নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 119 বার পঠিত
সাদপন্থিদের ইজতেমা নিষিদ্ধ করার দাবি
কওমি মাদ্রাসা, ইজতেমা ও দ্বীন’ রক্ষায় গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ’ ব্যানারে মহাসম্মেলন করেছে হেফাজতে ইসলাম-সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো। ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা নিষিদ্ধ করাসহ ৯ দাবি জানানো হয়েছে সম্মেলন থেকে।
সম্মেলন সকাল ৮টায় শুরু হলেও এর আগেই লাখো মানুষ জমায়েত হন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তাদের অধিকাংশ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। তাদের বহন করা হাজারো বাস পার্ক করা হয় আশপাশে। এতে শহীদ মিনার, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, কদম ফোয়ারা, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন, শিক্ষা ভবন মোড় অবরুদ্ধ হয়ে যায়। সকাল ১০টার দিকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ মোড়ে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। দুপুরে সম্মেলন শেষ হলেও এর প্রভাবে দিনভর তীব্র যানজট হয়। এতে চরম ভোগান্তি পোহান নগরবাসী। উপচে পড়া ভিড় ছিল শাহবাগ, টিএসসি ও সচিবালয় এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনে।
লাখো মানুষের সম্মেলন হলেও সোহরাওয়ার্দীতে শৌচাগার এবং অন্যান্য সুবিধা ছিল না। ফলে শৌচাগারের খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভিড় করেন সম্মেলনে আসা ব্যক্তিরা। এতে ওই সব প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সম্মেলন চলাকালে উদ্যান-সংলগ্ন হজরত শাহবাজের মাজারে ২০-৩০ জন যুবক হামলা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানসংকুলান না হওয়ায় শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর, রমনা পার্ক থেকে শিক্ষা ভবন মোড় পর্যন্ত সড়কে ছিল হাজার হাজার মানুষের ভিড়। তাদের খাবারের উচ্ছিষ্ট ও আবর্জনায় দুপুরের পর উদ্যান এবং আশপাশের সড়ক ভাগাড়ে পরিণত হয়। এ নিয়েও সমালোচনা হয়। তবে বিকেলে তাবলিগের কয়েকশ ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এসব আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন।
হেফাজত আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক খলিল আহমাদ কাসেমী। স্বাগত বক্তৃতা করেন মহাসম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক।
হেফাজত-সংশ্লিষ্ট কওমি ঘরানার দল ও সংগঠনের ৬৫ নেতা সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। জামায়াতে ইসলামী এবং চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের কাউকে দেখা যায়নি সম্মেলন মঞ্চে।
গত ৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ধাপে এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা হবে। ওই বৈঠকে সাদপন্থিরা যোগ দিলেও মাওলানা যুবায়ের আহমেদের পক্ষের কেউ ছিলেন না। ফলে সিদ্ধান্ত হয়নি কোন পক্ষ কবে ইজতেমা করবে।
হেফাজতপন্থিরা মাওলানা যুবায়ের অনুসারীদের সমর্থক। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গীর ইজতেমার ময়দানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হন। এর পর থেকে সরকারের মধ্যস্থতায় দু’পক্ষ পৃথক ইজতেমা করছেন। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাদপন্থিদের আর ইজতেমার সুযোগ দেওয়ার বিরোধী হেফাজতপন্থিরা।
গতকালের সম্মেলনে মাওলানা সাদের কড়া সমালোচনা করেন বক্তারা। বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। এতে বলা হয়, বিচ্যুত মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না। তাঁকে আসার অনুমতি দিলে সরকার পতনের ডাক দেওয়া হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খলিল আহমাদ কাসেমী সাদ অনুসারীদের সতর্ক করে বলেন, ‘যিনি নবী-রাসুল সম্পর্কে কটূক্তি করতে পারেন, তাঁর কাজ কখনোই ভালো হতে পারে না। তাঁকে অনুসরণ করলে আপনাদের দ্বীন এবং দুনিয়া দুটোই ধ্বংস হবে।’ তিনি ঘোষণা দেন, এখন থেকে টঙ্গী ইজতেমা ও কাকরাইল মসজিদ ওলামায়ে কেরামদের তত্ত্বাবধানে থাকবে।
হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে, তাবলিগের ব্যাপারে আলেমদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সরকার দু’পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। কিন্তু কীসের পরামর্শ; এই সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সরকারকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিন্ন কোনো চিন্তা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এ সরকারকে দায়িত্বে বসিয়েছি। কেউ যেন রক্ত চক্ষু না দেখায়।
সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব এবং হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। ঘোষণাপত্রে ৯ দফায় রয়েছে– মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় কার্যক্রমে হয়রানি ও হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, শিক্ষাক্রম থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয় বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ধর্ম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে, ফ্যাসিবাদী আমলের সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার করতে হবে, টঙ্গী ময়দানে হামলার বিচার করতে হবে, কোনো অবস্থাতেই মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না।
মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তৃতা করেন মাওলানা শেখ আহমাদ, মাওলানা রশিদুর রহমান ফারুক, আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মুফতি জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
দোয়ার মাধ্যমে দুপুর দেড়টায় সম্মেলন শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন সড়কে সম্মেলনের গাড়ি এবং হেঁটে চলা লোকজনের ঢল নামে। মঙ্গলবার নিউমার্কেট, কলাবাগান, কাঠালবাগান, ধানমন্ডি এলাকার দোকানপাট বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় যানজট না হলেও অন্যান্য এলাকার সড়ক স্থবির হয়ে যায়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে খামার বাড়িতে আসা কামরুল ইসলাম নামে এক বাসযাত্রী বলেন, রাস্তায় এত যানজট, যা চিন্তা করা যায় না। সাধারণত ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে। আজ এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। কারওয়ানবাজার সিগন্যালে প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে বাসযাত্রী আবু কাওসারকে।
Posted ৫:৫১ এএম | বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।