| বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২ | প্রিন্ট | 115 বার পঠিত
পূর্ব সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর দেশটিতে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি ফের আলোচনায়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানের ইসলামিক রেভুল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) মদদপুষ্ট গোষ্ঠীদের অবস্থানে চালানো হয়েছে এ হামলা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াশিংটন সিরিয়ায় তার যে ব্যাপক উপস্থিতি ছিল তা কমিয়ে এনেছে। কিন্তু তবুও সেখানে কিছু এলাকায় সীমিত সংখ্যক সেনা রয়ে গেছে আইএসআইএলের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ইরানের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে।
বুধবারের হামলায় মিলল তারই প্রমাণ। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র কর্নেল জো বুচিনো বলেন, এ হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সুরক্ষায় জরুরি ছিল। এটি ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ওপর চালানো হামলার প্রতিশোধ। যা চালিয়েছিল ইরানের মদদপুষ্ট সশস্ত্রগোষ্ঠী।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সম্পৃক্ত হলো, এখন সেখানে দেশটির সেনাদের অবস্থান কি এবং তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে।
সিরিয়ায় কখন ঢুকল যুক্তরাষ্ট্র?
সিরিয়ায় বিরোধীদের প্রতি সমর্থন থাকা সত্ত্বেও দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রথম সামরিক সম্পৃক্ততা ছিল আইএসআইএলের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট সিরিয়ায় আইএসআইএলের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে। এটি করা হয়েছে ইরাকে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবেই। এ জোটে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় দুই হাজার সেনা দিয়েছে। আর ২০১৫ সালের অক্টোবরে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক্স ফোর্সেস (এসডিএফ) গঠনে ছিল ওয়াশিংটনের সমর্থন। যে সংগঠনটি মূলত গঠিত হয়েছে কুর্দিশ পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) মিলিশিয়াদের দ্বারা।
যুক্তরাষ্ট্র কি সিরিয়ার সরকারকে আক্রমণ করেছে?
সিরিয়ার সরকারের ওপর প্রথমবার সরাসরি হামলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে। যদিও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করলে পরিণতি ভোগ করার হুমকি আগেই দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
ইদলিব প্রদেশে রাসায়নিক হামলায় ৮৮ জন নিহত হওয়ার পর যেখান থেকে এ হামলা হয়েছে এমন সম্ভাব্য ঘাঁটিতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালের এপ্রিলে। এর পর বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুমা শহরে রাসায়নিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় ২০১৮ সালের এপ্রিলে ফের হামলা চালানো হয়। আর এসডিএফের বাইরে সিরিয়ায় গোপনে বিরোধীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যদিও ২০১৭ সালের পর তা কমানো হয়েছে। এখন তা আইএসআইএলের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইরত যোদ্ধাদের মধ্যে সীমিত।
সিরিয়ায় মার্কিন ভূমিকার বিরুদ্ধে কি কোনো প্রতিবাদ হয়েছে?
সিরিয়ার সরকার নিয়মিতভাবে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার বিরোধিতা করে আসছে। একই সঙ্গে দাবি, যেন যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। বাশার আল আসাদের কট্টর সমর্থক রাশিয়ার দাবিও একই। তারাও চায় দেশটি থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের।
এদিকে তুর্কিয়েও তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আঙ্কারার দাবি, ওয়াইপিজির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরোধী তারা।
ওয়াইপিজিকে তুর্কিয়ে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সিরিয়ার শাখা হিসেবে বিবেচনা করে। আর এ পিকেকে গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুর্কিয়ে।
ওয়াইপিজির বিরুদ্ধে উত্তর সিরিয়ায় তুর্কিয়ের সামরিক অভিযানের ঘোষণার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র কিছু সেনা সিরিয়া থেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা সিরিয়ার কোথায় অবস্থান করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সেনা এখনও উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় (হাসাকা ও রাক্কা প্রদেশ) অবস্থান করছে। ২০১৬ সাল থেকে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা যেখানে ইরাক ও জর্দান মিলেছে সেখানকার আল-তানফ ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে। যার ৫৫ কিলোমিটার (৩৪ মাইল) এলাকাকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘ডিকনফ্লিকেশন জোন’ হিসেবে। যেখানে মার্কিন ও মিত্র বাহিনী টহল দিচ্ছে। আল-তানফ থেকেও সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে রাশিয়া। সিরিয়ায় সম্ভবত এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ৯০০ সেনা রয়েছে।
সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যগুলো কি কি?
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক হোয়াইট হাউসের সমন্বয়ক ব্রেট মেকগার্ক গত বছর বলেছিলেন, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের চারটি প্রধান লক্ষ্য রয়েছে। এগুলো হলো— সেখানে সহিংসতা কমানো, আইএসআইএলের ওপর সামরিক চাপ বজায় রাখা, সিরিয়ার মানবিক সংকট মোকাবিলা ও ইসরায়েলকে সমর্থন।
যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় আইএসআইএল ও আল কায়েদার নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এসব হামলায় জঙ্গি ছাড়াও নিহত হয়েছেন বেসামরিক নাগরিকরাও।
সিরিয়ার বিশেষজ্ঞ মজাহেম আলসালুম বলেন, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক লক্ষ্য হচ্ছে—আইএসকে পরাজিত করা এবং যেসব এলাকা মুক্ত করা হয়েছে সেখানে যেন আইএস ফিরতে না পারে তা নিশ্চিত করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের উপস্থিতি ইরানের সামরিক ও চোরাচালন সরবরাহ লাইনকে মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ। যদি আল তানফ ইরানের হাতে চলে যায় তবে তেহরান, বাগদাদ ও দামেস্কের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের কি সিরিয়ায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে?
ইরান ও আইএসআইএলকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সিরিয়ায় নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখার বিষয়ে জোর দিয়ে আসছে। যদিও ট্রাম্প সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবুও সিরিয়ায় রয়ে গেছে কিছু মার্কিন সেনা।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা গত বছর আলজাজিরাকে বলেছিলেন, এসডিএফকে ‘নিশ্চয়তা’ দেওয়া হয়েছে যে, ওয়াশিংটন সিরিয়া থেকে আফগানিস্তানের মতো হুট করে সেনা প্রত্যাহার করবে না।
আলসালুম বলেন, উত্তর-পূর্ব সিরিয়া ও আল-তানফ ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের উপস্থিতিতিকে ভিন্নভাবে দেখতে হবে। আল-তানফ থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয় তখনই আলোচনার জন্য টেবিলে উঠবে যখন হয়তো পরমাণু চুক্তি সই হবে অথবা সিরিয়ার হাতে জিম্মি থাকা মার্কিন সেনাদের বিষয়ে একটি চুক্তি হবে।
‘আর উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হতে পারে যদি রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় আসে— যদি ট্রাম্প ফেরেন’, যোগ করেন তিনি
সূত্র-আল জাজিরা
Posted ৪:১৬ পিএম | বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।