নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 132 বার পঠিত
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদের বাজার। পরিবার-পরিজনের জন্য নতুন জামা কাপড় কিনতে ছোট-বড় মার্কেট, বিভিন্ন ব্রান্ডের আউটলেট, শপিং মলে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। পিছিয়ে নেই ফুটপাতের বেচাকেনাও। স্বল্প দামে পছন্দের পোশাক কিনতে সেখানেও দেখা গেছে মানুষের ভিড়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রোজার প্রথম থেকেই কেনাকাটা শুরু করেছেন ক্রেতারা। আর বেচাবিক্রিতে সন্তুষ্ট ব্যবসায়ীরাও।
রাজধানীর মিরপুরের ইসিবি চত্বর, বসুন্ধরা শপিং সেন্টার, মৌচাক, বেইলি রোড, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোতে রোজার সময় বিকেলে কিংবা ইফতারের পর থেকে মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার জন্য মানুষজনের উপস্থিতি দেখা গেলেও এ বছর সকাল থেকেই মানুষ মার্কেটে ভিড় করছেন। এতে করে আগে ভাগেই ঈদের বাজারে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদ উপলক্ষে শপিংমলগুলোতে দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের অফার।
পোশাকের দোকানগুলোতে পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি, টি-শার্ট, নারীদের শাড়ি, থ্রিপিস, ওয়ান পিস, কুর্তা এবং বাচ্চা ও শিশুদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, গেঞ্জিসেটসহ আধুনিক ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী এবং গহনার দোকানগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন।
ঈদের কেনাকাটার বিষয়ে দোকানদারদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এ বছর ঈদের কেনাকাটা আগেভাগেই শুরু হয়েছে। দিন যাচ্ছে আর বাড়ছে ভিড়। এবার নারী, পুরুষ ও শিশুর জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের নতুন পোশাকগুলো বিক্রি হচ্ছে ব্যাপকহারে। এছাড়াও সিল্ক, জামদানি, কাতান, কাশ্মীরি কাজ করা শাড়ি, সুতি শাড়ি ও লেহেঙ্গা, পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, টি-শার্ট এবং শিশুদের জন্য নানা রঙের আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বেশি। গরমকে প্রাধান্য দিয়ে ক্রেতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুতি কাপড় কিনছেন।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার আড়ং-এর বিক্রয়কর্মী রাফিউল হাসান বাসস’কে বলেছেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার আগে থেকেই কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় দেখতে পাচ্ছি। সকালে আউটলেট খোলার পর থেকে প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে। দুপুরের পর থেকে সেটি আরো বেড়ে যাচ্ছে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, ওয়ান পিস ও বাচ্চাদের পোশাকের পাশাপাশি বিভিন্ন কসমেটিকস আইটেম, গহনা, লেডিস ব্যাগ-পার্টস অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে।
এলিফ্যান্ড রোডের ইজি ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী আরিফুল ইসলাম বলেছেন, এই বছর সকাল থেকেই ক্রেতারা মার্কেটগুলোতে ভীড় করছেন। গত কয়েকদিন ধরে দুপুরে প্রচন্ড গরম পড়ছে, তারপরও মানুষের ভীড় লেগেই আছে। ঈদ উপলক্ষ্যে সুতি ও আরামদায়ক কাপড়ের শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্টের নতুন কালেকশনের চাহিদা অনেক বেশি।
নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট এবং নূরজাহান ম্যানশনে মহিলা ক্রেতার পরিমাণ বেশি দেখা গেছে। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট এবং গ্লোব শপিং সেন্টারের শার্ট-প্যান্টের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি ছিল তরুণ ক্রেতাদের।
এছাড়াও সাইন্সল্যাবের বাইতুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে পাঞ্জাবি-পায়জামার দোকান এবং এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের বিক্রেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, অন্য বছর সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যাপক বেচাকেনা হয়েছে। এবার অধিকাংশ ক্রেতারাই দিনের বেলা কেনাকাটা করে ফেরত যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আমরাও ক্রেতার চাহিদা প্রাধান্য দিয়ে দোকানে কাপড় তুলেছি। আশা করছি এবার অন্যবারের তুলনায় ব্যবসা ভালো হবে।
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে শাড়ি কিনতে এসেছেন তানিয়া খাতুন। তিনি বলেছেন, যেহেতু বাচ্চার স্কুল বন্ধ সেজন্য শেষ সময়ে ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাব। তাই পরিবারের সদস্যদের জন্য কাপড় কেনাকাটা করছি। ব্যবসায়ীরা দাম কিছুটা বেশিই চাচ্ছেন। দামাদামি করে নিতে হচ্ছে। তাছাড়া এবার সবাই রোজা রেখে কষ্ট হলেও দিনের বেলাতেই কেনাকাটা শেষ করতে চাচ্ছেন। সেজন্য ভিড়ও একটু বেশি।
রাজধানীর বক্সি বাজার এলাকা থেকে এলিফ্যান্ট রোডে পরিবারের সদস্যদের জন্য জুতা কিনতে এসেছেন ফাহিমা আক্তার। তিনি বলেন, প্রতি বছর নিজের পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের জন্য নিউমার্কেট থেকে জামা-কাপড় কিনি এবং এলিফ্যান্ট রোড থেকে জুতা কিনি। এই বছর শুরুর দিকেই মার্কেট গুলোতে অনেক ভীড়। কিছুদিন পর ভিড় আরো বেড়ে যাবে। তাই আগেই কেনাকাটা সেরে ফেললাম।
এদিকে নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নিউমার্কেট এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে। তথ্য ও সেবা কেন্দ্র বুথ থেকে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসেন উদ্দীন বাসস’কে বলেছেন, কেনাকাটা করতে আসা মানুষজনের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা আরো সতর্ক। এলাকাজুড়ে ১০টি স্পটে অবজারভেশন ফোর্স কাজ করছে। চারটি পেট্রোল টিম সার্বক্ষণিকভাবে ঘুরেফিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
একইসঙ্গে মোবাইল-টাকা চুরিসহ ছোটখাটো অপরাধ ঠেকাতে সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
Posted ৩:২৯ পিএম | সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।