| বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 45 বার পঠিত
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত কমিটি আগামী দুই বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। সেটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই কর্মসূচি সফল করার জন্য সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করেছেন তারা। বলেছেন, সাংবাদিকদের কারণেই সোসাইটির দীর্ঘদিনের আটকে থাকা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়েছে। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এসব পরিকল্পনা সফল করার জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মপরিকল্পনায় বিভিন্ন দিকে সম্পৃক্ত করতে আপনারা সহযোগিতা করবেন। এ জন্য আপনাদের পরামর্শ ও মতামত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশ সোসাইটির ইমেজ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট দূর করে সোসাইটির হারানো ইমেজ যাতে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়, সে জন্য সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করছি। সাংবাদিকরা সোসাইটিকে অনেক সহায়তা করেছেন, এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। জ্যাকসন হাইটসে ৭৩ স্ট্রিটের একটি পার্টি হলে ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ওই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সম্পাদক ও সাংবাদিকরাও বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মপরিকল্পনায় নতুন নতুন বিষয় সম্পৃক্ত করার জন্য মতামত ব্যক্ত করেন ও পরামর্শ দেন।
সভায় সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ রব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ বক্তব্য দেন। তারা উপস্থিত সম্পাদক ও সাংবাদিকদের প্রতি এই অনুরোধ জানান। সভার শুরুতে বক্তব্য দেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ। বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ, ট্রাস্টি আজিমুর রহমান বুরহান, ওয়াসি চৌধুরী, সভাপতি মোহাম্মদ রব মিয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ সভাপতি ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকী, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ নওশেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সোসাইটির অন্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন আবুল কালাম ভূইয়া, মাইনুল উদ্দিন মাহবুব, ডা. শাহনাজ আলম লিপি, আবুল বাসার ভুইয়া, মোহাম্মদ আখতার বাবুল, শাহ মিজানুর রহমান, রিজু মোহাম্মদ, কামাল পাশা বাবুল, আলমগীর খান আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে শাহ জে চৌধুরী বাংলাদেশ সোসাইটির ফিউনারেল প্রকল্পের জন্য পাঁচ হাজার ডলারের চেক ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে তুলে দেন। সেই সঙ্গে সোসাইটির বিভিন্ন প্রকাশনা তার প্রকাশনী সংস্থা থেকে বিনা মূল্যে প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানের শেষে রুহুল আমিন সিদ্দিকীর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা হয়। নেতারা সাধারণ সম্পাদককে কেক খাইয়ে দেন।
সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী লিখিত শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। তিনি সংগঠনের কর্মপরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। শুরুতেই তিনি বাংলাদেশ সোসাইটির দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় শাহাদাতবরণকারী সাবেক সভাপতি মরহুম কামাল আহমেদ, সহ সভাপতি আব্দুল খালেক ও কার্যকরী সদস্য আজাদ বাকেরসহ বিভিন্ন সময় প্রয়াত সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এ ছাড়া মহামারি করোনার সময়ে প্রয়াত সকল প্রবাসীর প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও বাংলাদেশ সোসাইটির ডাকে সাড়া দিয়ে প্রবাসের সকল গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত হওয়ায় তিনি তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত সোসাইটির সুখে-দুঃখে সব সময় যেভাবে আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তার জন্য আপনাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে, গত চার বছর ধরে নির্বাচন-সংক্রান্ত জটিলতার সময় আপনাদের সহযোগিতা বাংলাদেশ সোসাইটি চিরকাল মনে রাখবে। নিঃসন্দেহে বিগত দিনগুলোতে নানা কারণে বাংলাদেশ সোসাইটি অনেকটা ইমেজ সংকটে পড়েছে, সেই ইমেজ সংকট কাটাতে আমরা আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
রুহুল আমিন সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির বর্তমান কার্যকরী পরিষদ দায়িত্ব¡ গ্রহণের পর থেকে আমরা নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি সোসাইটিকে তার অতীত গৌরবময় সময়ে ফিরিয়ে নিতে। এ ব্যাপারেও আপনাদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা কামনা করছি। নির্বাচন-সংক্রান্ত জটিলতা, মামলা মোকদ্দমায় পড়ে সোসাইটির অর্থনৈতিক অবস্থা এখন অনেক দুর্বল। সোসাইটির অন্যতম প্রধান ইনকাম সোর্স হলো নির্বাচন, সে নির্বাচন এখনো অনেক দূর। তাই বর্তমান কার্যকরী পরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে আমাদের মেয়াদকাল পর্যন্ত অন্তত এক হাজার আজীবন সদস্য বানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করব। এখনো যারা সোসাইটির আজীবন সদস্যপদ গ্রহণ করেননি, তাদের তা গ্রহণ করে সোসাইটিকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি উপস্থিত সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির ফিউনারেল প্রজেক্ট প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে সবচেয়ে কার্যকর। বিশেষ করে, করোনাকালীন সোসাইটি এই প্রজেক্টের মাধ্যমে হাজারো প্রবাসীর জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ে পাশে থেকে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করেছে। আমরা এই প্রকল্প আরও শক্তিশালী এবং যুগোপযোগী করতে চাই। এ জন্য নতুন করে প্রায় এক হাজার কবর কেনার চিন্তাভাবনা চলছে। একই সঙ্গে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও পর্যাপ্ত ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বিত্তশালী প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করেন।
রুহুল আমিন সিদ্দিকী বলেন, একটি সংগঠন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে চলতে প্রয়োজন শক্তিশালী ও যুগোপযোগী গঠনতন্ত্র। বাংলাদেশ সোসাইটির গঠনতন্ত্র প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কোনো ধরনের সংশোধন বা বর্তমান যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হয়নি। বিগত দিনে নানা সমস্যার মধ্যে সোসাইটি নিমজ্জিত হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ। তাই বর্তমান কার্যকরী পরিষদ ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, শিগগিরই একটি শক্তিশালী গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি গঠন করে বর্তমান গঠনতন্ত্রকে আগামী দিনের জন্য কার্যকর ও যুগোপযোগী করে গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারাকে সংশোধিত করা হবে। এ ব্যাপারে কারও কোনো মতামত থাকলে তা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সোসাইটির নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সেন্টার স্থাপন করার। এটা অনেক বড় প্রতিশ্রুতি, যা বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন। তবে এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ ব্যাপারটা যতটুকু সম্ভব এগিয়ে রাখা। ইতিমধ্যে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি, সহসভাপতি ও কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। আশা করি, অচিরেই এ ব্যাপারে ভালো খবর দিতে পারব, ইনশা আল্লাহ। সবার সহযোগিতা পেলে আশা করি এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সোসাইটির আয়োজনে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হবে। এতে সবার সহযোগিতা ও উপস্থিতি কামনা করেন তিনি। সোসাইটির আগামী দিনের সব কর্মকাণ্ডে তিনি সবার অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা চান। সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ রব মিয়া বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা সফল করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আমরা আসলে অনেক পরিকল্পনা করছি। সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। সিটি মেয়রের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কবর, ইমিগ্রেশন ও কনস্যুলেট সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যার বিষয়ে মানুষকে সহযোগিতা করতে। এ ছাড়া কারও যেকোনো সমস্যা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনি কবর কেনার প্রকল্প সফল করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আমরা আপাতত এক হাজার লাইফ মেম্বার করতে চাই। লাইফ মেম্বার হওয়ার ফির অর্থ দিয়ে কবর কেনার প্রকল্প সফল হতে পারে।
ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ নির্বাচন নিয়ে মামলার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং মামলার রায় সোসাইটির পক্ষে আনার পেছনে তার অবদানের কথা জানান। পাশাপাশি তিনি সোসাইটির প্রেসিডেন্ট থাকাকালে যেসব সফল উদ্যোগ নেন, তা-ও তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, মেয়র এরিক অ্যাডামস যখন মেয়র প্রার্থী হন, তখন তিনি আমার অফিসে এসেছিলেন। তার কাছে আমি সোসাইটির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছি। সোসাইটির সিনিয়র সেন্টার, ডে কেয়ার সেন্টার এবং বাংলাদেশ সেন্টার করার ব্যাপারে তার বর্তমানে সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। আমরা সিটির কাছ থেকে বাংলাদেশ সেন্টারের জন্য কম মূল্যে কিংবা ফ্রিতে একটি জায়গা নিতে পারি।
সবশেষে সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোসাইটির কর্মপরিকল্পনায় কী কী বিষয় সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন, তা তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সোসাইটির সাড়ে সাতাশ হাজার সদস্যের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া, মূলধারার সঙ্গে কাজ করার জন্য সমন্বিত প্রকল্প প্রণয়ন, জনহিতকর কাজ করার পরিকল্পনা নেওয়া, সব ধর্মের মানুষ যাতে সহায়তা পান তা নিশ্চিত করা, সোসাইটির ভোটারদের স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়া, মাসিক কিংবা বার্ষিক চাঁদার ব্যবস্থা রাখা, গঠনতন্ত্র সংশোধন, মূলধারায় আরো বেশি সম্পৃক্ত হওয়া, বাংলাদেশ প্যারেড করা, সোসাইটির পক্ষ থেকে বড় পরিসরে অনুষ্ঠান করা, বিগত নির্বাচন কমিশনের দুবারে নির্বাচন করতে না পারার কারণে যে অর্থ খরচ হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করা, সকল বিভাগীয়, জেলা, উপজেলাসহ অঞ্চলভিত্তিক যত সংগঠন আছে সব সংগঠনকে সোসাইটির ছাতার নিচে নিয়ে আসা, সব সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারিকে সোসাইটির সদস্যপদ দেওয়া, বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়ন করা, গঠনতন্ত্র সংশোধন করার জন্য সাবেক কমিশনারদের দিয়ে কমিটি গঠন করার প্রস্তাব প্রভৃতি।
Posted ১১:২৪ পিএম | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।