শনিবার ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

ছররা গুলিতে দুই চোখের আলো নিভে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র মিরাজের

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   92 বার পঠিত

ছররা গুলিতে দুই চোখের আলো নিভে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র মিরাজের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে ছররা গুলিতে দুই চোখের আলো নিভে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র আল-মিরাজের। ঢাকায় টানা দুই সপ্তাহের চিকিৎসা শেষে চক্ষুবিশেষজ্ঞরা এমনটিই জানিয়েছেন বলে মিরাজের পরিবার জানিয়েছে। তবে রেটিনা ও কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে অন্তত একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি ফেরার আশার কথাও জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আল-মিরাজ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের কৃষক দম্পতি শুকুর আলী ও বিলকিছ খাতুনের একমাত্র ছেলে। তিনি ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির এমবিএর শিক্ষার্থী। সহপাঠীদের সঙ্গে বাসাবোতে বাসা ভাড়া নিয়ে তিনি থাকতেন। তাঁর একমাত্র বোন রাবেয়া শোভা কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আল-মিরাজের মা বিলকিছ খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, নিজেরা অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। খরচ জোগাতে গিয়ে অনেক ধারদেনা করতে হয়েছে। তাঁর ছেলে এমবিএ পড়ার পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করছিলেন। তাঁকে নিয়ে পরিবারের সবার অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই ছেলে ছররা গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।

বাবা শুকুর আলী বলেন, ‘আমার ছেলেডা সারা জীবনই যেকোনো অন্যায় দেকেচে, সেকেনেই পতিবাদ কইরেচে। ঢাকায় ছাত্রদের আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে চোখ হারিয়েচে। আমরা এদ্দিন নিজিরাই চিকিসসা খরজ করলাম। ঢাকার ডাক্তাররা বলেচে, এ দেশে হবে না। বাইরের দেশে পাঠাব, খরচ নিয়ে চিন্তিত। বুলতি পারচি না কী করব?’

শনিবার দুপুরে চণ্ডীপুর গ্রামে আল-মিরাজদের বাড়িতে গিয়ে নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের ভিড় চোখে পড়ে। ঘরের ভেতরে খাটের ওপর কালো চশমা পরে বসে ছিলেন মিরাজ। ঢাকায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া ও তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা বলে যাচ্ছিলেন সবাইকে। মা হাতে করে দুপুরের খাবার খাওয়ান। বোন ওষুধ দিলেন। বাবা হাত ধরে ঘর থেকে বাইরে ও শৌচাগারে নিয়ে গেলেন। চোখের আলো হারিয়ে মিরাজ এখন অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

আল-মিরাজ বলেন, তিনি ১৯ জুলাই দুপুর থেকে আরামবাগ ও ফকিরাপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে তাঁদের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে পল্টন এলাকায় বিক্ষোভকালে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। এতে তাঁর দুই চোখ, বুক, পেট ও পিঠে মোট ৩৫টি গুলি লাগে। বাঁ চোখের কোনায় একটি এবং ডান চোখে দুটি গুলি লাগে। গুলিতে আহত হওয়ার পর সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নেন। এরপর আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানে টানা ১৬ দিন ধরে চিকিৎসা চলে।

আল–মিরাজ আহত হওয়ার খবরে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাঁর খালাতো বোন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা রেক্সোনা রেবা। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে আল-মিরাজকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। সেখানে শরীর থেকে বুলেট অপসারণ করার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুই চোখ থেকে একটি করে গুলি অপসারণ করেন। অবস্থানগত জটিলতার কারণে ডান চোখের একটি গুলি অপসারণ করা যায়নি।

আল-মিরাজের মামা হাবিবুর রহমান বলেন, মিরাজকে চক্ষুবিশেষজ্ঞ নিয়াজ আবদুর রহমানের কাছে নেওয়া হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁদের জানিয়েছেন, মিরাজ বাঁ চোখে সারা জীবনই ঝাপসা দেখবেন। তবে ডান চোখে রেটিনা ও কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করতে পারলে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড বা ভারতে চিকিৎসা করাতে হবে তাঁর। বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সংগতি মিরাজের পরিবারের নেই। তিনি সরকারি সহযোগিতা চান।

Facebook Comments Box

Posted ৬:৫৪ এএম | সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(173 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।