| বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 19 বার পঠিত
দুই দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। এই সফর সামনে রেখে আবারও সিন্ডিকেটমুক্ত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের দাবি জানিয়েছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)।
ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বৃহস্পতিবার বায়রা আয়োজিত ‘কম খরচে, দ্রুত কর্মী পাঠানোর নিমিত্তে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বায়রার সকল সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি’ শীর্ষক মতবিনিমিয় সভায় এ দাবি করা হয়। তবে সভাজুড়ে সিন্ডিকেট ইস্যুতে হট্টগোল চলে। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের ওপর ব্যবসায়ীদের চড়াও হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
অনুষ্ঠানে বায়রা সভাপতি আবুল বাশার বলেন, ‘শুরুতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যোগ্যতাসম্পন্ন ৫০০ রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাবে। আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ১ হাজার ৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠান। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকার ২৫ জনকে বেছে নেয়। এখন তা ১০০টি করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ থেকে লোক যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু সরকারের টাকায় দেশ চলে না, রেমিট্যান্স দরকার হয়। যেসব খাতে রেমিট্যান্স আসে তার মধ্যে যে লোকটা বাংলা ভাষাও ভালোভাবে বলতে পারে না, যাকে চাকরি দেয়ার ক্ষমতা সরকারেরও নেই, তাকে আমরা বিদেশে পাঠিয়ে তার সংসার সচল করি। দেশে রেমিট্যান্স আসে। বর্তমানে যে রিজার্ভ জমা আছে, তার বড় একটি অংশও বিদেশ থেকে পাঠানো কর্মীদের রেমিট্যান্স।’
বায়রা সভাপতি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কম খরচে দ্রুত কর্মী নিয়ে তাদের দেশে কলকারখানা চালু করতে পারে, তাদের ব্যবসা চালু করতে পারে- সেসব বিষয়ে আলোচনা করতে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন। আমরা চাই সিন্ডিকেট বাতিল করে বায়রার সব সদস্যের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে লোক পাঠানোর সুযোগ উন্মুক্ত করা হোক। এর ফলে দ্রুত অধিকসংখ্যক কর্মী আমরা মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারব। তাতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়বে।
অনুষ্ঠানে বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বলেন, ৫০ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় চলে গেছে। ২ লাখ ৪০ হাজার অ্যালোকেশন হয়ে গেছে, ১ লাখ ১১ হাজার ই-ভিসা ইস্যু হয়ে গেছে। আরও প্রায় ৫০-৬০ হাজার লোক যাওয়ার জন্য পাইপলাইনে আছে। তিনি বলেন, ‘সব রিক্রুটিং এজেন্সির মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর সুযোগ পেতে ঐকমত্যের বায়রা দরকার। নেতৃবৃন্দকে একমত হয়ে একটা পথ বের করতে হবে। আপনার ভেতর দাম্ভিকতা, ইগোকে বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় ও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে তাদের ভালো পরামর্শ দিতে হবে। মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের প্রশ্নে বায়রার নেতৃবৃন্দকে এক হয়ে সরকারকে সহায়তা করতে হবে। এ ছাড়া কিছু বড় বিষয় আছে। তবে আমরা যদি সিন্সিয়ার হই, গ্রুপিং না করি, বহিরাগত মুরব্বির ওপর নির্ভর করে এ ব্যবসা কন্ট্রোল করার চেষ্টা না করি, কলকাঠি নাড়াচাড়া করার চেষ্টা না করি তাহলে এটা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় সিন্ডিকেটের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। আপনাদের মতো আমিও চাই বায়রার সব সদস্য সমানভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ যেন পান।’
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরিন বলেন, ‘মালয়েশিয়ার নবগঠিত সরকারের মন্ত্রিপর্যায়ের প্রথম সফর হিসেবে ঢাকা সফর করবেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। সফরকালে তার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। এসব বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর করার বিষয়ে বিশদ আলোচনা হওয়ার আশা করছি।’ এ সফর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও গতি সঞ্চারে সহায়ক হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
কয়েক দফায় হট্টগোল
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে দফায় দফায় বায়রা সভায় সিন্ডিকেট ইস্যুতে হট্টগোল চলে। বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটিতে সিন্ডিকেটের সদস্য আছে কি নেই সে প্রসঙ্গ নিয়েই এই হট্টগোল। একপর্যায়ে হোটেলে ক্রিকেট দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য বলেন, ‘আমরা এখানে দায়িত্ব পালন করছিলাম। বায়রার অনুষ্ঠানে হট্টগোল শুনে সেখানে যাই। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’
এরপর অনুষ্ঠান চলাকালে বেলা ১টার কিছু পর আবারও হট্টগোল শুরু হয়। বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মো. ফখরুল ইসলাম সিন্ডিকেট নিয়ে বক্তব্য দিতে শুরু করলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। এ সময় মূল মঞ্চের সামনে জড়ো হন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাদের ধাক্কাধাক্কিতে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বুম মাটিতে পড়ে গেলে সেখানে সময় টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানবীর ইসলাম রুপল এগিয়ে যান। রুপল টেলিভিশনের বুম ফেলে দেয়ার প্রতিবাদ করলে তার দিকেও তেড়ে আসেন এবং আক্রমণ করার চেষ্টা করেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে অন্য সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানান। এ সময় বায়রার সভাপতি আবুল বাশার দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান এবং দোষীকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যা দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে, তা আমরা নিজেরাই সমাধান করব। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’
Posted ১০:০২ পিএম | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।