার নাভরাং থেকে ট্রেনিং নেন তিনি। ভারতের শাস্ত্রীয় সংগীতে দক্ষতা অর্জনের সেই সময় পঙ্কজ উদাস প্রথম একটি সিনেমায় গান করেন। সিনেমাটির নাম ছিল ‘কামনা’। সিনেমাটি ফ্লপ হয়। কিন্তু গানটি প্রশংসিত হয়। পরে সিনেমা নয়, গজলের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় তাঁর। উর্দুতেও তিনি গজল গাইতে থাকেন।

পঙ্কজ উদাস তখন স্বল্প পরিসরে পাড়া–মহল্লায় গজল গেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। একই পরিবারের তিন ভাই গান করেন, এটা নিয়ে অনেকেই তাঁদের প্রশংসা করেন। পঙ্কজ উদাস মনস্থির করেন যে গজলের অ্যালবাম করবেন। ১৯৮০ সালের দিকে ‘আহাট’ নামে গজলের অ্যালবাম বের করার সুযোগ পান তিনি। পরের বছর রেকর্ড করেন ‘মুকারার’। তার পরের বছর ‘তারান্নাম’, ‘ম্যাহফিল’সহ একাধিক অ্যালবাম দিয়ে নজর কাড়েন এই তরুণ। শ্রোতামহলে পৌঁছে যায় তাঁর জাদুকরি কণ্ঠ। তিনি সব শ্রেণির ভক্তদের হৃদয় জয় করতে থাকেন। অন্য রকম কণ্ঠের জন্য দ্রুত পরিচিতি বাড়তে থাকে তাঁর। পরিচিতি পেতে থাকেন গজলশিল্পী হিসেবে। ‘চান্দি জ্যায়সা রং’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারো সে মিলকার রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি পেয়ার করো’, ‘নিকলো না বেনাকাব’—পঙ্কজ উদাসের গাওয়া অসাধারণ সব গজল মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সে সময় গজলের গায়ক হিসেবে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের কনসার্টে তাঁর ডাক পড়তে থাকে।

গজলে তখন একনামে খ্যাতি পঙ্কজ উদাসের। কিন্তু প্রথম সিনেমায় গানের পর আর সিনেমার গান করা নিয়ে তাঁর মধ্যে তেমন আগ্রহ ছিল না। এর মধ্যে অন্যতম ব্যস্ততা ছিল একের পর এক কনসার্টে অংশ নেওয়া। টেলিভিশনে গজল গাইতে ছুটতেন তিনি।

হঠাৎ একদিন বলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক মহেশ ভাটের প্রডাকশন হাউস থেকে ডাক আসে। ‘নাম’ সিনেমায় গান করতে হবে পঙ্কজ উদাসকে। ১৯৮৬ সালে আবার সিনেমার গানে নাম লেখান। গানটি ছিল, ‘চিঠঠি আয়ি হ্যা, আয়ি হ্যা, চিঠঠি আয়ি হ্যায়…’। এই গান সব মহলে তুমুল আলোচিত হয়। এরপর সিনেমায় একের পর এক তাঁর ডাক পড়ে। পরবর্তীকালে তিনি অনেক সিনেমায় গান করেন। গানই তাঁকে ভারতীয় উপমহাদেশে শ্রোতাদের কাছে পঙ্কজ উদাস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

গান নিয়ে যেমন ব্যস্ত থাকতেন, তেমন ব্যক্তিজীবনে পরিবারকেও সময় দিতেন পঙ্কজ উদাস। শোনা যায় যে ব্যক্তিজীবনে ধূমপান ও অ্যালকোহল তাঁকে তেমন একটা ছুঁতে পারেনি। কিছুটা আড়ালে থাকতেই পছন্দ করতেন তিনি। তবে গানের পাশাপাশি ক্রিকেট ও গলফ খেলতে ভালোবাসতেন। এ সময় তিনি মেহেদী হাসান, বেগম আক্তার ও দ্য বিটলসের গান শুনতে পছন্দ করতেন। সময় পেলেই সিনেমা দেখতেন পঙ্কজ উদাস। তাঁর পছন্দের চলচ্চিত্র তারকাদের মধ্যে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, ঋষি কাপুর, হৃতিক রোশন। নারী অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে মাধুরী দীক্ষিত, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার অভিনয়ের প্রশংসা করতেন। সূত্র: ইউকিপিডিয়া, দ্য ইকোনমিস্ট টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে।

Facebook Comments Box

Posted ৫:০৫ পিএম | সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইমেইল শিডিউল
(44 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।