ডেস্ক রিপোর্ট | মঙ্গলবার, ০৪ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট | 52 বার পঠিত
সর্বজনীন পেনশনের আলোচিত ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনের পর এবার কর্মবিরতি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি করেন তারা। শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মসূচিতে অংশ নেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এতে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রত্যয় স্কিম বাতিল না করা হলে টানা কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা।
শিক্ষক নেতারা বলছেন, সরকারের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। সরকারের এ উদ্যোগ সর্বসাধারণের জন্য ভালো। তাদের আপত্তি হলো—‘প্রত্যয়’ নামে নতুন যে স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি নিয়েই তাদের যত অনুযোগ। নতুন এ স্কিমে অবসরের পর এককালীন অর্থ পাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বৈষম্যের শিকার হতে হবে। এজন্য তারা এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে চান না। আগের নিয়মে পেনশন পেতে চান।
তবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘প্রত্যয়’ স্কিমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরের পর মাসিক ভাতা পাবেন। আগে প্রভিডেন্ট ফান্ডে সংস্থার দেওয়া অর্থ কর্মচারীর ‘কন্ট্রিবিউশন’—এর চেয়ে কম হলেও প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠানকে কর্মীর সমপরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে। এমন শর্ত থাকায় পেনশনার আরও বেশি লাভবান হবেন।
প্রত্যয় স্কিমের বিরোধিতা কেন?
দেশে গত বছরের ১৭ আগস্ট প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করে সরকার। শুরুর দিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সব পেশাজীবী সংগঠন এটিকে সাধুবাদ জানিয়েছিল। সেসময় এ নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী ঘরানার শিক্ষক নেতারাও। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতা, এমনকি উপাচার্যরাও এটিকে যুগান্তকারী উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেন। উচ্ছ্বাস জানিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন কলামও।
চলতি বছরের মার্চে সর্বজনীন পেনশনে নতুন ‘প্রত্যয় স্কিম’ যুক্ত করে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে প্রত্যয় স্কিমের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। ২০ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন এ স্কিমের বিষয়ে বিস্তারিত জানায়। এরপর থেকেই মূলত আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন শিক্ষকরা। কোনোভাবেই শিক্ষকরা এ পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে চান না। তাই পেনশন স্কিমের আওতার বাইরে থাকতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকরা।
প্রত্যয় স্কিম নিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী— আগামী ১ জুলাই বা তার পরে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার চাকরিতে যারা যোগদান করবেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় প্রত্যয় স্কিমে যুক্ত করা হবে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
শিক্ষক নেতারা জানান, বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার। কর্মকর্তা রয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি। কর্মচারীসহ সবমিলিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়াবে চার লাখ। অথচ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের ক্ষেত্রে আগের নিয়মেই পেনশন ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন। অধ্যাপক নিজামুল হক বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিমের যে রূপরেখায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন যোগদান করা শিক্ষকরা এককালীন আর্থিক সুবিধা পাবেন কি না, সেটা স্পষ্ট নয়। পেনশন ও এককালীন সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত বলাও হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা সর্বজনীন পেনশন। তাহলে এটা তো সবার জন্যই প্রযোজ্য হওয়া উচিত। সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে বৈষম্য ও অসন্তোষ বাড়বে। অবসরকালীন নিশ্চয়তা একই রকম না থাকলে আগামীতে মেধাবীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসতে নিরুৎসাহিত হবেন। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, প্রত্যয় স্কিম চরম বৈষম্যমূলক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন দিয়েছেন। নিজস্ব বেতন কাঠামো, নিজস্ব পেনশন সিস্টেম; সব ক্ষেত্রেই স্বায়ত্তশাসন দিয়েছেন। সুতরাং নতুন এ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আমরা যুক্ত হতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের বেতন কম, তেমন সুযোগ-সুবিধাও নেই। সর্বশেষ যে পেনশন, সেটাও যদি অভিন্ন নীতিমালায় চলে যায়, সবার জন্য একই হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে মেধাবীরা কেন আসবে? স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষকবান্ধব নীতি প্রয়োজন। আশা করি, সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আগের নিয়মে পেনশন চালু রাখবে।
তিনি বলেন, প্রত্যয় স্কিমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যৌথ কন্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে যে টাকা মাসিক ভিত্তিতে জমা হবে, তার মূল টাকা ও মুনাফার ওপর অবসরে গেলে মাসে মাসে পেনশন দেওয়া হবে। এ বিষয়ে শিক্ষকরা যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান, আমরা জানাতে প্রস্তুত। তারা তো জানতেই আগ্রহী নয়।
Posted ৮:২৫ এএম | মঙ্গলবার, ০৪ জুন ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।