নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 118 বার পঠিত
ব্যাংক ঋণের ঊর্ধ্বমুখী সুদহার লইয়া বিশেষত ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেই উদ্বেগ ছড়াইয়া পড়িয়াছে, উহা আর যাহাই হউক অমূলক নহে। মাত্র এক বৎসর পূর্বে ৯ শতাংশ সুদে যেই ব্যাংক ঋণ পাওয়া যাইত, উহার জন্য বর্তমানে সাড়ে ১৪ শতাংশ সুদ গুনিতে হয়। উপরন্তু, এমন আশঙ্কাও আছে, ভবিষ্যতে এই সুদহার আরও বাড়িবে; যাহার ফলে শুধু নূতন ঋণই দুর্মূল্য হইবে না, ঋণনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয়ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাইবে।
অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা আছে এমন ব্যক্তি মাত্রই জানেন যে, ইহার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়িবে ভোক্তার উপর; একই কারণে ব্যাপকসংখ্যক বেকারের দেশে নূতন কর্মসংস্থানের সুযোগও হ্রাস পাইতে বাধ্য। প্রসঙ্গত, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি বুঝিবার অন্যতম একটা সূচক হইল মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি নিরূপণ। শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন মোতাবেক, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবৎসরের প্রথম দুই মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা প্রায় ৪৪ শতাংশ হ্রাস পাইয়াছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মোতাবেক, গত অর্থবৎসরে রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমিয়া ৪ সহস্র ৮১ কোটি ডলার হইয়াছে। ইহা আরেক দফা হ্রাস পাইতে পারে, কারণ উক্ত পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাসের জন্য যথেষ্ট। এই প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, বিগত সরকারের আমলে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হইয়াছে। এক বৎসরেরও কম সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দুই দফা বৃদ্ধি পাইয়াছে। সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে যাহা আরেক দফা বৃদ্ধি পাইতে পারে। অন্যদিকে বৈশ্বিকভাবে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যের দর বাড়ে নাই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে হ্রাস পাইয়াছে। এমন পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে মাত্রা ছাড়াইয়া যাওয়া খেলাপি ঋণ আরও বৃদ্ধি পাইলেও বিস্ময়ের কোনো কারণ থাকিবে না।
সত্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনিতে বাজারে অর্থের জোগান হ্রাসের বিকল্প নাই। তাই অন্যতম নীতি সুদহার রিপারচেজ এগ্রিমেন্ট বা রেপো রেট বাড়াইতেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেপো সুদহার অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাংক হইতে স্বল্পমেয়াদি ধার গ্রহণ করে। ফলে রেপো সুদহার বৃদ্ধি ব্যাংকগুলিকে উক্ত ধারের উপর নির্ভরশীলতা কমাইয়া বাজার হইতে আমানত সংগ্রহে উৎসাহিত করে, যাহার কারণে বাজারে মুদ্রা সঞ্চালন হ্রাস পায়। কিন্তু চলমান বৎসরই চার দফা বাড়ানো হইয়াছে নীতি সুদহার। ফলে চাপে পড়িয়াছেন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা। নিঃসন্দেহে, যেই চাপ তাহারা অনুভব করিতেছেন, উহা অনেকাংশেই সহনীয় হইত যদি ধীরে ধীরে ঐ নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হইত। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা এত কিছু শুনিতে রাজি নহেন বলিয়া মনে হইতেছে। তাহাদের বক্তব্য, যেই কোনো উপায়ে ক্ষমতা ধরিয়া রাখিতে মরিয়া বিগত সরকার নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বাস্তবতা উপেক্ষা করিয়া ব্যবসায়ীদের একটি অংশকে খুশি করিবার উপর জোর দেয়। তাই বৈশ্বিক সুদহার বৃদ্ধি পাইলেও দেশে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। ডলারের দর দীর্ঘদিন ৮৫ টাকায় সীমাবদ্ধ রাখে। এমন ভুল নীতির কারণে অর্থনীতিতে নানা ক্ষত তৈরি হইয়াছে, যাহার অন্যতম প্রকাশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি।
কিন্তু বিগত সরকারের ভুল নীতির ক্ষতি যদ্রূপ রাতারাতি পূরণ করা সম্ভব নহে, তদ্রূপ উহা করিতে যাইয়া ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির করাও সমীচীন নহে। তদুপরি সুদহার এত বৃদ্ধির পরও কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমিতেছে না। সরকারি পরিসংখ্যান যাহাই বলুক, বর্তমানে প্রতিটা নিত্যপণ্যের দাম ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময় অপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। অর্থনীতিবিদদেরই মত, বিদ্যমান বাজার ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতি ব্যতীত শুধু ব্যাংক ঋণের প্রবাহ হ্রাস করিলেই মূল্যস্ফীতি কমিবে না। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যত দ্রুত বিষয়টা অনুধাবন করিবেন ততই মঙ্গল।
Posted ২:৫৮ পিএম | রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।