নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 151 বার পঠিত
দেশিও তুলার ওপর আরোপিত ট্যাক্স জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যাহার করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করা এবং দেশে তুলা উৎপাদন বৃদ্ধিতে দুই মাসের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে সরকার।
পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টর্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বাংলাদেশ তুলা চাষের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আজ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। তামাক চাষের জমির কিছু অংশে তুলা চাষ করলে কৃষকও লাভবান হবেন; আবার দেশও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে।
দেশের জন্য ভাল তা কোনো গোষ্ঠীর বিপক্ষে গেলেও সেই সিদ্ধান্ত নিতে পিছুপা হবে না ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দেবার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ওমান প্রবাসীরা পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যায় আছেন; এসব প্রবাসীদের কষ্ট লাঘবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, পাসপোর্ট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা অর্ধেকে নেমে আসবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তুলা রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কারোপ করছে। তবে, বাংলাদেশ এর বাইরে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সীমা পেছানো উচিত হবে না বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, উত্তরণের জন্য সরকার ও ব্যবসায়ীরা আগে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেয়নি। তাই বলে থেমে থাকা যাবে না। উত্তরণ পরবর্তী তিন বছর সময় পাওয়া যাবে তখনই ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নেবে।
আমদানি ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশিও তুলাকে প্রণোদনা দেওয়া উচিত সেখানে ট্যাক্স ভ্যাট বসানো হয়েছে। দেশিও তুলার ওপর আরোপিত এই ট্যাক্স কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশের কথা জানান এনবিআরের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (কাস্টম বন্ড)।
দ্রুতই দেশিও তুলার ওপরে আরোপিত ট্যাক্স-ভ্যাট প্রত্যাহারের সুখবর আসবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ কটন জিনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাবের বলেন, বাংলাদেশে তামাক কৃষিপণ্য অথচ তুলাকে এখনো কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে তুলা চাষী ও জিনার্সরা কৃষি ঋণ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ঋণ নিতে দিতে হয় বাড়তি সুদ।
সরকারের নীতি সহায়তা পেলে অন্তত দুই লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করে আমদানিকৃত তুলার চার ভাগের এক ভাগ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
তুলা আমদানিতে চীনকে হটিয়ে বাংলাদেশ এখন শীর্ষ দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চামড়ার মৌসুমে ট্যানার্সদের যেভাবে স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়া হয়। তুলাতেও স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়া হলে কৃষকরা তুলা উৎপাদন করে দাম পাওয়ার অনিশ্চয়তা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।
দেশে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার তুলা আমদানি করতে হয়। বিপুল এই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এক-চতূর্থাংশ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী পরিচালক ড. ফকরে আলম ইবনে তাবিব।
তিনি বলেন, ধানের জমিতে তুলা চাষ হয় না। তুলা মূলত চরাঞ্চল, বরেন্দ্র এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলের লবনাক্ত এলাকা, পাহাড়ী এলাকাসহ উচুঁ জমিতে তুলা চাষ করা হয়। নীতি সহাযোগিতা দেওয়া হলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত না করেই দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন তুলা উৎপাদন করা সম্ভব।
তুলা বীজ থেকে ভোজ্য তেল ও গবাদি পশুর খাদ্য খৈল পাওয়া যায়। ফলে তুলা চাষ বাড়লে আমদানি নির্ভর ভোজ্য তেল ও খৈল আমদানি কমবে বলেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক।
বাংলাদেশ সুদান কটন জিনিং ইন্ডস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সুদানে তুলা চাষে সফল প্রবাসী উদ্যোক্তা মো. আবুল খায়ের বলেন, বাংলাদেশে তুলা চাষ বাড়াতে সহায়তা করবেন। ইতোমধ্যে উচ্চ ফলনশীল তিনটি উন্নত জাতের তুলা বীজ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে। এই নতুন জাতের চাষাবাদ শুরু হলে কম জমি থেকে বেশি তুলা উৎপাদন করার সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে ইআরএফ’র সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, তুলা এখনো কৃষিপণ্য নয় বা দেশি তুলার ওপর বৈষম্যমুলক কর আছে অনেকে তা জানতো না। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় নীতি সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে ইআরএফ, বাংলাদেশ কটন জিনার্স এ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সুদান কটন জিনিং ইন্ডাস্ট্রিজ।
Posted ১২:৩২ পিএম | সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।