রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

পাকিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলে ‘প্রত্যাবর্তনের রাজা’

বিশ্ব ডেস্ক   |   বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   23 বার পঠিত

পাকিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলে ‘প্রত্যাবর্তনের রাজা’

পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ কোনো মেয়াদেই পুরো দায়িত্বকাল শেষ করতে পারেননি। এখন চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে তিনি। নওয়াজ দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী সেনাবাহিনীরও পছন্দের ব্যক্তি বলে জোর আলোচনা আছে। আজ বৃহস্পতিবার দেশটির জাতীয় পরিষদে ভোট গ্রহণ চলছে।

নির্বাচনের মাঠে অন্ধ ভক্তদের কাছে নওয়াজ ‘পাঞ্জাবের সিংহ’ হিসেবে পরিচিত। পাঞ্জাব প্রদেশে তাঁর প্রতি সমর্থনও ব্যাপক। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দল জয়ের মধ্য দিয়ে নওয়াজ আবারও ২৪ কোটি মানুষের পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটির দায়িত্ব নেবেন, এমনটাই আশা করছেন সমর্থকেরা।

২০১৮ সালে আল আজিজিয়া স্টিল মিলস দুর্নীতি মামলায় একটি বিশেষ আদালত নওয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালে তিনি লাহোর হাইকোর্টে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করলে ওই বছরই দেশ ছাড়েন নওয়াজ।

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর ২০১৮ সালের আগস্টে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) জোট সরকার যাত্রা শুরু করে। তখন আর নওয়াজের দেশে আসার উপায় ছিল না। পিটিআই সরকারের আমলে গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনি দেশে ফেরেননি।

তবে ২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা আস্থা ভোটে হেরে ইমরান ক্ষমতা হারান। পরে নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে বিরোধীরা জোট সরকার গঠন করে। গত ১৯ অক্টোবর নওয়াজ শরিফকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২১ অক্টোবর তিনি দেশে ফেরেন।

প্রায়ই গুচির লাল স্কার্ফ পরা শরিফের রাজনৈতিক ভাগ্যের উত্থান-পতন নির্ভর করেছে পাকিস্তানের শক্তিশালী ও আসল ‘কিংমেকার’ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ওপর।

পারিবারিক ইস্পাত ব্যবসা থেকে প্রচুর সম্পদের মালিক ৭৪ বছর বয়সী নওয়াজ। তিনি দেশটির অন্যতম একজন ধনী ব্যক্তি। কিন্তু সমর্থকদের কাছে তাঁর আচরণ ‘মাটির মানুষ’-এর মতো।

১৯৯০ সালে সেনাবাহিনীর আশীর্বাদে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু দুর্নীতির কারণে তিন বছর পর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্ব চলে যায়।

দ্বিতীয়বার ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান নওয়াজ। আবার ২০১৩ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৮ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আবারও পদচ্যুত হন।

ক্ষমতা ছেড়ে আবারও ক্ষমতা ফিরে আসার মধ্যকার সময়ে নওয়াজকে বছরের পর বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে অথবা কখনো স্বেচ্ছায়, কখনো বাধ্য হয়ে লন্ডন ও সৌদি আরবে নির্বাসনে কাটাতে হয়েছে। দেশে এই পরিবারের বিলাসবহুল অঢেল সম্পদ রয়েছে। সেই সম্পদই তাঁকে প্রতিবার নতুন উদ্যমে পাকিস্তানে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়।

নওয়াজের পারিবারিক ইস্পাত ব্যবসা জাতীয়করণ করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তিনি আবার সেই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান। রাজস্বের বিষয়ে রক্ষণশীল নওয়াজ অর্থনৈতিক উদারীকরণ ও মুক্তবাজার অর্থনীতির বিষয়ে বেশ উদার।

ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বেসরকারীকরণের তদারক করেছিলেন নওয়াজ। তবে সমালোচকদের দৃষ্টিতে, এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছিল।

৬০ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন নওয়াজ শরিফ। এই করিডর গত দশকে ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের মধ্যকার সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে।

সেনা অভ্যুত্থান

১৯৯৮ সালে পাকিস্তান যখন নিজেদের পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়, তখন নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী। এর কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতও একই ঘোষণা দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নওয়াজ বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অনুগত বিচারকদের নিয়োগ, নিজের স্বার্থে সংবিধান পরিবর্তন এবং তাঁর দলের ঘাঁটিগুলোকে শক্তিশালী করতে প্রাদেশিক নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে।

নওয়াজের দ্বিতীয় মেয়াদে দুই বছর স্থায়ী সরকারের পতন হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফকে কোণঠাসা করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তাঁকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল।
নওয়াজ শরিফ অল্পের জন্য মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে রেহাই পান। এরপরই তাঁকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

এক দশকের বেশি সময় পর ২০১৩ সালে নওয়াজ ক্ষমতায় ফিরে আসেন। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ভাইয়ের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। পাঞ্জাব পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ ও দলটির সবচেয়ে শক্তিশালী নির্বাচনী এলাকা।

২০১৬ সালের এপ্রিলে আবার নওয়াজের বিরুদ্ধে নতুন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসে তিনি ও তাঁর মেয়ে মরিয়মের নামে দুটি অফশোর কোম্পানি থাকার বিষয়টি প্রকাশের পর সেই চাপ সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

পরে পিএমএল-এন নেতা পৃথক দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হন এবং প্রধানমন্ত্রীর পদে অযোগ্য হয়ে পড়েন। এমনকি আজীবনের জন্য রাজনীতিতে তাঁকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তৃতীয়বারের মতো আবারও তিনি মেয়াদ পূর্ণ করতে ব্যর্থ হলেন।
সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নওয়াজ এক বছরের কম সময় কারাভোগ করার পর চিকিৎসার প্রয়োজনে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অনুমতি পান। এর পর থেকে তিনি সেখানেই ছিলেন।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খান ক্ষমতায় আসেন। মনে করা হয়, পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন তিনি। অবশ্য দুই পক্ষই এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু অবাক করে দিয়ে ইমরানের পেছন থেকে সামরিক বাহিনী মুখ ফিরিয়ে নিলে গত বছর শরিফের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে শুরু করে।

২০২২ সালের ১০ এপ্রিল পার্লামেন্টে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়। পিএমএল-এন নেতা ও নওয়াজের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হন। ছোট ভাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।

আইনি প্রক্রিয়া নমনীয় করার মাধ্যমে নওয়াজের দেশে ফেরার পথ মসৃণ করে তোলা হয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা দণ্ড একের পর এক বাতিল বা উল্টে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে ‘পাঞ্জাবের সিংহ’ আবার গর্জে ওঠার সুযোগ পেলেন।

Facebook Comments Box

Posted ১১:৩৫ এএম | বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।