বৃহস্পতিবার ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

ফিলিস্তিন একদিন স্বাধীন হবেই

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   111 বার পঠিত

ফিলিস্তিন একদিন স্বাধীন হবেই

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের হাজার হাজার লোক হত্যা করেছে। এ ছাড়া দেশটি গাজার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে বহুবার বাস্তুচ্যুত করেছে এবং হাসপাতালগুলোতে বোমা মেরেছে। তারা পরিকল্পিতভাবে ডাক্তার, সেবাকর্মী ও সাংবাদিকদের নিশানা বানিয়ে হত্যা করেছে। পুরো জনগোষ্ঠী অনাহারে রয়েছে এবং তাদের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী সরকার এবং তাদের মিডিয়া এসব আগ্রাসনে নৈতিক ও বস্তুগত সমর্থন দিচ্ছে। এসব দেশ ও ইসরায়েলের অবস্থানের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। শুধু গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিতে ১৭.৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। সুতরাং আসুন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতাকারী, নিয়ন্ত্রণকারী বা প্রভাবক হিসেবে তুলে ধরে যে মিথ্যা প্রচারণা চলছে বা আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ (যাকে মূলধারার মার্কিন রাজনীতিতে চরম বামপন্থি বলে মনে করা হয়) বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধবিরতির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে’– এই মিথ্যা বাণী পরিহার করি। গণহত্যার পক্ষে অবস্থানকারী কোনোভাবে মধ্যস্থতাকারী হতে পারে না।

কোনো শক্তি ও অর্থ, পৃথিবীর সব অস্ত্র ও প্রপাগান্ডা ফিলিস্তিনের ক্ষত আর আড়াল করতে পারছে না। যে ক্ষতের কারণে ইসরায়েলসহ সারাবিশ্বে রক্ত ঝরছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, যেসব দেশের সরকার ইসরায়েলি গণহত্যায় সহযোগিতা করছে, সেগুলোর বেশির ভাগ নাগরিকই স্পষ্ট করেছে– তারা সরকারের সঙ্গে একমত নয়। আমরা হাজার হাজার মানুষের সেই মিছিল দেখেছি। এতে ইহুদিদের তরুণ প্রজন্মও রয়েছে, যারা সুকৌশলে ব্যবহৃত ও মিথ্যার মুখোমুখি হতে হতে ক্লান্ত। কে কল্পনা করেছিল, আমরা সেই দিনটি দেখতে বেঁচে থাকব, যেদিন জার্মান পুলিশ ইহুদি নাগরিকদের ইসরায়েল ও ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য আটক করবে এবং তাদের ইহুদি-বিরোধিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করবে? কে ভেবেছিল, মার্কিন সরকার ইসরায়েলি রাষ্ট্রের সেবায় ফিলিস্তিনপন্থি স্লোগান নিষিদ্ধ করে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে? পশ্চিমা গণতন্ত্রের তথাকথিত নৈতিক কাঠামো বিশ্বের বাকি অংশে কিছু ক্ষেত্রে সম্মান পেলেও মারাত্মক হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছে। 
নেতানিয়াহু যখন মধ্যপ্রাচ্যের এমন একটি মানচিত্র তুলে ধরেন, যেখানে ফিলিস্তিন নেই এবং ইসরায়েল নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে, তখন তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে প্রশংসিত হন বলা হয়, তিনি ইহুদিদের স্বদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন। কিন্তু যখন ফিলিস্তিনবাসী ও তাদের সমর্থকরা ‘নদী থেকে সমুদ্র, ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে’ স্লোগান দেয়, তখন তাদের বিরুদ্ধে ইহুদিদের গণহত্যার পক্ষে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়।

এ অভিযোগ কি বাস্তব? নাকি এটি একটি অসুস্থ কল্পনা, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের অন্ধকার অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে? এটি এমন এক কল্পনা, যা বৈচিত্র্য সমর্থন করে না। একইভাবে তা অন্যদের সঙ্গে সমান অধিকার ভোগ করে একটি দেশে বসবাসের ধারণাও গ্রহণ করে না। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অন্য সবাই যেমন করে। এটি এমন এক কল্পনা, যা স্বীকার করতে পারে না– ফিলিস্তিনিরা স্বাধীন হতে চায়, যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও অন্যান্য দেশের মানুষ ঔপনিবেশিকতার জোয়াল ছুড়ে ফেলেছে। এসব দেশ বৈচিত্র্যময়, এমনকি অত্যন্ত মারাত্মক ও ত্রুটিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তারা মুক্ত। দক্ষিণ আফ্রিকানরা যখন তাদের জনপ্রিয় সমাবেশে চিৎকার করছিল, ক্ষমতা! জনগণের কাছে ক্ষমতা, তারা কি শ্বেতাঙ্গদের গণহত্যার জন্য ডাক দিচ্ছিল? না। তারা বর্ণবাদী রাষ্ট্র ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিল, এখন যেমন ফিলিস্তিনিরা করছে। 

এখন যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তা হবে ভয়াবহ। তবে এটি শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলি বর্ণবাদকে ভেঙে ফেলবে। পুরো বিশ্ব ইহুদিসহ সবার জন্য অনেক বেশি নিরাপদ হবে, যা হবে অনেক বেশি ন্যায়সংগত। এটা হবে আমাদের আহত হৃদয় থেকে একটি তীর টেনে নেওয়ার মতো। যদি মার্কিন সরকার ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে, তাহলে যুদ্ধ আজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই মুহূর্তে শত্রুতার সমাপ্তিও ঘটতে পারে। হয়তো এতে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা যেত এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদেরও মুক্তি দেওয়া যেত। হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি শরিকদের সঙ্গে যে আলোচনা হবে তাতে অনিবার্যভাবে যুদ্ধের বিষয়টা আসতে হবে। এটা এখনই হতে পারে এবং লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ নিরসন করা যেতে পারে। কতটা দুঃখজনক, বেশির ভাগ লোক এটি নির্বোধ ও হাস্যকর প্রস্তাব মনে করবে।

তারা মনে করে, তারা আমাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। তারা বুঝতে পারে না, আমরা কখনও আমাদের অবস্থান ছেড়ে যাইনি। আমরা শুধু অল্প সময়ের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম। ব্যালট বাক্স, প্রাসাদ, মন্ত্রণালয়, কারাগার, এমনকি কবরও আমাদের স্বপ্নের জন্য যথেষ্ট বড় নয়। আমরা কখনও কেন্দ্রে যেতে চাইনি। কারণ, যারা স্বপ্ন বিসর্জন দেয় তারা ছাড়া অন্য কারও জন্য এখানে জায়গা নেই। এমনকি স্কয়ার রেভল্যুশনও আমাদের পক্ষে যথেষ্ট বড় ছিল না। তাই বিপ্লবের বেশির ভাগ যুদ্ধই এর বাইরে হয়েছিল এবং বেশির ভাগ নায়ক এই কাঠামোর বাইরে থেকে গিয়েছিল।
বর্তমানে গাজা ও  লেবাননে আমরা যে ভয়াবহতা দেখছি, তা দ্রুত একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত। এর প্রকৃত নায়করা কাঠামোর বাইরে থেকে যাচ্ছে। কিন্তু তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা জানে, একদিন নদী থেকে সাগর পর্যন্ত ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে। এটা 
হবেই। আপনারা ঘড়িতে নয়, ক্যালেন্ডারে চোখ রাখুন। এভাবেই জেনারেলরা নয়, বরং জনগণই তাদের মুক্তির জন্য সময়ের মাপজোখ ঠিক করে নেয়।   

Facebook Comments Box

Posted ১:২১ পিএম | রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।