মঙ্গলবার ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

ঢাকা ঢেকে যাচ্ছে- ধুলায়

  |   বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   24 বার পঠিত

ঢাকা ঢেকে যাচ্ছে- ধুলায়

রাজধানীর ধানমণ্ডির সাতরাস্তা থেকে বিজিবি গেট পর্যন্ত সড়কে চলছে বিভাজক বা ডিভাইডার মেরামতের কাজ। ডিভাইডারের মাঝখান থেকে সরানো মাটি ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার দুই পাশে। সেই মাটির কিছু অংশ এখন ধুলায় পরিণত হয়েছে। যানবাহন চলাচলের সময় একটু জোরে বাতাস লাগলেই সেই ধুলা উড়ে ঘোলাটে করে দেয় চারপাশ। এতে পথচারী, যাত্রী ও চালকদের যেমন দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, তেমনি নাক-মুখ দিয়ে ধুলা গিয়ে এমন অবস্থা তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আতাউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য ভোগান্তি হবে, ঠিক আছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের তৎপরতার অভাবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। কাজের অগ্রগতি যেমন ধীর, তেমনি ধুলাবালি কমানোর জন্য সিটি করপোরেশনকে পানি ছিটাতেও দেখছি না।

শুধু ধানমণ্ডি এলাকা নয়, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজধানীর ১৫টি এলাকা এখন ধুলার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এই ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে ঢাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে শ্যামলী থেকে পঙ্গু হাসপাতাল হয়ে আগারগাঁও, ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী থেকে শনির আখড়া, ধানমণ্ডি থেকে বিডিআর গেট, আজিমপুর থেকে পিলখানা, বঙ্গবাজার থেকে ফুলবাড়িয়া, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বসিলা, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তা থেকে ওই এলাকার বাসস্ট্যান্ড, ফার্মগেট থেকে হলি ক্রস ও বিজ্ঞান কলেজ এলাকা এবং তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও রেলগেট। অন্যদিকে এয়ারপোর্ট থেকে টঙ্গী, ভাটারা থানা থেকে ১০০ ফিট রাস্তা হয়ে বালু নদ পর্যন্ত এলাকার ধুলাবালিতে জনজীবন অতিষ্ঠ।

বেড়িবাঁধ এলাকায় ধুলার আধিক্য দেখা গেছে। ওই এলাকার গাবতলী থেকে সদরঘাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তার বিভিন্ন এলাকা ধুলাবালিতে ভরা। এর মধ্যে ঢাকা উদ্যান থেকে মোহাম্মদপুর চৌরাস্তা, রায়েরবাজার থেকে হাজারীবাগ, শহীদনগরের বালুর ঘাট  থেকে সোয়ারীঘাট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়ক রয়েছে। মূলত যেসব এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান, সেসব এলাকায় ধুলাবালি বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবকাঠামো ঢেকে কার্যক্রম পরিচালনা করা বা নির্দিষ্ট স্থানে বালু ও মাটি ফেলার নির্দেশনা থাকলেও সেগুলো মেনে চলা হচ্ছে না। আবার বড় ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের পর নিয়মিত পানি ছিটানোর নির্দেশনা থাকলেও তা যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সময় ধুলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে শর্ত দিলেও তারা তা মানতে চায় না। সড়কে পানি ছিটানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। মাঝেমধ্যে ওয়াসার কাছে বলে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করে থাকি। ধানমণ্ডি সাতরাস্তার সড়কটি আমিও ব্যবহার করি। সত্যিই প্রচণ্ড ধুলাবালি, নিজেই ভুক্তভোগী।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান) মো. জিয়াউল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধুলাসহ অনিয়ন্ত্রিত অবকাঠামো উন্নয়ন, কলকারখানা ও যানবাহনের কারণে বায়ুদূষণ বাড়ছে। বায়ুদূষণ বিধিমালা কার্যকর হয়েছে। এ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে। আমরা দ্রুত এ কমিটির মাধ্যমে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে নির্দেশনা ও করণীয় ঠিক করব। এখন নির্মাণকাজ ঢেকে রাখা, নির্মাণ এলাকায় নিয়মিত পানি দেওয়া গেলে ধুলার প্রভাব কমানো সম্ভব।’

রাজধানীর ১০০ ফিট সড়কেও ধুলাবালির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী, যাত্রী ও আশপাশের মানুষকে। বারিধারা এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনের অংশ থেকে বালু নদ পর্যন্ত ৬.৭১ কিলোমিটার ইন্টারসেকশন সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদ পর্যন্ত সড়ক ও সেতুগুলো প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদ পর্যন্ত সড়কটির প্রশস্ত করার কাজ এগিয়ে চলেছে। মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করার কাজ চলমান থাকায় সড়কে তৈরি হচ্ছে ধুলা। এই পথের বালু নদের ওপর নির্মিত হচ্ছে ছয় লেনের সেতুও। বাইপাস এই সড়কটি যুক্ত হচ্ছে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে, আরেকটি অংশ যুক্ত হচ্ছে রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত গাজী সেতুর সঙ্গে।

ভাটারা এলাকার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, দোকানের ধুলাবালি পরিষ্কার করতে করতেই দিন শেষ। কয়েক মাস ধরে সর্দি-কাশি তো লেগেই আছে। রাস্তায় যদি ঠিকমতো পানি ছিটানো হতো, তাহলে এত ধুলা উড়ত না। মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালি বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে।  এতে রাজধানীর মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

এ বিষয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম কালের কণ্ঠকে বলেন, ধুলাবালি রাজধানীবাসীর জন্য নীরব ঘাতকে পরিণত হচ্ছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধূলিকণা সহজেই ফুসফুসে ঢুকে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। বায়ুদূষণ ও ধুলাবালির কারণে চুলকানি, অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়ছে। শিশুরা নতুন ধরনের অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং যাদের ডাস্ট অ্যালার্জি আছে, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৫৬ এএম | বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(165 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।