ডেস্ক রিপোর্ট | শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট | 119 বার পঠিত
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার ছয়দিন আগেই জেনে যান সাইদুল করিম মিন্টু। কিন্তু বিষয়টি তিনি চেপে যান। আনারের আসনে সংসদ সদস্য হতে দীর্ঘদিনের চেষ্টা ছিল ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক এ মেয়রের। পাশের একটি আসনের এমপির মৃত্যুর পর সেখান থেকেও তিনি মনোনয়নপত্র কেনেন।
নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে গ্রেফতার মিন্টু বর্তমানে আট দিনের রিমান্ডে আছেন। এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে মিন্টুর যোগাযোগ, কিলার আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম আসা, তার আগে থেকে আনারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব প্রভৃতি বিষয় সামনে এনে ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র খুঁজছেন গোয়েন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ-৪ সংসদীয় আসন ও সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব লাগে আনারের সঙ্গে। টানা তিনবার আনার ওই আসনটি দখল করে আছেন। এ আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই ছিল মিন্টুর। ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই মারা যাওয়ার পর সেখান থেকেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মিন্টু। কিন্তু তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। সাবেক এ মেয়রের অনেক দিনের ইচ্ছা তিনি এমপি হবেন।
যেভাবে রাজনীতিতে আসেন মিন্টু
ঝিনাইদহে দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। ১৯৭৮ সালে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণ সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৮৯ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক।
১৯৯৭ সালে ছাত্রলীগের সক্রিয় সাবেক কর্মীদের নিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন তিনি। ১৯৯৯-২০০০ সালে জেলার সব সহযোগী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রমিক লীগ গঠনে উদ্যোগী হন। এরপর ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০১১ সালের ১৩ মার্চ ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচনে সাইদুল করিম নির্বাচিত হন মেয়র। আইনগত জটিলতায় নির্বাচন না হওয়ায় এরপর ২০২২ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর তিনি এই পদে ছিলেন।
স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব
ঝিনাইদহের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতার ভাষ্য, কেন্দ্রীয় বেশ কয়েক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় দীর্ঘদিন স্থানীয় আওয়ামী লীগে একক আধিপত্য মিন্টুর। যাকে খুশি সংগঠনে পদ দেন, আবার খেয়ালখুশিমতো বাদও দেন। সংসদ সদস্য আজীম হত্যায় অভিযুক্ত কাজী কামাল গিয়াস আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে এভাবেই জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে বসান। এখন রিমান্ডে থাকা গ্যাস বাবু তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। ঝিনাইদহে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকেও কার্যত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন তিনি।
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের ভাই এনামুল হক ইমান বলেন, ‘গ্রেফতার বাবুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু। এছাড়া হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামন শাহীনেরও ঘনিষ্ঠ তিনি। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি, আনারকে হত্যার পেছনে মিন্টুর হাত থাকতে পারে। গত সংসদ নির্বাচনে আনারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন আব্দুর রশীদ খোকন। খোকনের পক্ষে কাজ করেন সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী।
Posted ১১:৩৮ এএম | শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।