ডেস্ক রিপোর্ট | মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ | প্রিন্ট | 91 বার পঠিত
অবশেষে দেশে ফিরলাম। মনে হচ্ছে আমার নতুন জন্ম হয়েছে। জিম্মি হওয়ার শুরুর দিনে ভয়াবহ অবস্থায় ছিলাম। মনে হচ্ছিল, তারা আমাদের মেরে ফেলবে কি না। শুরুর দিকে আমরা ব্রিজে অবস্থান করতাম। সোমালিয়ান জলদস্যুরা সবসময় ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিতো।’ দীর্ঘ বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে মাতৃভূমিতে স্বজনদের কাছে ফিরতে পেরে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি জানাচ্ছিলেন এমভি আবদুল্লাহর নাবিক আইনুল হক।
এদিন জাহাজ থেকে নেমেই আদরের দুই কন্যাকে বুকে জড়িয়ে আনন্দে অশ্রুপাত করেন এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা আতিকুল্লাহ খান। তার মেজো মেয়ে ছোট্ট উনাইজা দূর থেকে বাবাকে দেখেই জাতীয় পতাকা নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। উনাইজা জানিয়েছে, বাবা ফেরায় সে আজ অনেক খুশি।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টার পর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের জেটি চত্বরে এমনই আনন্দ আর আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকার পর মুক্তি পাওয়ার এক মাস পর স্বজনদের কাছে ফিরেছেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের বাংলাদেশি ২৩ নাবিক। এদিন বন্দরে তাদের বরণ করতে ভিড় দেখা যায় পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের।
বিকেলে বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের জেটি চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, কারও মুখে হাসি, কারও চোখে জল। দুই মাস আগেও যে কান্না ছিল কষ্টের, আজ সে কান্না ফিরে এসেছে আনন্দ অশ্রু হয়ে। আপনজনদের ফিরে পেয়ে নাবিকরা যেমন আবেগাপ্লুত হন, তাদের স্বজনরাও খুশিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। এসময় নাবিকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এমন দৃশ্যে বন্দরজুড়ে নামে বাঁধভাঙা আনন্দ।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ২৩ নাবিককে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে ভেড়ে বহনকারী লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মণি-৩। ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদের নেতৃত্বে নাবিকরা যখন একে একে জেটিতে নামছিলেন, তখন সবার চোখেমুখে ছিল যুদ্ধজয়ের হাসি। যেন নীল সাগরে সম্মুখ সমরে শত্রুপক্ষকে পরাজিত করে দেশে ফিরেছেন তারা। এ যেন যুদ্ধজয়েরই হাসি।
চট্টগ্রাম বন্দরে নেমেই জাহাজের ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ বলেন, সোমালিয়ার দস্যুদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আমরা ২৩ নাবিক দেশে পৌঁছেছি। আমরা সবাই সুস্থ ও অক্ষতভাবে পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছি। এটি আমাদের সরকারের সফলতা।
সরকার কৌশলগতভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এতে আমাদের মুক্তি সহজ হয়েছে। আমরা দস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল বিদেশি নৌ-বাহিনী যেন ভায়োলেন্স না করে। যেন আমাদের কোনো নাবিকের প্রাণ শঙ্কায় না পড়ে। যেন জাহাজের কোনো ক্ষতি না হয়’- বলছিলেন ক্যাপ্টেন রশিদ।
এদিন ২৩ নাবিকের ফেরার খবরে দুপুর থেকেই বন্দরে স্বজনদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এমভি আবদুল্লাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদের মা জ্যোৎস্না বেগম দুপুর থেকে এনসিটি-১ বার্থে অপেক্ষা করছিলেন কলিজার টুকরো ছেলেকে বুকে ফিরে পেতে। মৃত্যুর দুয়ার থেকে দুই মাস পর ছেলে ফিরে এসেছে মায়ের বুকে। ছেলের জন্য বাড়িতে পছন্দের খাবার রান্নাও করে এসেছেন তিনি।
জ্যোৎস্না বেগম বলেন, আল্লাহ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। শুকরিয়া জানাই। ছেলে আমার বুকে ফিরে এসেছে, এর চেয়ে খুশির আর কী আছে।
ঈদের চেয়ে বেশি আনন্দ লাগছে। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় ছিলাম। বিগত দিনগুলো দুশ্চিন্তায় কেটেছে। আল্লাহর কাছে রোজা রেখে দোয়া করেছি। আল্লাহ দোয়া কবুল করেছেন’- বলেন জ্যোৎস্না বেগম।
Posted ৬:২৫ পিএম | মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।