নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 120 বার পঠিত
চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) তথা চট্টগ্রাম রেলওয়ের তৈল চোর চক্রের স্বরূপ সম্পর্কে শনিবার সমকালের প্রতিবেদনে যাহা উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সিজিপিওয়াই হইতে গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সংগৃহীত এক মাসের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গিয়াছে, একই কায়দায় ১৬ দফা তৈল চুরি করেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক হাবিলদার ও তিন সিপাহি। উপরন্তু, উক্ত সদস্যবৃন্দ, রেলের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগত মিলিয়া বিভিন্ন সময় তৈল পাচারের পাশাপাশি ট্রেনের মূল্যবান যন্ত্রাংশও চুরি করিয়াছেন। যেইখানে আরএনবির দায়িত্বই হইল রেলসম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেইখানে বাহিনীটির সদস্যদের তৈল ও যন্ত্রাংশ চুরি বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত সেই বেড়ায় ক্ষেত খাইবার প্রবাদটিই মনে করাইয়া দেয়। দুঃখজনক হইল, চট্টগ্রাম রেলওয়েতে কয়েক বৎসর ধরিয়া এহেন অপকর্ম সংঘটিত হইলেও উহা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয় নাই। বরং, প্রতিবেদন অনুসারে, এই সকল ঘটনায় জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা একই কর্মস্থলে ১০ হইতে ১৫ বৎসর কর্মরত থাকিয়াছেন। এমনকি ২০২২ সালে এই চোর চক্রের দুই সদস্যকে চট্টগ্রাম রেলওয়েরই অন্য শাখা সিআরবিতে বদলি করা হইলেও সেইখানে উহাদের বেশি দিন থাকিতে হয় নাই। চেষ্টা-তদবিরে বৎসর অতিক্রান্ত হইবার পূর্বেই উক্ত দুই সিপাহি বীরদর্পে সিজিপিওয়াইতে প্রত্যাবর্তন করেন। সেখানে ফিরিয়াই মাতিয়া উঠেন পুরানা চৌর্যবৃত্তিতে অর্থাৎ তৈল চুরির নেশায়। এমনও তথ্য রহিয়াছে, ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর সিজিপিওয়াইয়ের তৎতালীন জনৈক আরএনবি ইন্সপেক্টর বাহিনীর বিভিন্ন পদের ১০ সদস্যের বিরুদ্ধে তৈল ও রেলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পত্র লিখেন বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্টের নিকট। অভিযুক্তদের মধ্যে নাম ছিল উক্ত চোর চক্রের দুই সদস্যের। তবে তাহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এহেন নির্লিপ্ততাই যে চট্টগ্রাম রেলওয়ের তৈল চুরি দীর্ঘ সময় যাবৎ অব্যাহত থাকার কারণ উহা ব্যাখ্যা করিয়া বলার প্রয়োজন নাই। আবার একই কারণে ইহাও বলা যায় যে, তৈল বা যন্ত্রাংশ চুরির এই চক্র রেলওয়ের অন্যান্য অঞ্চলেও সক্রিয় থাকিতে পারে।
আমরা জানি, বাংলাদেশে যেই সকল যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা রহিয়াছে সেইগুলির মধ্যে রেল হইল অপেক্ষাকৃত সুলভ ও অধিকতর জনপ্রিয়। তথাপি শতাব্দীপ্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি একসময়ে বেশ লাভজনক হইলেও বহু দশক ধরিয়া লোকসান গুনিতেছে। বিভিন্ন সময়ে রেলওয়ের প্রতি দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফাঁদে পড়িয়া সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ নিঃসন্দেহে রেলওয়ের এহেন লোকসান গুনিবার অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে পরিবহন খাতটিতে চলমান উল্লিখিত ধারাবাহিক চৌর্যবৃত্তিরও যে এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রহিয়াছে তাহা অনস্বীকার্য।
আশার বিষয় হইল, চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের এক দিন– এই বাংলা প্রবাদের সত্যতা প্রমাণ করিতেই যেন আলোচ্য চোর চক্রের এক সদস্য নিজেই তাহার অজান্তেই সম্পূর্ণ চক্রটির সন্ধান দিয়াছেন। প্রতিবেদন মতে, তিনি নিজের অপরাধ ঢাকিবার প্রয়াসে সম্প্রতি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানাইয়া পূর্বপরিচয়ের সূত্রে বিষয়টি সম্পর্কে সরাসরি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে খুদেবার্তা পাঠান। সেই বার্তা যায় রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট, যাহার সূত্র ধরিয়া গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। তদন্তে বাহির হইয়া আসে, যাহারা অভিযোগকারী, তাহারাই আসল চোর। আমাদের প্রত্যাশা, তদন্ত এখানেই থামিবে না; দীর্ঘদিন যাবৎ একই চক্র কোন প্রক্রিয়ায় এবং কাহাদের সহযোগিতায় উহাদের তবিয়ত বহাল রাখিল সেই সকল তথ্যও উদ্ঘাটিত হইবে। একই সঙ্গে রেলওয়ের তৈল ও যন্ত্রাংশ চুরির সঙ্গে যুক্ত সকলের সঙ্গে উহাদের পৃষ্ঠপোষকদেরও আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে সকল প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি হইতেও মুক্ত করিবার কার্যকর উদ্যোগ গৃহীত হইবে।
Posted ২:৪৩ পিএম | রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।