বুধবার ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির আইন বাতিল হোক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   124 বার পঠিত

শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির আইন বাতিল হোক

জাতীয় সংসদের সদস্যরা জনগণের সেবক বলে দাবি করলেও নিজেদের ‘সেবা’ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন বেশি। দু–একজন ব্যতিক্রম বাদে প্রায় সব সংসদ সদস্যই শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে কোটি কোটি টাকা দামের গাড়ির মালিক হয়েছেন। আবার ব্যবসায়ীদের কাছে অনেক বেশি দামে সেই গাড়ি বিক্রি করে ফাও কামিয়েছেন, এ রকম নজিরও কম নয়।

আগের সংসদের সদস্যরা তো দেদার শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়েছেনই। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি যে বিরোধী দলহীন আমি–ডামি নির্বাচন হলো, সেই সংসদের সদস্যরাও শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ৫১ জন সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির উদ্যোগ নেন ও ঋণপত্র খোলেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের গাড়ি দেশে এসেছে। ছয়জন গাড়ি খালাস করতে সমর্থ হয়েছেন। চারজনের গাড়ি খালাস করার আগেই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ফলে তাঁদের গাড়ি আটকে দিয়েছে কাস্টমস।

শুল্কসহ সর্বোচ্চ ১২ কোটি টাকা দামের জাপানের টয়োটা ব্র্যান্ডের ল্যান্ড ক্রুজার এফজেএ ৩০০ ডব্লিউ মডেলের গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় এনেছেন সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক, যিনি ব্যারিস্টার সুমন নামে বেশি পরিচিত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি গাড়ি এনেছেন মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তিনি গাড়ি এনেছেন সিঙ্গাপুরের টয়োটা টুশো এশিয়া প্যাসিফিক প্রাইভেট লিমিটেড থেকে।

উল্লিখিত ছয়জন যেসব গাড়ি আমদানি করেছেন, তার বাজারমূল্য ৯ থেকে ১২ কোটি টাকা। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে আমদানি করা গাড়ির বাজারমূল্য ছিল ৬ থেকে ১২ কোটি টাকা। তাঁরাই হলেন গরিব দেশের ‘গাড়িবিলাসী’ জনপ্রতিনিধি!

সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা প্রথম চালু হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে চতুর্থ জাতীয় সংসদে। পরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পালাক্রমে ক্ষমতায় এসে অনেক আইন পরিবর্তন করলেও সংসদ সদস্যদের এই অন্যায় সুবিধা বহাল রাখে।

সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধার কথা বলে। কিন্তু অনেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় দামি গাড়ি এনে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা লাভ করেছেন। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। অন্যান্য আইন ও নীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও শুল্ক সুবিধায় গাড়ি আনার বিষয়ে আশ্চর্য ঐকমত্য ছিল।

২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে অন্তত ৫৭৬টি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেন সংসদ সদস্যরা। এসব গাড়ির আমদানিমূল্য (অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ধরে) ৪২৮ কোটি টাকা। গাড়িগুলো সাধারণ মানুষের জন্য আমদানি করা হলে শুল্ক–কর দিতে হতো সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।

সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক। এ নিয়ে প্রথম আলোয় একাধিকবার সম্পাদকীয় লিখে প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। কিন্তু জনগণের কাছে ন্যূনতম দায়বদ্ধতা না থাকায় কোনো সরকারই তা আমলে নেয়নি।

কোনো গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের প্রতিনিধিদের জন্য এ রকম অনৈতিক সুবিধা থাকা উচিত নয়। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যেসব সংসদ সদস্য ইতিমধ্যে গাড়ি আমদানি করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে আইনানুযায়ী শুল্ক আদায় করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এই সুবিধা না পান, সেই লক্ষ্যে আইন বাতিল করা জরুরি বলে মনে করি।

Facebook Comments Box

Posted ৮:১৮ এএম | সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।