| শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 34 বার পঠিত
২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট দশ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। এসব শিক্ষার্থী এখন অনার্স (সম্মান) ও সমস্তরে ভর্তি হবে। আর স্নাতক, ডিগ্রি পাস কোর্স ও অন্যান্য স্তরে আসন রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ। সেই হিসাবে সারাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত চার লাখ আসন ফাঁকা থাকতে পারে।
কোভিড মহামারীতে বিশেষ মূল্যায়নে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস দেয়া হয়। এসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হয় ২০২১ সালে। ২০২১ সালের এই স্তরের পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী কমেছে। ওই বছর এইচএসসি ও সমমানে ১৩ লাখ ছয় হাজার ৬৮১ জন উত্তীর্ণ হয়। এসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হয় ২০২২ সালে।
ইউজিসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে ৯ লাখের মতো। যা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর প্রায় ৬৫ শতাংশ। আর এইচএসসি পাসের পর অন্তত ৩০ শতাংশ কর্মজীবনে সম্পৃক্ত হয়ে যায় বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে। তাছাড়া ২০২২ সালেও বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজারের বেশি আসন ফাঁকা ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, এবার সারাদেশে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি এবং বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবমিলিয়ে স্নাতক, ডিগ্রি পাস কোর্স ও অন্যান্য স্তরে প্রায় ১৪ লাখ ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে।
জানতে চাইলে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’র (বিডিইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নুর সংবাদকে বলেন, ‘সারাদেশে অনার্সে আসন আছে আট লাখ। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজে ডিগ্রি পাস কোর্সে আসন আছে পাঁচ লাখ। এ কারণে সবাই যেমন অনার্সে ভর্তির সুযোগ পাবে না; তেমনি সবার অনার্স পড়ার প্রয়োজনও নেই; অনার্সে চার-পাঁচ বছর সময় নষ্ট করারও দরকার নেই।’
সব শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি হতে পারবে জানিয়ে তিনি বলে, ‘তবে আমরা চাই গতানুগতিক পড়াশোনা না করে কারিগরি শিক্ষায় ভবিষ্যৎ গড়ুক। এতে চতুর্থ বিল্পবে সহায়ক হবে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘আমাদের এখন বেশি প্রয়োজন স্কিল্ড বেইজড এডুকেশন (দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা)। এতে নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা লাভ করে শিক্ষার্থীরা সরাসরি কর্মক্ষেত্রে চলে যেতে পারে। সারাবিশ্বেই স্কিল্ড বেইজড শিক্ষার চাহিদা বাড়ছে।’
সারাদেশে মোট আসনের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ‘ভালোমানের’ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন রয়েছে আড়াই লাখের মতো। আর এবার এইচএসসি ও সমমানে সর্বোচ্চ স্কোর ‘জিপিএ-৫’ পেয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। যদিও ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন।
মোট উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবার কমে আসায় ভর্তিতে প্রতিযোগিতা কিছুটা কম হতে পারে বলে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নিয়ে গত বছর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজারের মতো আসন খালি ছিল বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে। দেশের ২০টি সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছয়টি কৃষিপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চশিক্ষায় আসন বৃদ্ধি এবং নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, সুযোগ-সুবিধা ও পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো বাড়ানো, পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ এবং মেয়েদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান সংবাদকে বলেন, ‘আমার মনে হয় না উচ্চশিক্ষায় কোন আসন সংকট আছে। তবে আমাদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর নজর দেয়া প্রয়োজন। সারাবিশ্বেই এই শিক্ষার কদর বাড়ছে। আমি দেখেছি, বিএ-এমএ পাস করে নিউইয়র্কে গিয়ে ট্যাক্সিক্যাব চালাচ্ছে।’
বিশ্বের কোথাও সবার উচ্চ ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না মন্তব্য করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘সবার তো বুয়েট, ঢাবি-চবিতে পড়ার প্রয়োজন নেই। আর সবার মেধা ও ফলাফলও সমান হয় না।’
প্রায় দেড় কোটি মানুষ দেশের বাইরে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবও সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে স্কিল্ড (দক্ষ) জনবল নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল শিক্ষায় দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে পারলে বিদেশে শ্রমবাজার আরও বাড়বে।’
ইউজিসি সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, এবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে আসন সয়কট হয়নি, এবারও আসন সংকট নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায়ে ১৩ লাখের বেশি আসন আছে।
পাবলিক পরীক্ষায় ২০০৩ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়। এরপর ২০২১ সালে এইচএসসি ও সমমানে সর্বোচ্চ এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) পায়। ২০২২ সালের এই পরীক্ষায় এবার এই সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার কমেছে। গত বছরও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক হাজারের মতো আসন খালি ছিল। ফলে এবার প্রতিযোগিতা এমনিতেই কিছুটা কম হবে।
শিক্ষাবিদরা বলেছেন, জিপিএ-৫ এর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন সেভাবে বাড়ছে না। এ কারণে পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ‘অপেক্ষাকৃত ভালোমানের’ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চশিক্ষায় অনেক আসন রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষাবিদরা বলেন, সরকার প্রতি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু জনবল ও অবকাঠামোসহ নানা সংকটের কারণে স্থানীয়রা ছাড়া কেউ জেলা পর্যায়ে ভর্তি হতে চায় না। আবার অনেকে ভালো ফল করেও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে বাধ্য হয়ে ভর্তি হয়।
Posted ১১:২৭ পিএম | শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।