| বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 126 বার পঠিত
বিশ্বজুড়ে ক্ষমতার বলয় বাড়াতে তৎপর রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিষয়টি আরো বেশি আলোচনায় এসেছে। সাত মাস ধরে চলতে থাকা যুদ্ধের উত্তাপ রাশিয়া-ইউক্রেনের সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের খাদ্য ও জ্বালানির অন্যতম উৎস ওই দুই দেশ থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছে বিশ্ব। এ অবস্থার জন্য অবশ্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোকে দোষারোপ করেন। তার ভাষ্য, পশ্চিমাদের নিষেজ্ঞার কারণেই ইউরোপ যেমন জ্বালানি সংকটে পড়েছে তেমনি গরিব দেশগুলো পড়েছে খাদ্য সংকটে। এই পরিস্থিতিতে একটি ‘রুশ বিশ্ব’র ধারণার ভিত্তিতে নতুন এক পররাষ্ট্রনীতি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন পুতিন। নীতিতে স্ল্যাভিক দেশগুলো, চীন এবং ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার কথা বলা হয়েছে।
২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের পর মস্কো থেকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া আবখাজিয়া ও ওসেটিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করাসহ পূর্ব ইউক্রেনে দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে পুতিনের নতুন নীতিতে। এতে বলা হয়েছে, রুশ বিশ্বের ঐতিহ্য ও আদর্শ এগিয়ে নেওয়া এবং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করবে রাশিয়া। ক্রেমলিন এই নীতিকে ‘মানবহিতৈষী নীতি’ বলে উল্লেখ করেছে।
বিবিসি বলছে, এই রুশ বিশ্বের ধারণা আদতে এক রক্ষণশীল মতাদর্শ। রক্ষণশীল মতাদর্শীরা এই ধারণাকে রুশভাষীদের সমর্থন দিতে অন্য দেশে হস্তক্ষেপ করার যৌক্তিকতা নিরূপণে ব্যবহার করে থাকেন।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ইস্টার্ন ব্লকের বেশ কিছু দেশ ইউএসএসআর থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু সেসব দেশের প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ জাতিগত রুশ রাশিয়ার বাইরেই থেকে গেছে। পুতিন রুশভাষী ওই নাগরিকদের ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার হিসেবেই দেখেন। বাল্টিক থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলো মস্কোর প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকাটাকেও তিনি বৈধ বলে মনে করেন।
বিবিসির ভাষ্য, রাশিয়া তাদের নতুন পররাষ্ট্রনীতি পরিকল্পনাকে মানবহিতৈষী হিসেবে একটি সদয় ও নমনীয় ক্ষমতা কৌশল হিসেবে তুলে ধরলেও এতে মূলত রুশ রাজনীতি ও ধর্ম ঘিরে সরকারি নীতির ধারণাগুলোই ঠাঁই পেয়েছে। পুতিনের এই পররাষ্ট্রনীতিতে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়া ফেডারেশন বিদেশে বাস করা রুশ নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সমর্থন দেবে। তাদের স্বার্থ ও রুশ সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
তাছাড়া, প্রবাসী রুশ নাগরিকদের সঙ্গে এই সম্পর্ক আন্তর্জাতিক মঞ্চে বহু-মেরু বিশ্ব গড়ে তুলতে সংগ্রাম করে যাওয়া একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে রাশিয়ার ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করবে।
এদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে ‘জ্বর’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার জন্য ইউরোপীয়দের জীবনযাত্রার মান বলি দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দরিদ্র দেশগুলো খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে না।
ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় পশ্চিমা দেশগুলো। তার জেরে ইউরোপের দেশগুলোয় জ্বালানির মূল্য এখন আকাশছোঁয়া। পুতিন বলেন, পশ্চিমারা তাদের আচরণ অন্য দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। জনগণের চোখের সামনেই ডলার, ইউরো ও পাউন্ডের ওপর থেকে আস্থা সরে যাচ্ছে। রাশিয়া আরও শক্তিশালী সার্বভৌমত্ব নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। আমি নিশ্চিত আমরা কিছুই হারাইনি এবং কিছুই হারাব না।
Posted ৫:২৬ পিএম | বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।