নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট | 116 বার পঠিত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নূতন ভর্তির সকল শিক্ষার্থীকে আবাসিক ছাত্রাবাসে আসনের ব্যবস্থা করিয়া দিয়া যেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে, উহা সকল উচ্চশিক্ষাঙ্গনের জন্য অনুসরণযোগ্য। বস্তুত পূর্ণাঙ্গ আবাসিক সুবিধা লইয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হইলেও দেড় যুগব্যাপী ঐ পরিচয়ের প্রতি যদ্রূপ অবিচার করিয়া আসিতেছিল, তদ্রূপ দৃষ্টান্ত অন্যত্রও রহিয়াছে। ফলত, জাহাঙ্গীরনগরের ন্যায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীগণকে বৎসরের পর বৎসর গাদাগাদি করিয়া গণরুমে বাস করিতে হইয়াছে। মূলত রাজনৈতিক ব্লকের নামে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন জোরপূর্বক কক্ষ দখল; ছাত্রত্ব সমাপ্ত হইলেও বৎসরের পর বৎসর অবস্থানসহ বিভিন্ন কারণে আবাসিক হলে কৃত্রিম আসন সংকট লাগিয়াই থাকিত। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেইভাবে অবৈধ আসন ও গণরুম পুনরুদ্ধার করিয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দিয়াছে, উহা নিঃসন্দেহে স্বস্তিকর। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম আরম্ভ হইবার পূর্বে ইহা উপহার বলিয়া বিবেচিত হইবে।
আমরা মনে করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে, উহা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুসরণ করা কঠিন হইলেও অসম্ভব নহে। বিশেষ করিয়া এই সময়ে যখন কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকিবার কারণে সংশ্লিষ্ট দলের ছাত্র সংগঠন দ্বারা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ সীমিত। আমরা অবশ্য ইহাও মনে করি, কেবল এই সময়ের জন্যই নহে; রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হইলেও যাহাতে পূর্বের মতো দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত না হয়, সেই ব্যাপারে দলগুলিকে অঙ্গীকার করিতে হইবে। তাহা না হইলে ইতোপূর্বে আবাসিক হলগুলির নিয়ন্ত্রণ লইয়া এতদিন ক্যাম্পাসগুলিতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন যেইভাবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করিয়া রাখিয়াছিল, সেই বেদনাদায়ক ধারাই চলিতে থাকিবে।
আমরা দেখিয়াছি, গ্রাম হইতে উঠিয়া আসা মেধাবী শিক্ষার্থীরা কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইয়া যখনই আবাসিক হলে উঠিতে চাহিত, তখনই হলগুলিতে প্রশাসন ক্ষমতায় না থাকা এবং ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণের কারণে ছাত্রনেতাদের পশ্চাতেই উহাদের ঘুরিতে হইয়াছে। এই আসনপ্রাপ্তি এবং তাহা রক্ষাকল্পে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যদ্রূপ রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করিতে হইত; উপরন্তু চুন পানচ্যুত হইলেই গেস্টরুমে লইয়া তাহাদের উপর নির্যাতন চালানো হইত। এমনকি ছাত্রনেতাদের নিপীড়নে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থী হতাহতের অঘটনও ঘটিয়াছে।
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পরিবর্তনের ধারা সূচিত হইয়াছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে উপাচার্যসহ বিভিন্ন পদে অধিকতর যোগ্যদের নিয়োগদানের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা লক্ষণীয়। আমরা প্রত্যাশা করি, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলগুলির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করিবে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিকে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখিবে।
অস্বীকার করা যাইবে না, সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সক্ষমতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় নহে, যেইখানে বিশ্ববিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক চরিত্র লইয়াই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। তবে অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিঃসন্দেহে তাহার আবাসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ধীরে ধীরে যতটা সম্ভব আবাসিকে রূপান্তরকরণে সচেষ্ট হইবে। তবে এই মুহূর্তে অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নূতন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও পারিবারিক অবস্থার আলোকে আসন বণ্টন করিতে পারে। এই ক্ষেত্রে গ্রাম হইতে আসা শিক্ষার্থীরা উপকৃত হইবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।
Posted ২:১৮ পিএম | সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।