সোমবার ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায় ভুলে গেলে চলবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   144 বার পঠিত

বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায় ভুলে গেলে চলবে না

রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি বাংলাদেশের মাথাব্যথার বড় কারণ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যে সাহায্য–সহযোগিতা পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যায়নি। শুরুতে এর প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর যে আগ্রহ ছিল, ভূরাজনীতির কারণে তাতেও ভাটা পড়েছে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো দূরের কথা, কিছুদিন পরপর নতুন করে তাদের আগমন পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে।

এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সমভিব্যাহারে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠানে যোগদান তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকারের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মুখে ২০১৭ সালে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেই তিন লাখের মতো শরণার্থী এখানে অবস্থান করছিল। ২০১৭ সালের পরও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্য ও আশ্রয় জোগাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যে সহায়তা পাওয়া গেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সাম্প্রতিক কালে সেই সহায়তা আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের এ অবস্থান যে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর ভাষণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সংস্থাটির সহযোগিতা অব্যাহত থাকার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিও সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

এ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হৃদয় স্পর্শ করেছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা রোহিঙ্গারা সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। প্রমিত বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় বললে অনেকেই বুঝতে পারতেন না। তিনি রোহিঙ্গাদের উদ্ধৃত করে বলেছেন, তারা সবাই নিজের দেশে ফিরে যেতে চায়, সেখানে তাদের ঘরবাড়ি ও সম্পদ আছে।

প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব উভয়ই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। রোহিঙ্গারাও নিজ দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। প্রশ্ন হলো, মিয়ানমারে তাদের ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ আছে কি না কিংবা অদূর ভবিষ্যতে সেটা তৈরি হবে কি না। মিয়ানমারে এমন এক সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আছে, যারা বরাবর রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকারই করছে না। মিয়ানমার বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বানকে উপেক্ষা করে আসছে এবং মানবাধিকারকে তোয়াক্কা করছে না। রোহিঙ্গাদের জন্মভূমি রাখাইনের সিংহভাগ এলাকা আরাকান আর্মি দখল করে নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

আমরা আশা করব, জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের পর বিশ্ব সম্প্রদায়ের টনক নড়বে এবং তারা বৃহত্তর শরণার্থী সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে। পশ্চিমা বিশ্ব শুরু থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মোটামুটি ইতিবাচক ভূমিকা নিলেও মিয়ানমারের দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারতের অবস্থান অনুকূল নয়। তারা মানবিক সমস্যার চেয়ে ভূরাজনৈতিক স্বার্থকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে আলোচনা করে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে আলোচনা হতে হবে বহুপক্ষীয়। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘ মহাসচিবও উদ্যোগ নিতে পারেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার উদ্যোগ নিয়েছে, তার প্রতিও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন কাম্য। তাদের উপলব্ধি করতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্ব হওয়ায় বাংলাদেশ কেবল আর্থসামাজিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে না, ভূরাজনৈতিক সংকটও ঘনীভূত হচ্ছে।

Facebook Comments Box

Posted ২:০০ পিএম | রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।