বৃহস্পতিবার ২০শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

অভিন্ন মতামত দেবে বিএনপি ও মিত্ররা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   137 বার পঠিত

অভিন্ন মতামত দেবে বিএনপি ও মিত্ররা

রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার সঙ্গে মিল রেখেই পাঁচ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর ক্ষেত্রে দলীয় অবস্থান তুলে ধরবে বিএনপি। ঢালাওভাবে মতামত চাওয়া হলেও যেসব সংস্কারের এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই, সেগুলোর ক্ষেত্রে মতামত নাও দিতে পারে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ ও কাঠামো তৈরিতে সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিএনপি। একই সঙ্গে সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবনাগুলোর ওপর অভিন্ন বা কাছাকাছি মতামত তুলে ধরবে বিএনপি ও মিত্ররা। বিএনপির পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক তিনটি দল ঐকমত্য কমিশনে তাদের মতামত জমা দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে মতামত জমা দিতে পারে বিএনপিসহ বাকি মিত্ররা। এর মধ্য দিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দিতে চায় দলগুলো। বিএনপি ও মিত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি তাদের এই দলীয় সংস্কার প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনে জমা দেওয়ার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনেও তুলে ধরবে। সেখানে কেন এবং কোন কারণে দলীয় এই অবস্থান নিয়েছে, এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবে দলটি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ওপর আমাদের দলীয় মতামত প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে এটা নিয়ে পরামর্শ, আলোচনা করা হচ্ছে। যে কোনো দিন সেগুলো কমিশনে জমা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্টের ওপর বিস্তারিত মতামত তুলে ধরব। সঙ্গে স্প্রেডশিটটাও থাকবে।

এদিকে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা কাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এসএম ফজলুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রথম পর্যায়ে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।

জানা গেছে, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ও প্রাদেশিক সরকারের ফর্মুলায় রাজি নয় বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালে একসঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন চাইবে না দলটি। একমত নয় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও। সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার বিষয়েও দলটির আপত্তি থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই টার্মে সীমিত করার বিষয়ে দলটি একমত হবে। তবে এক্ষেত্রে টানা দুবার না থাকার পক্ষে মত ব্যক্ত করা হবে। আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করবে, এই বিধানে রাজি নয় বিএনপি। নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার থাকার বিষয়ে দলটি তাদের ঐকমত্যের কথা জানাবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ, দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্টীকরণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষে একটি আইন প্রণয়ন করার বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেবে বিএনপি।

সংবিধান, জনপ্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে ৬ মার্চ ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ‘স্প্রেডশিট’ (ছক আকারে) পাঠিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে দলগুলোকে ১৩ মার্চের মধ্যে স্প্রেডশিটে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’ এই তিনটি অপশনের যে কোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছিল। এ পর্যন্ত ১৫টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কমিশন মতামত দিয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ‘রাষ্ট্র সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ’- দলীয় এমন অবস্থানের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর জবাব প্রস্তুত করেছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে নিজেদের স্বার্থে ও গণতন্ত্রের বিপক্ষে সংবিধানকে একাধিকবার কাটাছেঁড়া করেছে। নির্বাচনি ব্যবস্থাকেও দলীয়করণ করে ফেলেছিল। তাই আগামীতে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থায় যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে মতামত তুলে ধরবে দলটি। বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্য ক্ষেত্রে মৌলিক সংস্কারের ব্যাপারে তাদের খুব একটা আপত্তি থাকবে না। তবে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে, এই ধরনের বিতর্কিত সংস্কার ইস্যুতে একমত হবে না বিএনপি।

কমিশনগুলোর সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলের অবস্থান চূড়ান্ত করতে গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। সর্বশেষ রোববার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো সংবিধান ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার রিপোর্টের ওপর দলীয় প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি সংবিধান সংস্কারের অধিকাংশ প্রস্তাবনার সঙ্গে একমত। তবে দলটির শীর্ষ নেতারা বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, সংবিধান সংস্কারের এখতিয়ার একমাত্র নির্বাচিত সংসদের। নির্বাচিত সংসদই সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার আনবে। এর বাইরে সরকারের নির্বাচন ও প্রশাসনিক সংস্কারে যেসব প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলোর ওপর জোর দিয়েছেন তারা। প্রশাসনিক সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে একমত পোষণ করেছেন নেতারা।

ঐকমত্য কমিশন থেকে চিঠি পাওয়ার পর এটা নিয়ে যুগপতের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি। জানা গেছে, কমিশন থেকে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত পাঠাতে বলা হলেও একটু সময় নিয়ে ভালোভাবে কাজটি শেষ করতে চায় বিএনপি। গত সপ্তাহ খানেক ধরে সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে দলটি। মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শের পাশাপাশি দল ও দলের বাইরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এক্সপার্টদের সঙ্গে কথা বলে দলীয় মতামত প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিএনপি ইতোমধ্যে সংস্কারবিষয়ক কয়েকটি ইস্যুতে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করেছে। ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না দলটি। নেতারা মনে করছেন, এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কারণ, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এর একটি সংবিধান রয়েছে। এই সংবিধানের আলোকেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। যে সময়ে দেশে কোনো সংবিধান রচিত থাকে না, মানে একটা নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, তখন গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। দলটি মনে করে, বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সংবিধানকে দলীয়করণ করে গণতন্ত্রের বিপক্ষে এবং নিজেদের পক্ষে সাজিয়েছিলেন। এ কারণে সংবিধানে যে ব্যত্যয় বা বিচ্যুতি হয়েছে, সেজন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক মতৈক্যে সেসব সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ।

Facebook Comments Box

Posted ৩:৫০ এএম | বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(174 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।