মঙ্গলবার ২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

চীনকে ঠেকাতেই অস্ত্রে সজ্জিত হচ্ছে জাপান

  |   সোমবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   32 বার পঠিত

চীনকে ঠেকাতেই অস্ত্রে সজ্জিত হচ্ছে জাপান

গত জুলাইয়ে আততায়ীর গুলিতে নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আমলে এ পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। আবের তত্ত্বাবধানেই জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে। আরও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জাপান সামরিক বাহিনীকে দেশের বাইরে মোতায়েন করার জন্য তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ‘শান্তি সংবিধান’-এর পুনঃ পর্যালোচনা করেছে। জাপানের সংবিধানের যে ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ জাপানকে ‘হুমকি দেওয়া ও বলপ্রয়োগ’ থেকে বিরত রাখে, শিনজো আবে সেই অনুচ্ছেদটি সংশোধন করারও চেষ্টা করেছিলেন। তবে জনপ্রিয় বিক্ষোভ তাঁর সেই চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা কিন্তু আবের মতো কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েননি। বরং জনমত জরিপ দেখা গেছে, বেশির ভাগ জাপানি নাগরিক সামরিক শক্তি গঠনকে সমর্থন করছেন। কিশিদা যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন তাঁকে ‘শান্তির পারাবত’ মনে করা হতো। কিন্তু এখন তিনি ঠিক উল্টো পথে হাঁটছেন। এ পরিবর্তনের কারণ খুবই স্পষ্ট।

চীনের উসকানিতে জাপানের প্রতিক্রিয়া এখনো পর্যন্ত সংযত অবস্থায় আছে। অন্তত এখন পর্যন্ত কোনো জাপানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেনকাকু দ্বীপ পরিদর্শন করেননি, পাছে এটি চীনকে ক্ষুব্ধ করে। তবে জাপানের টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং হাইপারসনিক অস্ত্রে নিজেকে সজ্জিত করা চীনের হাইব্রিড যুদ্ধকে প্রতিরোধ করার কার্যকর উপায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই অবস্থায় জাপানকে প্রকাশ্য যুদ্ধের ঝুঁকি এড়িয়ে অচলাবস্থা কাটাতে চীনের নিরঙ্কুশ চেষ্টাকে হতাশ করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

এই পরিবর্তনের কারণ খুবই স্পষ্ট। ২০১৩ সালে, অর্থাৎ যে বছর সি চিন পিং চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, সেই বছর জাপানের জাতীয়-নিরাপত্তা কৌশল চীনকে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আর জাপানের এখনকার হালনাগাদ কৌশল ঠিক তার বিপরীত। এখনকার কৌশলে চীন ‘জাপানের শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি অভূতপূর্ব এবং সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’। সি চিন পিংয়ের অধীনস্থ চীনের ক্রমবর্ধমান ও নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রসারণবাদ জাপানের শান্তিবাদী অবস্থানকে অগ্রহণীয় করে তুলেছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অভিযানের পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। রাশিয়ার এই যুদ্ধের ডামাডোল চীন তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর আশঙ্কাকে তীব্র করেছে; আর তাইওয়ান হলো কার্যত জাপানি দ্বীপপুঞ্জের একটি সম্প্রসারিত দ্বীপ রাষ্ট্র। গত আগস্টে তাইওয়ানের আশপাশের জলসীমায় সামরিক অনুশীলনের সময় চীন যে নয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল তার মধ্যে পাঁচটি জাপানের সংরক্ষিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে এসে পড়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই জাপান তাইওয়ানের নিরাপত্তাকে তার নিজের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের পেশিশক্তি প্রদর্শনের বিরোধিতায় শুধুমাত্র জাপান সক্রিয় হয়েছে, তা নয়; বরং অস্ট্রেলিয়া ও ভারত একই পথে নেমেছে।

জাপানের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর মধ্যেও জাপানের মতো সামরিকীকরণের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। যেমন, শান্তিবাদী দেশ জার্মানি তার প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২ শতাংশ বাড়ানোর (যেটি কিশিদা তাঁর দেশ জাপানে করবে বলে ঠিক করেছেন) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ইউরোপে সামরিক নেতৃত্বে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই সামরিক ব্যয় জিডিপির ২ শতাংশ স্তর অতিক্রম করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তার প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিমধ্যেই বিশাল সামরিক ব্যয় ৮ শতাংশ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগদান করছে।

যদিও জাপানের পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়া সংগত কারণেই আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি স্বীকৃত হয়েছে, তথাপি এটি চীনের সম্প্রসারণবাদী গতিকে আটকানোর জন্য যথেষ্ট হবে এমন সম্ভাবনা কম। সর্বোপরি, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেট থাকা সত্ত্বেও ভারত ২০২০ সাল থেকে বিতর্কিত হিমালয় সীমান্তে চীনের সঙ্গে একটি সামরিক অচলাবস্থায় আটকে আছে। ওই বছর পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) জোর করে বিস্ময়করভাবে ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়ে। সেখানে মাঝে মাঝেই ছোটখাটো সংঘর্ষ হচ্ছে। এমনকি গত মাসেও একটি সংঘাত হয়েছে।

রাশিয়া যেমন সরাসরি ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে, চীন সে ধরনের কৌশলে এগোয় না। চীন চোরা কৌশল পছন্দ করে। তারা চুরি, প্রতারণা এবং অতর্কিত হামলার মাধ্যমে অন্যান্য দেশের অঞ্চলগুলোতে ঢুকে পড়ে এবং একটু একটু ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন করে নিজের দখলে নিয়ে নেয়। পিএলএর তথাকথিত ‘তিন যুদ্ধ’ (যা মনস্তাত্ত্বিক, জনমত এবং সংঘাতের আইনি দিকগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে) চীনকে দক্ষিণ চীন সাগরে জনসন সাউথ রিফ দখল এবং স্কারবরো শোল দখল করার মতো কৌশলগত বিজয় নিশ্চিত করতে সক্ষম করেছে।

চীন সাধারণত সশস্ত্র সংঘাত এড়িয়েই অন্যের ভূখণ্ড চুরি করে; এমনকি এই দেশটি একতরফাভাবে দক্ষিণ চীন সাগরের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র এঁকে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সীমা দাবি করে। এই কায়দায় তারা ভুটানের সীমানা ঠেলে ভুটানের জমি দখল করেছে। বেইজিংয়ের সরকার উল্লেখযোগ্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন না হয়েই হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।

এই সমস্ত দায়মুক্তি সি চিন পিংকে এসব কাজে কেবল উৎসাহিতই করেছে। এখন তিনি জাপান-শাসিত সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জে তার দাবি জোরদার করার জন্য সামুদ্রিক এবং আকাশপথে অনুপ্রবেশ বাড়িয়েছেন এবং এই পূর্ব চীন সাগরে তাঁর দক্ষিণ চীন সাগরের কৌশলকে কাজে খাটাতে চাইছেন। এমনকি এটি সেনকাকুর জলসীমায় ‘পুলিশি নজরদারি’ করার চেষ্টা করছে।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৪৪ পিএম | সোমবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

test
(120 বার পঠিত)
Il modo migliore per best online casino
(63 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।