| শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 18 বার পঠিত
ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই দিন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামছে। আজ শনিবার দুই দল দেশের প্রায় সব ইউনিয়নে পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। এতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এবার তৃণমূল পর্যায়ের কর্মসূচিতেও মুখোমুখি হচ্ছেন।
দুই দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে রাজপথ দখলে রাখতে চান তাঁরা। সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি মাঠে নামলে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে অবস্থান নেবে আওয়ামী লীগও।
প্রধান দুই দলের এমন কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতিতে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে দুই প্রতিপক্ষ মাঠে থাকলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এর আগে গত বছরের মাঝামাঝি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে তৃণমূল পর্যায়ের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এতে প্রাণহানিও ঘটে।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা করবে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা ও জেলার অধীন ইউনিয়নের কর্মসূচিতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আওয়ামী লীগও ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করবে। এসব কর্মসূচিতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন।
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের পাল্টা হিসেবে গত বছরের নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগও একই দিন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন থেকে ক্ষমতাসীনরা রাজপথে অবস্থান নেওয়া শুরু করে। তখন থেকে পাল্টা কর্মসূচি শুরু হয়।
সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগকে পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাঁরা পাল্টা কর্মসূচি পালন করছেন না। নির্বাচন পর্যন্ত তাঁরা রাজপথে থাকবেন।
এদিকে বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে তাদের দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমাদের জেলা প্রতিনিধিরা জানান, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে ইউনিয়ন পর্যায়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই দলের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে গত কয়েক দিনে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সিরাজগঞ্জের তিন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ১১ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।
নিজ এলাকায় দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা
আজকের কর্মসূচিতে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ এলাকায় গেছেন। দুই দলের এসব নেতার উপস্থিতিতে কর্মসূচি পালন করবেন তৃণমূল নেতারা।
দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, বিএনপির কর্মসূচির দিকে তাঁদের সতর্ক নজর থাকবে। নাশকতা চালানোর চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা উসকানি না দিলে বা সহিংসতার চেষ্টা না করলে কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ হবে না।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, দলীয় সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলার পাশাপাশি নিজেদের নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজও এগিয়ে নিতে চাইছে আওয়ামী লীগ।
দেশের আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা ইউনিয়ন পর্যায়ের শান্তি সমাবেশ পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন।
রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নাশকতা করার চেষ্টা না করলে তৃণমূলে কোনো সংঘর্ষ হবে না। আমরা কাউকে আঘাত করব না, কেউ আঘাত করার চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করব।’
ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা রাজপথে থাকলে বিএনপি-জামায়াত নাশকতা চালানোর সুযোগ পায় না। তাদের অতীতের নাশকতার ইতিহাস আছে বলেই আমরা সতর্ক থাকছি। ফাঁকা মাঠ পেলেই তারা দেশে একটা অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। সে কারণেই আমাদের শান্তি সমাবেশ।’
ময়মনসিংহ বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি ও রেমন্ড আরেং অংশ নেবেন।
গতকাল নিজের নির্বাচনী এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ সতর্ক অবস্থানে থাকবেন।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দপ্তর বিভাগ থেকে জেলা নেতাদের কাছে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, ইউনিয়নের পদযাত্রায় স্থানীয় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির দাবি গ্রাম-ইউনিয়নে ছড়িয়ে দিতে পদযাত্রা করা হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন নতুন মাত্রা পাবে।’
গত সোমবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা বলেন, দেশে এক ধরনের অর্থনৈতিক সংকট আছে। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ তাদের ক্ষোভ থেকে বিএনপির কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, আন্দোলন চাঙ্গা করতে মূলত ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি।
নির্বাচনী এলাকা সেনবাগ থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক দিন ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। আজকের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করবেন তাঁরা।
ইউনিয়ন পর্যায়ের এক দিন পর কাল রবিবার বিএনপি ঢাকায় পদযাত্রা করবে। তবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে আজ রাজধানীতে পদযাত্রা করবে।
গণতন্ত্র মঞ্চ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। গণতন্ত্র মঞ্চের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এলডিপি বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর ভাটারার বাঁশতলা ক্যামব্রিয়ান কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে বাড্ডা লিংক রোড মোড়ে গিয়ে পদযাত্রা শেষ করবে।
১২ দলীয় জোট বিকেল ৩টায় বিজয়নগর থেকে পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা করবে বলে জোটের প্রধান জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার জানান।
আমরা সংঘাত চাই না : ওবায়দুল কাদের : গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথ সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমরা সংঘাত চাই না, প্রতিযোগিতা চাই।…বিএনপি এক বছর ধরে প্রকাশ্যে মাঠে আসছে, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে, তারা অনেক বড় বড় কথা বলেছে। আমরা সন্ত্রাসের আশঙ্কায় শান্তি সমাবেশ করছি। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে, আমরা শান্তি সমাবেশ করব।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি বলছে পাল্টাপাল্টি, আমরা তো পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ করছি না। তারা করছে আন্দোলনের পদযাত্রা, আন্দোলনের সমাবেশ। আমরা যেটা করছি, সেটা হচ্ছে শান্তির সমাবেশ।’
পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না : খসরু : পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হয়ে গেছে। তাদের ভূমিকা দেখলে মনে হয় আওয়ামী লীগ সরকারে নেই, বিরোধী দলে আছে। বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগের এই পাল্টা কর্মসূচি থেকে বোঝা যায়, তাদের রাজনৈতিক দৈন্য এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়েও জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারছে না।
আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বাধা দেওয়া চলবে না। লক্ষ জনতা রাস্তায় নেমে প্রমাণ করেছে গুলি করে, হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, গায়েবি মামলা দিয়ে গণজোয়ার বন্ধ করা যাবে না।
নন্দীগ্রামে আ. লীগের দুই নেতাকে মারধর, বিএনপির দুই কর্মী আটক : নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার নন্দীগ্রামে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে মাইক ভাড়া করতে গেলে দুই নেতাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপির দুই কর্মীকে চাকুসহ আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল সন্ধ্যায় নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের ধুন্দার বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, শনিবারের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুড়ইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কালিপদ প্রামাণিক স্থানীয় ধুন্দার বাজারে মাইক ভাড়া করছিলেন। এ সময় বিএনপিকর্মী আমজাদ হোসেন তাঁকে মারধর করেন। নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুকুল মিয়া প্রতিবাদ করলে তাঁকেও আমজাদ ও তাঁর সহযোগীরা লাঠিপেটা করেন। এতে তিনি আহত হন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিএনপিকর্মী আমজাদ পালিয়ে যান। পরে পুলিশ বিএনপিকর্মী মেহের আলী ও রুবেলকে একটি চাকুসহ আটক করে। নন্দীগ্রাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
Posted ১১:৫৫ পিএম | শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।