| শুক্রবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 123 বার পঠিত
সিগার বা চুরুটের ভেতরে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে হত্যার পরিকল্পনার কথা মোটামুটি সবারই জানা। কিন্তু তাকে হত্যা করার জন্যে বাকি ৬৩৭টি পরিকল্পনা কিভাবে করা হয়েছিলো?
বিচিত্র রকমের পরিকল্পনা করে ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো।
তার মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক শামুক ঝিনুকের খোলসের ভেতরে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করা, সাঁতারের পোশাকে বিষ মাখানো, মুখে লাগানোর ক্রিমে বিষাক্ত বড়ি লুকিয়ে রাখা… ইত্যাদি ইত্যাদি।
ক্যাস্ত্রোরই সাবেক এক দেহরক্ষীর লেখা বই ও টিভি তথ্যচিত্র থেকে এসব পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নির্বাসিত কিউবানরা অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাকে হত্যার এরকম পরিকল্পনা করেছিলো।
কিন্তু তার সবকটিকেই ব্যর্থ করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দশজন প্রেসিডেন্টের শাসনকাল পার করে বেঁচে ছিলেন তিনি।
কিউবার বিপ্লবী এই নেতা একবার নিজেই মন্তব্য করেছিলেন: ” আততায়ীদের হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার ওপর যদি অলিম্পিকে কোন প্রতিযোগিতা বা ইভেন্ট থাকতো, তাহলে আমি স্বর্ণ পদক পেতাম।”
তবে এসব পরিকল্পনার সবকটিই কিন্তু শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা হয়নি। বেশিরভাগই শুধু পরিকল্পনার মধ্যেই সীমিত ছিলো, বলেছেন সাবেক দেহরক্ষী ফাবিয়ান এসকেলান্তে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিল ক্লিনটন যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিলো যাতে দেখা যায় যে সিআইএর কর্মকর্তারা ক্যাস্ত্রোকে হত্যার উদ্দেশ্যে এক পর্যায়ে শামুক ঝিনুকের মতো ক্যারিবীয় সামুদ্রিক প্রাণীর খোলসের ওপরেও গবেষণা করতে শুরু করেছিলো।
তাদের পরিকল্পনা ছিলো, বৈচিত্র্যময় এরকম কিছু খোলসের ভেতরে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দেওয়া। কারণ ফিদেল ক্যাস্ত্রো একজন ডুবুরী ছিলেন। ডুব দিয়ে তিনি যখন ঝিনুকের এই খোলসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এটি হাতে নেবেন তখনই বিস্ফোরণ ঘটানো হবে – এরকমই পরিকল্পনা করা হয়েছিলো।
এরকম আরো একটি পরিকল্পনা ছিলো- এমন একটি সাঁতারের পোশাক তৈরি করা যাতে ফাঙ্গাস মাখিয়ে দেওয়া হবে। সেই ফাঙ্গাসে সংক্রামিত হয়ে ক্যাস্ত্রোর শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতেই তার মৃত্যু ঘটবে।
পরে অবশ্য এই দুটো পরিকল্পনাই বাদ দেওয়া হয়েছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রে সেনেট চার্চ কমিশন ১৯৭৫ সালে এরকম আটটি পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছিলো। তার অনেকগুলো কল্পনাকেও হার মানিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো একটি পরিকল্পনা ছিলো ফিদেল ক্যাস্ত্রোর হাতে একটি বিষাক্ত কলম তুলে দেওয়া।
বলা হয় যে সিআইএর একজন অফিসার কিউবার একজন গোয়েন্দার কাছে সূচ বসানো এরকম একটি কলম প্রায় তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কিউবান ওই গোয়েন্দা সেটি নিতে চাননি। কারণ তিনি এর চেয়েও সুন্দর একটি কলম চেয়েছিলেন।
ক্যাস্ত্রোকে হত্যা করার জন্যে তার প্রাক্তন একজন প্রেমিকা মারিতা লোরেঞ্জকেও ভাড়া করা হয়েছিলো।
তাকে দেওয়া হয়েছিলো বিষাক্ত বড়ি যা তিনি ক্যাস্ত্রোর পানীয়র গ্লাসে মিশিয়ে দেবেন বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিলো।
কিন্তু ফিদেল ক্যাস্ত্রো এই পরিকল্পনার কথা আগেই জেনে ফেলেন। এবং শোনা যায় সাবেক ওই প্রেমিকার হাতে তিনি তার অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন তাকে হত্যা করার জন্যে।
মিস লোরেঞ্জ নিউ ইয়র্কের একটি সংবাদপত্রকে বলেছিলেন, “ক্যাস্ত্রো তখন আমাকে বলেন, তুমি আমাকে মারতে পারবে না। আমাকে কেউ মারতে পারবে না।”
“তারপর একরকম হাসতে হাসতে মুখে চুরুট চিবুতে লাগলেন তিনি। তখন আমি দমে যাই। কারণ তিনি আমার ব্যাপারে খুবই নিশ্চিত ছিলেন। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আমরা সেক্স করি।”
ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে হত্যার সবশেষ যে পরিকল্পনার কথা জানা যায় সেটি ছিলো ২০০০ সালে।
এই পরিকল্পনাটি ছিলো পানামায় ক্যাস্ত্রো যে মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে ভাষণ দেওয়ার কথা তার নিচে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক রেখে দেওয়া।
ফিদেল ক্যাস্ত্রোর নিরাপত্তা রক্ষীরা সেই পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দেয়।
এই পরিকল্পনায় জড়িত থাকার দায়ে সিআইএর গুপ্তচরসহ চারজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। পরে অবশ্য তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
শুধু হত্যা করা নয় তাকে অপদস্থ করারও কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছিলো।
দাড়ির জন্যে বিখ্যাত ছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। পরিকল্পনা ছিলো তার এই দাড়ি ফেলে দিয়ে তাকে হেয় করারও।
এরকম একটি পরিকল্পনা ছিলো- বিদেশ সফরে গেলে তার জুতায় থালিয়াম লবণ ছিটিয়ে দেওয়া এই আশায় যে এর ফলে তার বিখ্যাত সেই দাড়ি মুখ থেকে খসে পড়বে।
সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায় ক্যাস্ত্রো যখন তার সেই নির্ধারিত সফর বাতিল করে দেন।
আরেকটি পরিকল্পনা ছিলো টেলিভিশনে বক্তব্য দিতে যাওয়ার আগে তার মুখের ওপর এলএসডি এরোসল স্প্রে করে দেওয়া যাতে তিনি পর্দার সামনে অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করে দেন।
এসব পরিকল্পনা এড়াতে ক্যাস্ত্রো বহু সতর্কতা অবলম্বন করতেন।
তবে ১৯৭৯ সালে যখন জাতিসংঘের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি নিউ ইয়র্কে উড়ে যান তখন বিমানে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলো তিনি বুলেটপ্রুফ কোন জ্যাকেট পরে আছেন কীনা তিনি তখন তার শার্ট খুলে তার উন্মুক্ত বুক দেখিয়ে দেন।
“আমার আছে নৈতিকতার এক বর্ম,” বলেছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো।
সূত্র-বিবিসি
Posted ৩:০০ পিএম | শুক্রবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।