মঙ্গলবার ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

এফবিআইর তল্লাশি: ট্রাম্পের ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাশা হুমকিতে

  |   সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০২২   |   প্রিন্ট   |   124 বার পঠিত

দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনকালে তার কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে আইনি ঝামেলা তাকে বেশ বিপাকে ফেলেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে হস্তক্ষেপ ও ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার মামলার সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে হোয়াইট হাউজের নথিপত্র সরানোর ঘটনা।

চলতি মাসেই ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসায় তল্লাশি অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই)। ওই তল্লাশি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি নথি এদিক-সেদিক করার বিষয়টিকে সামনে আনে। এ নিয়ে ব্যাপক তদন্তের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প।

এছাড়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আগে থেকে দুটি ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এর একটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ সম্পর্কিত ও আরেকটি আর্থিক অপরাধের অভিযোগ বিষয়ে।

এদিকে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের সময় মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা নিয়েও একটি তদন্ত চলমান রয়েছে। এ মামলাতেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে তা বিবেচনা করা হচ্ছে।

আগামী প্রেসিডেন্ট (২০২৪) নির্বাচনেও লড়তে চাচ্ছেন ট্রাম্প। কিন্তু উদ্ভূত আইনি ঝামেলাগুলোর কারণে তার সেই উচ্চাশা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের গোপন নথিপত্র

ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউজ ছাড়েন তখন কয়েক বাক্স নথিপত্র সঙ্গে করে ফ্লোরিডায় নিজ বাড়ি মার-এ-লাগোয় নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি নথিপত্র বিষয়ক ‘প্রেসিডেন্ট রেকর্ড অ্যাক্ট’নামে একটি আইন রয়েছে। এ আইনের অধীনে কোনো সরকারি নথি এদিক-সেদিক করা ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে।

ট্রাম্প নিজেই জানান, গত ৮ আগস্ট এফবিআই গোয়েন্দার একটা বড় দল তার বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায়। ট্রাম্পের আইনজীবি ক্রিস্টিনা বব বলেন, এফবিআইয়ের ওই অভিযানে কিছু নথি জব্দ করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এফবিআই ও বিচার বিভাগ এখনও কোনো মন্তব্য করেননি।

এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ন্যাশনাল আর্কাইভস জানায়, হোয়াইট হাউজ আরও ১৫ বাক্স নথি মার-এ-লাগো থেকে উদ্ধার করে তারা। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি এরপর কংগ্রেসকে জানায়, ওই বাক্সগুলোতে যেসব নথি ছিল তার সবই জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্তি ‘ক্লাসিফাইড’তথ্য।

তবে ট্রাম্পের দাবি, তার বাড়িতে সরকার ‘কোনো কিছুই খুঁজে পায়নি। ডেমোক্র্যাটরা অকারণে তার কেলেঙ্কারির সন্ধান করে বেড়াচ্ছে।’ তবে ট্রাম্প যাই বলুন না কেন, গোপন নথি নিয়ে সরকারের তদন্ত প্রক্রিয়া পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলেছে।

মার্কিন বিচার বিভাগ ইতোমধ্যে কিছু নথি প্রকাশও করেছে। এফবিআই বিচারকদের জানিয়েছে, ট্রাম্পের বাড়ি থেকে পাওয়া নথিতে বিচারে বাধা দেয়ার কিছু প্রমাণ তারা পেয়েছে।

ক্যাপিটল হিল দাঙ্গা

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলছে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের অনুমোদনের দিন ট্রাম্প সমর্থকরা পার্লামেন্ট ভবনে যে ভাংচুর চালিয়েছিল ট্রাম্পই তার উসকানি দিয়েছিলেন।

মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন ও বিরল ওই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে তাকে ‘কারচুরি’করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন ট্রাম্প। দাঙ্গার আগে আগে ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মলের সামনে এক মিছিলে আবারও সেই একই দাবি করে কর্মী-সমর্থকদের উসকে দেন তিনি।

দাঙ্গার ঘটনার কিছুদিন পরই রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ট্রাম্পকে ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তা ওখানেই শেষ হয়ে যায়নি। গত বছরের জুলাই মাসে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের কিছু রাজনীতিক মিলে ক্যাপিটল দাঙ্গা নিয়ে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার জন্য ‘জানুয়ারি সিক্সথ কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করেন।

ওই কমিটির তদন্তে চমকপ্রদ কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে। তার মধ্যে ঘটনার দিন হোয়াইট হাউজ থেকে যোগাযোগ করার বিষয়টি ছিল উল্লেখযোগ্য। ওই কমিটি ইতোমধ্যেই মিস্টার ট্রাম্পের বিরুদ্ধ অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগ এনেছে। এ নিয়ে এখনও শুনানি চলছে।

নির্বাচনে হস্তক্ষেপ

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্যাপিটল হিল ভবন ভাংচুরের অভিযোগ ছাড়াও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগও রয়েছে। পার্লামেন্ট ভবনে হামলার কয়েকদিনেআগেই জর্জিয়া রাজ্যের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা একটা ফোন কল পেয়েছিলেন, যা তার কাছে ছিল অস্বাভাবিক।

উত্তেজিত ট্রাম্প জর্জিয়ার রিপাবলিকান দলীয় সেক্রেটারি ব্রাড র‌্যাফেন্সপার্জারকে বলছেন, ‘আমার আর শুধুমাত্র ১১ হাজার ৭৮০টি ভোট চাই।’ এই ভোটগুলো পেলে ‘সুইং স্টেট’ খ্যাত জর্জিয়ায় জিতে জেতেন ট্রাম্প।

কিন্তু তা না করতে পেরে তিনি ওই রাজ্যে ‘কারচুপি’ হয়েছে অভিযোগ করেন তিনি। ট্রাম্প আরও র‌্যাফেন্সপার্জার যদি ফলাফল ফের পরীক্ষা করে দেখতেন তাহলে ফলাফল বদলে যেতে পারত।

ট্রাম্পের এ অযাচিত হস্তক্ষেপকে সম্ভাব্য নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত শুরু করেন জর্জিয়ার প্রধান কৌশুলি ফানি উইলিস। কিন্তু ট্রাম্প এ তদন্তকে ‘উইচ হান্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন। তবে নির্বাচনী কর্মকর্তাকে এভাবে ফোন দেওয়ার বিষয়টি ‘অপরাধমূলক বিবৃতি’ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আর্থিক কেলেঙ্কোরি

এছাড়া ট্রাম্প কর ও ব্যাংক জালিয়াতি বিষয়ক বেশ কয়েকটি অভিযোগের মুখে রয়েছেন। যা নিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় ও রাজ্য পর্যায়ে তদন্ত হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্টকে এসব অভিযোগের বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্ক রাজ্য তদন্ত করছে যে- ট্রাম্প অর্গানাইজেশন ঋণদাতাদের, যারা  ইন্স্যুরেন্স করেছেন তাদেরকে এবং ট্যাক্স কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্তিকর আর্থিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিপথে নিয়েছেন কিনা তা নিয়ে। সেই তদন্ত শেষ হয়ে এসেছে।

তার প্রেক্ষিতে ট্রাম্পকে এখন সাক্ষ্য দেয়ার কথা। সম্প্রতি নিউইংর্ক অ্যাটর্নি জেনারেল লেতিতিয়া জেমসের অফিস থেকে বলা হয়, তাদের হাতে উল্লেখযোগ্য তথ্যপ্রমাণ এসেছে। তাতে ইঙ্গিত মেলে যে, ঋণ পেতে, ইন্স্যুরেন্স এবং আয়কর সুবিধা পেতে আর্থিক বিবরণে মিথ্যা অথবা বিভ্রান্তিকর সম্পদের মূল্য দেখিয়েছিল ট্রাম্প অর্গানাইজেশন।

এ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সিভিল তদন্ত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া নেয়া হতে পারে সহসাই। সাবেক এ প্রেসিডেন্ট ও তার ট্রাম্প অর্গানাইজেশন বলছে- তারা কোনো অন্যায় করেনি।

Facebook Comments Box

Posted ৬:৫৬ পিএম | সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০২২

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।