শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

বন্ধুর পরিকল্পনায় এমপিকে খুন, চুক্তি ৫ কোটি টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট   |   বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   76 বার পঠিত

বন্ধুর পরিকল্পনায় এমপিকে খুন, চুক্তি ৫ কোটি টাকা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সামনে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দিনভর নানান গুঞ্জনের পরে জানা গেলো, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীন।

তিনি ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। শাহীনের ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র। এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক বন্ধু ও চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে। কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসেন শাহীন। পরে আমানসহ ছয়জন মিলে এমপি আজীমকে সঞ্জীবা গার্ডেন নামের একটি ফ্ল্যাটে ট্র্যাপে ফেলে ডেকে আনেন। এরপর তাকে জিম্মি করে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ট্রলিব্যাগে ভরে ফেলা হয় অজ্ঞাত স্থানে।

আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর। তাদের মিশন সফল হওয়ার পর আনারের মরদেহের টুকরোগুলো গুম করতে সিয়াম ও জিহাদ নামের দুজনকে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আমান। ঢাকায় এসে দেখা করেন আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে। তবে শাহীন পরবর্তীসময়ে তাকে কত টাকা দিয়েছেন সেটা জানা যায়নি।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। তারা হলেন- এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থি দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানউল্লাহ আমান, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

পাঁচ কোটি টাকায় চুক্তি

গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আমান জানিয়েছেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরের বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন আমান। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয়েছে।

এমপিকে খুনের পরিকল্পনা ও নারীর ফাঁদ

গত ৩০ এপ্রিল শাহীন চরমপন্থি নেতা আমান ও বান্ধবী সিলিস্তি রহমানকে নিয়ে কলকাতা যান। সেখানে আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। কলকাতায় আরও আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন শাহীনের দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ। সেখানে বসে তারা এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

হত্যার পুরো দায়িত্ব আমানকে বুঝিয়ে দিয়ে ১০ মে দেশে চলে আসেন শাহীন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমান বাংলাদেশ থেকে আরও দুই ভাড়াটে কিলারকে নিয়ে যান কলকাতায়। ফয়সাল শাজী ও মোস্তাফিজ নামে দুই ভাড়াটে খুনি ১১ মে কলকাতায় গিয়ে আমানের সঙ্গে যোগ দেন।

যেভাবে হত্যা

আমানকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এমপি আনার যে ১২ মে কলকাতায় যাবেন তা আগে থেকেই জানতেন শাহীন। তাকে হত্যার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেন তার গ্যাংকে। তারা একাধিক চাপাতিও সংগ্রহ করে রাখে।

গত ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান আনার। প্রথম দিন তিনি তার বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন ১৩ মে কৌশলে এমপি আনারকে নিউটাউনের সেই ফ্ল্যাটে কৌশলে ডেকে নিয়ে যান হত্যাকারীরা।

বিকেলের দিকে এমপি আনার সঞ্জীবা গার্ডেনের সেই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। এরপর আমান তার সহযোগী ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ মিলে এমপিকে চাপাতির মুখে জিম্মি করেন। এসময় তারা এমপির কাছে শাহীনের পাওনা টাকা পরিশোধের কথাও বলেন। বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সবাই মিলে আনারকে জাপটে ধরে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর আমান বিষয়টি জানান শাহীনকে।

মরদেহ গুম করতে করা হয় টুকরো টুকরো

আমানের দেওয়া তথ্যের বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, শাহীনের পরামর্শ মতো মরদেহ গুম করতে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এরপর ফ্ল্যাটের কাছেই শপিংমল থেকে আনা হয় দুটো বড় ট্রলিব্যাগ ও পলিথিন। এমপি আনারের মরদেহের টুকরোগুলো পলিথিনে পেঁচিয়ে ট্রলিব্যাগে ভরা হয়। ঘটনার রাতে মরদেহের টুকরোসহ দুটি ট্রলিব্যাগ বাসাতেই রাখা হয়। এর মধ্যে তারা বাইরে থেকে ব্লিচিং পাউডার এনে ঘরের রক্তের দাগ পরিষ্কার করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কলকাতা পুলিশ ওই ফ্ল্যাট ও আশপাশের ভবনের সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমান ও তার সহযোগীদের ট্রলিব্যাগ আনা-নেওয়া, এমপি আনারের বাইরে রাখা জুতা ভেতরে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। এছাড়া সিলিস্তি রহমান নামে শাহীনের বান্ধবীর বাইরে থেকে পলিথিন ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে আসার দৃশ্যও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৪১ এএম | বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।