বৃহস্পতিবার ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

না বলা কথা বললেন নায়ক মান্নার স্ত্রী

  |   বুধবার, ০৮ মার্চ ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   18 বার পঠিত

না বলা কথা বললেন নায়ক মান্নার স্ত্রী

২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ঢাকাই সিনেমার দাপুটে অভিনেতা আসলাম তালুকদার মান্না। মৃত্যুর ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না তার ভক্তরা। সেদিন নায়ক মান্নাকে হারিয়ে শোকে ‘পাথর’ ছিল পুরো পরিবার। যা আজও তার স্ত্রী শেলী মান্নাকে কাঁদিয়ে তোলে। কিংবদন্তি এই অভিনেতার মৃত্যুর পরদিন কী হয়েছিল? যা আজও অনেকের অজানা।

সেই অজানা কথাই প্রকাশ্যে আনলেন তার স্ত্রী শেলী মান্না। দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে তিনি তুলে ধরেন মান্নার মৃত্যুর পরবর্তী দিনগুলোর কথা। দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন’র পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

কিংবদন্তি অভিনেতা, প্রযোজক মান্নার অগণিত ভক্তকুল, সিনেমাপ্রেমী স্বজনের ও আমাদের দাবি ও ভালোবাসায় গঠিত হয়েছিল ‘‘মান্না ফাউন্ডেশন’’। ট্রাষ্টি বোর্ড, কার্যকরী কমিটিসহ প্রায় ৪০ সদস্য বিশিষ্ট মিডিয়া ও সমাজের গণ্যমান্য উপদেষ্টাসহ ২০০৯ সালের এপ্রিলে পহেলা বৈশাখ এফডিসিতে মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল “মান্না ফাউন্ডেশন”।

অতঃপর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ জুড়ে ২৪৫টি অঙ্গসংগঠন তৈরি হয়। আমরা ২০১৪ সাল পর্যন্ত এর কার্যক্রম চালিয়ে যাই। এরপর আমরা এই ফাউন্ডেশনের কার্যকরী কমিটি থেকে শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিভাবক চাষী নজরুল ইসলাম ভাইসহ ৭ জনকে চিরতরে হারিয়ে ফেলি। আমরা স্বজনবিহীন কিছুকাল শোকের সাগরে ডুবে রইলাম। এরপর দেশে আড়াই বছর রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমাদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।

আমার স্বামীর এভাবে আকস্মিক চলে যাওয়া ও তার পরবর্তীতে আমার কাছের অনেক স্বজনের চিরতরে হারিয়ে ফেলা- এমনিতেই চারপাশে শূন্যতা ও বিষণ্ণতা বিরাজমান ছিল। তাই তার কর্মকাণ্ডকে ঘিরে ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে সমর্পণ করি। তখন প্রচার ও প্রসারের সুযোগ এতটা ছিল না, উপরন্ত আমিও একটি প্রচার বিমুখ ছিলাম।

তারপর থেকে আমি আমার স্বামীর রেখে যাওয়া চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করি। কিন্তু এখানেও আমি এক বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের ফাঁদের বেড়াজালে পরে যাই। আত্মসম্মান বাঁচাতে বৈষয়িক অনেক বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে লাগলাম। আমাকে শূন্যতা, বিষণ্ণতা ও চরম পরিস্থিতি থেকে একবোরে টেনে তোলার মতো কোনো স্বজন এগিয়ে আসেনি। যেমনটা আমি একসময় অনেকের অনেক সমস্যায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলাম।

শুরু হয় জীবন যুদ্ধের সংগ্রাম। সেই সঙ্গে কাছের মানুষেরাও হয়ে যায় চির অচেনা। মান্নার জীবদ্দশায় সে মানুষের মানবিকতা ও আন্তরিকতা নিয়ে চরম সত্য কথাই বলে গিয়েছেন, যা এখন বুঝতে পারি। আমরা আজ ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে রীতিমতো সোচ্চার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তরিকতা, ধর্ম ও ঈমানের সঙ্গে কজনই বা পালন করে থাকি?

যেহেতু আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল মাধ্যমের সকল প্ল্যাটফর্ম চলমান রয়েছে, সেজন্যই আমাকে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নিয়েও কাজ করতে হয়। যারা ফেসবুকে নিজের উদ্যোগে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে এই পেজের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়েছেন। হাতে গোনা কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ছাড়া কজনই বা এর যথাযথ দায়িত্ব পালন করে থাকেন? নাকি ফেসবুক অযথা ভিত্তিহীন পোস্ট (চটকদার) গুলোই আমরা সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করে থাকি?

আমি জানি আমার মতো অনেক সংগ্রামী নারী একাকী জীবন যুদ্ধে কেউ জয়ী হয়েছেন কিংবা পরাজিত। আর তাই মান্না ফাউন্ডেশনের আর্তমানবতার সেবায় একটি বিষয় থাকবে, তাহলো স্বজন হারা ও স্বজনবিহীন সংগ্রামী নারীদের নিয়ে কাজ করা ও এক অপরের পাশে থাকা।

আজ পারিবারিক ও রক্তের বন্ধন ও স্বজন, সামাজিক বন্ধন বলতে অনেকাংশেই বিলুপ্তির পথে। আর এই বন্ধনকে আরও জোরদার করার লক্ষে সামাজিক ও পারিবারিক এই অবক্ষয়কে রোধ দরকার জন্যই মান্না ফাউন্ডেশনের নিবেদন থাকবে- এসো মানববন্ধন গড়ি। শিক্ষণীয় ও দৃষ্টান্তমূলক এপিসোডগুলো তৈরি হবে মানব কল্যাণের জন্য। পরিবেশিত হবে টেলিভিশন ও কৃতাঞ্জলির ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে। আশা করি, পারিবারিক-স্বজন ও সামাজিক বন্ধনের অবক্ষয়কে রোধ করার অনেক চেষ্টার ম্যাসেজ থাকবে এতে।

পৃথিবীতে মানুষ স্বজন ছাড়া বাঁচতে পারে না। তাই আমার চারপাশে স্বল্পসংখ্যক কিছু মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন স্বজন রয়েছেন, তাদের জন্য হয়তো বেঁচে থাকার আজও অনুপ্রাণিত হই। হয়তো রক্তের বন্ধন নেই, আছে নির্মল বিশ্বাস ও কর্মের বন্ধন, যা অটুট থাকবে অনন্তকাল। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও ডিজিটাল মাধ্যমের কার্যক্রম।

কৃতাঞ্জলির আর একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো “মান্না ফাউন্ডেশন”র কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তাই এবার আমরা ‘‘মান্না ফাউন্ডেশন’’কে নতুনরূপে পুনর্গঠিত করেছি। ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র নতুনরূপে বিন্যাস করা হয়েছে। মূল কেন্দ্র ঢাকায় নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিংবদন্তি অভিনেতা মান্নার স্মৃতির রক্ষার্থে ও তার কর্মকাণ্ডের প্রসারণ ঘটিয়ে মান্না ভক্তকুল ও আপামর জনগণের উদ্যোগে হাতে হাত রেখে নতুন করে সংগঠিত হয়ে দীর্ঘ এক মানববন্ধন গড়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াবো ইনশাআল্লাহ। সারা বাংলাদেশে যা ইতিপূর্বে ‘‘মান্না ফাউন্ডেশনের’’ অঙ্গসংগঠন গঠিত হয়েছিল, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, এবারের অঙ্গসংগঠন হবে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে। অভিনেতার মান্নার ভক্তকুল যারা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তারাও ইচ্ছে করলে আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সংগঠন করতে পারবেন।

সংগঠকদের হতে হবে দারুণভাবে, মানবিক ও উদারমনা। দেশপ্রেমী ও সংগঠনের কার্যক্রমকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। নারী পুরুষের সম্মিলিত ভূমিকা থাকবে এই সংগঠনের কর্মকাণ্ডে। প্রতিটি কেন্দ্রস্থল অফিস স্থাপনা ও নতুন কার্যকরী কমিটি নিয়ে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

আর এভাবেই আমাদের এই দীর্ঘ পথচলার পথে এক অপরের স্বজন হয়ে মানবিক ও আন্তরিক বন্ধনে কিংবদন্তি অভিনেতা মান্নার স্মরণে গড়ে তুলব এক কর্মের সু-উচ্চ মিনার। সবাইকে প্রাণময় শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।’

Facebook Comments Box

Posted ১২:১২ এএম | বুধবার, ০৮ মার্চ ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।