শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

পুকুরে ফেলা মোবাইলে ঝুলছে মিন্টুসহ অনেকের ভাগ্য

ডেস্ক রিপোর্ট   |   বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   142 বার পঠিত

পুকুরে ফেলা মোবাইলে ঝুলছে মিন্টুসহ অনেকের ভাগ্য

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠেছে তিনটি মোবাইল ফোন। হত্যাকাণ্ডের পর অন্যতম অভিযুক্ত শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয় এসব মোবাইলে। তিনটি মোবাইল ফোনই পুকুরে ফেলেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু।

আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ডিবির জালে গ্রেফতার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর নির্দেশে মোবাইল তিনটি দুটি পুকুরে ফেলে দেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তিনি। মোবাইলগুলো উদ্ধার করা গেলে ফরেনসিক রিপোর্টে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক তথ্য। যাতে ফেঁসে যেতে পারেন মিন্টুসহ অনেকে।

মোবাইল উদ্ধার নিয়ে যা বলছে ডিবি
ডিবি সূত্রে জানা যায়, যদি মোবাইল তিনটি উদ্ধার করা যায় তবে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোবাইলে অনেক ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ মিলবে। আনার হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে মোবাইল তিনটিতে গ্যাস বাবু যাদের সঙ্গে মেসেজ আদান-প্রদান কিংবা কথোপকথন করেছেন সেগুলো ফরেনসিকের মাধ্যমে জানা সম্ভব হবে। আর এসব তথ্য-প্রমাণে ফেঁসে যেতে পারেন সাইদুল করিম মিন্টুসহ আরও একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা। আর যদি মোবাইল উদ্ধার না করা যায় তবে অনেক তথ্য-প্রমাণ মিলবে না।

যেভাবে আনার হত্যায় আসে গ্যাস বাবু ও মিন্টুর নাম
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমপি আনারকে ১৩ মে হত্যার পর কিলার আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া দেশে ফিরে আসেন ১৫ মে। ১৬ মে রাতে গ্যাস বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিমুল। এক পর্যায়ে তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মিটিং করেন। তাদের মধ্যে এমপি আনার হত্যার ছবি আদান-প্রদান করা হয়।

১৭ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে গ্যাস বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ ও মেসেজ আদান-প্রদান হয়। আনার হত্যা ও পরবর্তীসময়ে টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়েও আলাপ হয় মোবাইলে।

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস বাবুকে গ্রেফতারের পর শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ছবি আদান-প্রদানসহ ও অন্যান্য বিষয় স্বীকার করেছেন বাবু। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো কোথায়? শুরুতে জিজ্ঞাসাবাদে গ্যাস বাবু জানান, তার মোবাইলগুলো ঝিনাইদহ শহরের টিকেসি কলেজের সামনে রাস্তার মোড় থেকে পায়রা চত্বর রাস্তার মোড়ে যাতায়াতের সময় হারিয়ে গেছে। এরপর তিনি জিডি করেন।

পরবর্তীসময়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বীকার করেন, তার তিনটি মোবাইল ফোন শহরের দুটি পুকুরে ফেলা হয়েছে। আর এ কাজটি করেছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু।

তদন্ত সূত্র জানায়, গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইলের মধ্যে দুটি ফেলা হয়েছে পায়রা চত্বর সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পের পেছনের একটি পুকুরে, আরেকটি ফেলা হয়েছে স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি পুকুরে। মোবাইলগুলো উদ্ধারে ডিবির টিম বাবুকে নিয়ে ঝিনাইদহে যাবে। ওই মোবাইল ফোন উদ্ধারে অভিযানের জন্য ১০ কার্যদিবস সময় দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৬ মে) মোবাইল উদ্ধারে ডিবির টিম ঝিনাইদহে যেতে পারেন

মোবাইল উদ্ধার নিয়ে যা বলেন আদালত
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালতে চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মাহফুজুর রহমান ফেলে দেওয়া তিনটি মোবাইলের খোঁজে অভিযান চালানোর জন্য গ্যাস বাবুর পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবুও রিমান্ডের জোর দাবি জানান। এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চান। শুনানি শেষে আদালত বাবুর রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

তবে হত্যাকাণ্ডে যোগাযোগ কাজে তার ব্যবহার করা তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করার অনুমতি দেন আদালত।

বিচারক বলেন, আসামি বাবুকে ঝিনাইদহ জেলা কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আসামি বাবুকে নিয়ে মোবাইল ফোন তথা আলামত উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

বেরিয়ে আসতে পারে আরও অনেক নাম
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমপি হত্যাকাণ্ডে বের হয়ে আসতে পারে আরও অনেকের নাম। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গ্যাস বাবুর সঙ্গে আর কারা জড়িত ছিল তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বের হতে পারে। হত্যার পর আনারের ছবি তিনি কাকে কাকে পাঠিয়েছিলেন সেটাও জানা যাবে। এতে অনেকে ফেঁসে যেতে পারেন তদন্তের জালে। এজন্য মোবাইল ফোন তিনটি খুঁজে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিয়ে আলামত উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালানো হবে। পানি থেকে আলামত উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও জেলেদের কাজে লাগানো হবে। মোবাইলগুলো কেউ যেন সরিয়ে ফেলতে না পারে সেজন্য স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মোবাইলগুলো দিয়েই আনার হত্যার মূল ঘাতক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুর সঙ্গে অসংখ্যবার কথা বলেছেন। এছাড়া অসংখ্য মেসেজ তারা তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। মোবাইলগুলোতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত আছে। না হলে গ্যাস বাবু মোবাইলগুলো পানিতে ফেলে দেবেন কেন। মোবাইলগুলো পেলে মামলার তদন্তে অনেক সহায়তা হবে। সেজন্য মোবাইল উদ্ধার করা অনেক জরুরি।’

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজীম।

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।

 

Facebook Comments Box

Posted ৫:০৮ এএম | বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।