সোমবার ১৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

শ্রমিকের জীবন: অবহেলার আগুনে সস্তা লাকড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   197 বার পঠিত

শ্রমিকের জীবন: অবহেলার আগুনে সস্তা লাকড়ি

মে দিবসের মতো দিনগুলো এলেই কর্তাব্যক্তিরা পুথিপাঠের মতো মুখস্থ বলে যান– শ্রমিকরাই প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রেখেছেন, শ্রমিকরাই অর্থনীতির প্রাণ। কিন্তু এই শ্রমিকেরও যে প্রাণ আছে এবং সেটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, সে বিষয়টি কাগজে-কলমে কিছুটা স্থান পেলেও বাস্তবে তার ছাপ খুঁজে পাওয়া কঠিন। উন্নয়ন, উন্নতির সঙ্গে শ্রমের সম্পর্ক সবাই বোঝেন, কীভাবে যেন শুধু শ্রমিকই বাদ পড়ে যান।

একের পর এক অগ্নিকাণ্ড আর প্রতিরোধহীন অসহায় মৃত্যু– এই-ই কি শ্রমিকের নিয়তি? কিছুদিন পরপর তৈরি পোশাক কারখানা, রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগবে, অসংখ্য শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হবেন। চেয়ারে তোয়ালে বিছিয়ে রাখা বাবুরা হয়তো খাতায় কিছু সংখ্যা টুকে রাখেন, তালিকাটি বড় হয়। কিন্তু শ্রমিক তো শুধু সংখ্যা নয়; একটি জীবন, একটি পরিবার, স্নেহ, ভালোবাসা, ভরসা, নির্ভরতা। সমাজ ও রাষ্ট্রেরই অংশ তারা। কিছুটা ‘ছোট’ চাকরি, কম বেতন, হয়তো শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, শিক্ষিতদের মতো ঠাট নেই– তাই বলে তাঁর প্রাণ সস্তা নয়, মূল্যহীন নয়।

প্রায় ‘নির্বিকারে ঘটতে দেওয়া’ অগ্নিকাণ্ড আর অসংখ্য মানুষের মৃত্যু– সীমাহীন উদাসীনতা আর অবহেলাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। মঙ্গলবার মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়িতে রাসায়নিকের গুদাম ও পার্শ্ববর্তী পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবারও রাসায়নিকের গুদামের আগুন নেভানো যায়নি। সেটির ভেতরে যারা ছিলেন তাদের অবস্থা যে কী, তা এখনও জানা যায়নি। অনুমোদন ছাড়া গড়ে তোলা এ গুদামের মালিক দুর্ঘটনার পর থেকে পলাতক। কতটা ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড যে ফায়ার সার্ভিাসের কর্মীরা পর্যন্ত গুদামটির কাছে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারছেন না।

নিশ্চিত থাকুন, এ অগ্নিকাণ্ড নিয়েও কিছুদিন হইচই হবে। নির্বাচন, পিআর, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ– নানা ডামাডোলের মধ্যেও এ অগ্নিকাণ্ড নিয়ে অনেক কথামালা শোনা যাবে, উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, পরিদর্শন, সুপারিশের বান ডেকে যাবে। আর একটা জিনিস সমান্তরালে ঘটতে থাকবে, সেটি হলো দায় ঠেলাঠেলি। এক কর্তৃপক্ষ আরেক কর্তৃপক্ষের ওপর দায় চাপাবে, কার কারণে কে সফল হতে পারছে না আকার ইঙ্গিতে তেমনটি বলবে। কিন্তু সব কর্তৃপক্ষের ওপরে যে কর্তৃপক্ষ– সরকার মহাশয়, সেটি যে কী করে কে জানে! এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা পর্যন্ত সহনীয় কিন্তু জবাবদিহি আদায় করতে চাওয়া অতি দুঃসাহসের ব্যাপার। নইলে পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়িহাট্টা, অভিজাত বনানীর বাণিজ্যিক ভবন এফআর টাওয়ার, জমজমাট বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের রেস্তোরাঁ পেরিয়ে রূপনগরের পোশাক কারখানায় ১৬টি তাজা প্রাণ এভাবে ঝরে যেত না।

২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন নিহত হন। সড়কে খুঁটিতে থাকা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ছড়ায় পাশের রাসায়নিকের ড্রাম ভর্তি গুদামে। গুদামের পাশের ভবনে চলছিল বিয়ের আয়োজন। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অগ্নিদুর্ঘটনার পর নানা তোড়জোড় দেখা যায়। ঘনবসতির পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নিতে পরিকল্পনা হয়। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে জায়গা নির্ধারণ করে কাজও শুরু হয়। দীর্ঘ ১৫টি বছরেও সেই কাজ পুরো শেষ হয়নি। অজুহাত সেই একই– ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রশাসনিক জটিলতা। আর কত আগুনে যে জটিলতার জট খুলবে আর প্রশাসন গতি পাবে বলা মুশকিল। ঘিঞ্জি পুরান ঢাকায় ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো, ফায়ার সার্ভিসে বিশেষভাবে তৈরি ছোট ফায়ার ট্রাক যুক্ত করাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এগুলোর কিছুটা আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাকমতো বাস্তবায়ন হলে এত বড় দুর্ঘটনার ৯ বছর পর ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় আরেক রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনকে প্রাণ হারাতে হতো না।

এগুলো বড় ঘটনা। তাই আলোচনাও বেশি। সংবাদমাধ্যম অনেকদিন পর্যন্ত এসব ‘বড় ইভেন্ট’ নিয়ে লেগে থাকে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের কাজ ‘শেষ দেখে নেওয়া’ নয়, তাই তাকেও এক পর্যায়ে থেমে যেতে হয়। এসব মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা কিংবা অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের শেষ দেখতে পারে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কিন্তু নাগরিকের ভোটের যতটা মূল্য, প্রাণের ততটা নয়।

রূপনগরের অগ্নিকাণ্ডের পর ওইদিন রাতে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বারবার নির্দেশনার পরও রাসায়নিক গুদাম স্থাপনে নিরাপত্তা সতর্কতা মানা হচ্ছে না। ভবনটির অবকাঠামো দেখে মনে হচ্ছে নির্মাণে কোনো বিল্ডিং কোড মানা হয়নি।’ আজ বুধবার বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দলের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি (সমকাল, ১৫ অক্টোবর ২০২৫)।

পুরান ঢাকায় আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম না রাখার বিষয়ে কম প্রতিবেদন দেননি বিশেষজ্ঞরা। সেখান থেকে সেগুলো সরানো তো যায়ইনি, উল্টো দেখা যাচ্ছে এসব গুদাম রাজধানীর বিভিন্ন জনবসতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, রূপনগরে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা কী বলবেন, তার চেয়ে জরুরি তাদের কথায় গুরুত্ব দেওয়া হবে কিনা।

Facebook Comments Box

Posted ৫:১৪ পিএম | বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

মোদির নতুন চাল
(318 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।