নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট | 141 বার পঠিত

রাজধানীর প্রতিদিন যে পথে আমি বাসা থেকে অফিসে আসি, সে পথেই এ দুর্ঘটনা। ফার্মগেট এলাকায় রোববার দুপুরের আগমুহূর্তে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে প্রাণ হারান পথচারী। তাঁর জায়গায় আমিও হতে পারতাম। বস্তুত এ শহরে যে কেউই নিরাপদ নয়, তার উদাহরণ কেবল রোববারের ঘটনাই নয়; এর আগেও এ ধরনের অঘটন ঘটেছে। ওপর থেকে ইট পড়ে পথচারী প্রাণ হারিয়েছেন বিভিন্ন ঘটনায়। ২০২২ সালে মেট্রোরেলেরই নির্মাণাধীন লাইনের ব্লকের ইট পড়ে এক পথচারী নিহত হন।
মেট্রোরেলের যে বিয়ারিং প্যাড খুলে পথচারী প্রাণ হারিয়েছেন, সেটি মানহীন হওয়ার খবর কয়েক বছর আগে সংবাদমাধ্যমেও এসেছিল (বণিক বার্তা, ২২ জানুয়ারি, ২০২০)। বিশেষ ধরনের রাবার দিয়ে তৈরি এই প্যাড অত্যন্ত ভারী, যা বসাতে হয় পিয়ার ও ভায়াডাক্টের (উড়ালপথ) সংযোগস্থলে। ওই খবর বলছে, বুয়েটের ল্যাবে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, উত্তরা-আগারগাঁও অংশের দুটি প্যাকেজের জন্য আমদানি করা বিয়ারিং প্যাডের মান খারাপ। সেগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই সরবরাহ করেছিল। যার প্রমাণ আমরা দেখেছি, গত বছর মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে যায়। এর ফলে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। গত বছরের ঘটনায় অবশ্য কেউ হতাহত হয়নি, কিন্তু ওই ঘটনা আমাদের জন্য সতর্কতা সংকেত হলেও কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। নিরীহ এক পথচারীর মৃত্যুর পরও কি হুঁশ ফিরবে না?
রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ পর্যন্ত সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর চালু করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। শহরের ওপর দিয়ে চালু হওয়া এ যান নাগরিক জীবনে, বিশেষ করে যারা এ অংশের বাসিন্দা, তাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। অল্পসময়ে ঢাকার এক মাথা থেকে অন্য মাথায় যাওয়া ছিল স্বপ্নের মতো। সে কারণে অল্প সময়েই জনপ্রিয় মেট্রোরেল। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় রাজধানীতে যখন আন্দোলনে সব যানবহন স্থবির, তখনও বীরদর্পে চলেছে এ যান। যদিও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝেমধ্যে কিছু সময়ের জন্য মেট্রোরেল বন্ধ থাকে, তারপরও এর ওপর নাগরিক ভরসা বাড়তে থাকে। সে চিন্তা থেকেই সরকার সম্প্রতি এ পরিবহনের সময়ও বাড়িয়েছে।
মেট্রোরেল যেভাবে নিয়মিত চলছে, সেভাবে এর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে না– সে প্রশ্ন উঠছে। বিয়ারিং প্যাড খুলে এমন জায়গায় পথচারীর প্রাণহানি ঘটল, যে জায়গা মেট্রোরেলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ অর্থে যে কিছুটা বেঁকে সোজা এ যানটিকে চলতে হয়। সে কারণেও এখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ নিয়মিত হওয়া জরুরি।
গত বছর ব্যাংকার দীপু সানা যখন থান ইট পড়ে প্রাণ হারান, তখন লিখেছিলাম, এ শহরে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি’ কোথায় (১৫ জানুয়ারি ২০২৫)। আজকে যখন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে আবুল কালাম আজাদ নামের পথচারীর মৃত্যু হলো, তখনও সেই প্রশ্নই করতে হবে। রাজধানীজুড়ে যেসব মৃত্যুকূপ আমরা দেখছি, কর্তৃপক্ষকে তা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে যে প্রশ্ন আগেও উঠেছে, সে ব্যাপারে নির্বিকার থাকার উপায় নেই। তা না হলে মৃত্যুর এ ধারা থামবে না।
Posted ৩:৩৩ পিএম | রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।