| বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট | 22 বার পঠিত
মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়েই জমে উঠেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাবেন বলে অনেকে ধারণা করলেও তাকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখিই হতে হচ্ছে।
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গাজীপুরের বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহনুর ইসলাম রনি। রনি বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় যুববিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে। জাহাঙ্গীর ও রনি যদি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকেন, তাহলে গাজীপুরে ভোট জমজমাট হয়ে উঠবে তা নিশ্চিত।
এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নিজে মাঠে থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার কোনো পথ নেই, যদি না আমাকে সরিয়ে দেয়া না হয়। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার জন্য।’
বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) জাহাঙ্গীর আলমসহ মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দেন আটজন প্রার্থী। এর আগে বুধবার মেয়র পদে আরও চারজন প্রার্থী মনোননয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
রিটার্নিং কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯০ জন ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে মনোনয়ন জমা পড়েছে ৩৮৪টি।
মেয়র পদে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আজমত উল্লা খান, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন, জাতীয় পার্টি মনোনীত নিয়াজ উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির মো. রাজু আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল, স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশীদ, মোহাম্মদ অলিউর রহমান ও আবুল হোসেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। পরে কয়েকজন নেতা-কর্মী নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে আচরণবিধি ভঙ্গ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের বাইরে গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নির্বাচন আমাদের অস্তিত্বের নির্বাচন, দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গঠন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ার নির্বাচন।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘গাজীপুর নগরবাসী চায় একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সিটি করপোরেশন গঠিত হোক।’ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সব নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন জানিয়ে আজমত উল্লা বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।’
অন্যদিকে বিকেলে জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে এলাকার সাধারণ মানুষ এবং জাহাঙ্গীর আলম তার মায়ের পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী ও নৌকা আমার কাছে একটা শ্রদ্ধার জায়গা। আমি ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, যিনি এই শহরকে ধ্বংস করবেন তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। আমার মা বলেছেন, শহর রক্ষা করতে যা যা প্রয়োজন তা তা করো। সে হিসেবে মায়ের দোয়া ও মায়ের সহযোগিতা নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমি ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ দিয়ে দেব কে খারাপ আর কে ভালো, কে অন্যায়কারী, কে সৎ। সত্যকে প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠিত করতে মা ও ছেলে মিলে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি আমার শহর রক্ষা করতে চাই। শহরের মানুষ আমাকে পাঁচ বছরের জন্য ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। আমি শহরের মানুষের কাছে একটা পরীক্ষা দিতে চাই। নির্বাচন থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। যদি না আমাকে সরিয়ে দেয়া না হয়। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার জন্য। আমি এই শহরের মানুষকে নিয়ে লড়তে চাই।’
তিনি বলেন, ‘কালকের পর হয়তো আমার পায়ে শিকল পরাতে পারে। আমাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। আমাকে গুম করতে পারে। আমি দেশবাসী ও নগরবাসীকে বলে যাই, যদি আমার মৃত্যু হয় আপনারা বিশ্বাস করবেন আমি এই শহর রক্ষা করতে গিয়ে যা যা ভালো কাজ আছে আমি সব করেছি।’
বৃহস্পতিবার নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেন ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহনুর ইসলাম রনি। রনি বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় যুববিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে। নুরুল ইসলাম সরকার গাজীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বর্তমানে কারাগারে।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর রনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান। আমার চাচা, বাবা সবাই বিএনপি করেন। আমি ইতিমধ্যে অনেকগুলো উঠোন বৈঠক করেছি। তৃণমূল কর্মীদের সমর্থন পেয়েছি। যার কারণে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
বিএনপির পক্ষ থেকে সমর্থন বা বাধা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি হয়তো নির্বাচনে আসছে না কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের বিএনপির সমর্থন আমার প্রতি রয়েছে। আমি যেহেতু বিএনপি পরিবারের সন্তান, এ জন্য বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, আমার সঙ্গে সবাই থাকবেন। শুধু বিএনপি নয়, রাজনৈতিক দল-মত নির্বিশেষে সবাই আমাকে সমর্থন করবেন। আমার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা প্রার্থীর সঙ্গে।’
আচরণবিধি লঙ্ঘন: দুই মেয়র ও এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে শোকজ
আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে দুজন মেয়র প্রার্থী এবং একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। শোকজ নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী নিয়াজ উদ্দিন ও নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সনজিৎ মল্লিক।
নোটিশে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে প্রচার-প্রচারণাসংক্রান্ত সব পোস্টার, বিলবোর্ড নিজ খরচে অপসারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া ওই বিধিমালার অধীনে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জবাব দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সুশৃঙ্খল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
আগামী ৩০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৮ মে। প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ মে এবং ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে। এবার সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৪ হাজার।
Posted ১১:২৮ পিএম | বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।