নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 115 বার পঠিত
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধ যেভাবে ঘটছে, তাতে নাগরিকেরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে ছয় মাসের মাথায় এসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটা নাজুক হবে, কেউ ভাবতে পারেননি।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে তাঁর কাছে থাকা ২০০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। একই দিন সাভারের আশুলিয়ার বাসায় একজন অভিনেতা ও তাঁর স্ত্রীকে গুলি করে পালিয়ে যায় ডাকাতেরা।
ধর্ষণের প্রতিবাদে রোববার আসাদগেটে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে সমাবেশ-মিছিল করেন।
রোববার দিবাগত রাত তিনটায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পরদিন আইজিপি বাহারুল আলম ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘রাতে ছিনতাই বেড়েছে। দিনেও ছিনতাই বেড়েছে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে আর আইজিপি বললেন, দিনে-রাতে ছিনতাই বেড়েছে। নাগরিকেরা কার কথায় আস্থা রাখবেন?
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসররা যদি দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যায়, তাহলে সরকার তাদের ধরছে না কেন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অপারেশন ডেভিল হান্ট চলার পরও ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিও বেড়ে চলেছে, এর ব্যাখ্যা কী? এই অভিযান কি তবে লোকদেখানো।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যখন সবকিছুর দায় আওয়ামী লীগের দোসরদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, তখন বাস্তব অবস্থা কী? বাস্তব অবস্থা হলো, হাটে ঘোষণা দিয়ে একটি দলের নেতা-কর্মীরা তাঁদেরকে খাজনা দেওয়ার জন্য দোকানদারদের নির্দেশ দিয়েছেন, সড়কের ওপর প্রকাশ্যে দম্পতিকে কোপাচ্ছে এলাকার মাস্তানেরা, চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, নারীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আনসার এমনকি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। তারপরও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমছে না কেন, সে প্রশ্নের উত্তর কে দেবে।
প্রথমেই স্বীকার করতে হবে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল, তা নেওয়া হয়নি। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বহু শীর্ষ সন্ত্রাসী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের কাছ থেকে বহু অস্ত্র ও গোলাবারুদও খোয়া যায়। এসব অপরাধীকে না ধরে এবং খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না করে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি আশা করা যায় না। অন্যদিকে ক্ষমতার পালাবদলের পর পুলিশ বাহিনীর ভেঙে পড়া মনোবল পুনরুদ্ধারের কাজটিও সরকার যথাযথভাবে করতে পারেনি।
chornorinapak dorbarshorif
সর্বশেষ
রাজনীতি
বাংলাদেশ
অপরাধ
বিশ্ব
বাণিজ্য
মতামত
খেলা
বিনোদন
চাকরি
জীবনযাপন
Eng
By using this site, you agree to our Privacy Policy.
OK
ভিজ্যুয়াল স্টোরি
ভিডিও
ভিডিও
সম্পাদকীয়
আইনশৃঙ্খলার অবনতি
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায় এড়াবেন কীভাবে
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ১৪
ফলো করুন
সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধ যেভাবে ঘটছে, তাতে নাগরিকেরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে ছয় মাসের মাথায় এসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটা নাজুক হবে, কেউ ভাবতে পারেননি।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে তাঁর কাছে থাকা ২০০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। একই দিন সাভারের আশুলিয়ার বাসায় একজন অভিনেতা ও তাঁর স্ত্রীকে গুলি করে পালিয়ে যায় ডাকাতেরা।
ধর্ষণের প্রতিবাদে রোববার আসাদগেটে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে সমাবেশ-মিছিল করেন।
রোববার দিবাগত রাত তিনটায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পরদিন আইজিপি বাহারুল আলম ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘রাতে ছিনতাই বেড়েছে। দিনেও ছিনতাই বেড়েছে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে আর আইজিপি বললেন, দিনে-রাতে ছিনতাই বেড়েছে। নাগরিকেরা কার কথায় আস্থা রাখবেন?
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসররা যদি দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যায়, তাহলে সরকার তাদের ধরছে না কেন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অপারেশন ডেভিল হান্ট চলার পরও ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিও বেড়ে চলেছে, এর ব্যাখ্যা কী? এই অভিযান কি তবে লোকদেখানো?
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যখন সবকিছুর দায় আওয়ামী লীগের দোসরদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, তখন বাস্তব অবস্থা কী? বাস্তব অবস্থা হলো, হাটে ঘোষণা দিয়ে একটি দলের নেতা-কর্মীরা তাঁদেরকে খাজনা দেওয়ার জন্য দোকানদারদের নির্দেশ দিয়েছেন, সড়কের ওপর প্রকাশ্যে দম্পতিকে কোপাচ্ছে এলাকার মাস্তানেরা, চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, নারীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আনসার এমনকি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। তারপরও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমছে না কেন, সে প্রশ্নের উত্তর কে দেবে।
প্রথমেই স্বীকার করতে হবে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল, তা নেওয়া হয়নি। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বহু শীর্ষ সন্ত্রাসী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের কাছ থেকে বহু অস্ত্র ও গোলাবারুদও খোয়া যায়। এসব অপরাধীকে না ধরে এবং খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না করে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি আশা করা যায় না। অন্যদিকে ক্ষমতার পালাবদলের পর পুলিশ বাহিনীর ভেঙে পড়া মনোবল পুনরুদ্ধারের কাজটিও সরকার যথাযথভাবে করতে পারেনি।
অতীতে রাজনৈতিক সরকারগুলো যেকোনো অভিযান চালানোর সময় বিরোধী দলকে লক্ষ্যবস্তু করত। অপরাধী ধরা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা। কিন্তু এই সরকারের তো রাজনৈতিক অভিলাষ থাকার কথা নয়। গাজীপুরের যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে, সেটা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে।
এদিকে সোমবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ‘টের পাওয়ার’ মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করতে চাই, সরকার দল-মতনির্বিশেষে অপরাধীদের ধরবে। আওয়ামী লীগের দোসররা অপরাধ করলে সরকার অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এর অর্থ এই নয় যে বাইরের অপরাধীরা রেহাই পাবে। এত অভিযানের পর নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এড়াতে পারেন না।
Posted ২:৫৭ পিএম | মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।