| মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 93 বার পঠিত
রাজনীতির মাঠে মুখোমুখি অবস্থানে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দল দুটির নেতারা নিয়মিত পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করে বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে সোমবার এক অনুষ্ঠানে দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে দেখা গেল ভিন্ন চেহারায়। জাতীয় পার্টির এক নেতাও ছিলেন তাঁদের সঙ্গে। পাশাপাশি বসে আলাপচারিতার পাশাপাশি দলমত–নির্বিশেষ দেশের স্বার্থে কাজ করার কথা বললেন তাঁরা।
এই তিন নেতা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। রাজধানীর গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁরা। আলোচক হিসেবে তাঁরা এসেছিলেন ইউএসএআইডির অর্থায়নে স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) প্রজেক্টের আওতায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সমন্বয়ে আয়োজিত প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। প্রকল্পের আওতায় এই তিন রাজনৈতিক দলের ২৪ জন নেতাকে দুই পর্বে মোট ছয় দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই ছয় দিন তাঁরা একই হোটেলে একসঙ্গে ছিলেন। তাঁদের বোঝানো হয়েছে গণতন্ত্রকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, দল ও দলের বাইরের দ্বন্দ্ব কীভাবে নিরসন করা যায়, সব মতের মানুষকে নিয়ে কীভাবে দেশের উন্নয়ন করা যায়।
দেশের বর্তমান বাস্তবতায় ভিন্নমতের নেতাদের একসঙ্গে রাখাকেও বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন অনুষ্ঠানের আলোচকেরা। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফর উল্যাহ বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাঁরা একসঙ্গেই ছিলেন কি না, নিজেদের মধ্যে মারামারি হয়েছিল কি না। এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে তিন বড় দলের নেতাদের এক করতে পারাটাও বড় অর্জন। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রশিক্ষণ এমন কিছু বিষয় শিখতে সাহায্য করে, যা দলের ভেতরে থেকে শেখা যায় না। কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান।
বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার শক্তি কতটা বেশি, তার প্রমাণ প্রতিনিয়তই পান। আয়োজকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের একসঙ্গে করে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছেন—এটা কম কথা নয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন, কিন্তু তাঁরা ওই সময় এমন সরকার চান, যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পালনে হস্তক্ষেপ করবে না। দলীয় সরকারের অধীনে এটি সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন।
এই দুজনের আগে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বক্তব্যের শুরুতে নজরুল ইসলাম খান ও কাজী জাফর উল্যাহর প্রশংসা করেন, যা সচরাচর দেখা যায় না। দেশের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ফ্রান্সের নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় না। আর বাংলাদেশে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে যায়। দেশের নির্বাচনপ্রক্রিয়া অনেক পুরোনো এবং এই পদ্ধতি পরিবর্তন করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি সম্পর্কে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আমরা নিজেদের লোকজনকে বিশ্বাস করতে পারি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যারা আসবে, তারা কি বিশ্বাসযোগ্য?’ আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত হওয়ায় সেটি সংবিধানবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠান চলাকালে এই তিন আলোচককে নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলাপচারিতা করতে দেখা যায়। অনুষ্ঠানে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অফিস ডিরেক্টর মেধা উইগিরি, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এসপিএল প্রকল্পের চিফ অব পার্টি ডানা এল ওল্ডস, জ্যেষ্ঠ পরিচালক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শেষে এসপিএল প্রকল্পের আওতায় ‘সিনিয়র লিডার্স ফেলোশিপ প্রোগ্রাম’ সফলভাবে সম্পন্ন করায় সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সনদ পাওয়া ব্যক্তিরা সপ্তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। তাঁদের নিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
Posted ১:১৪ এএম | মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।