নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট | 123 বার পঠিত
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে বিদ্যমান সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিয়া বুধবার অন্তর্বর্তী সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করিয়াছে, স্বাভাবিকভাবেই উহা পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়াছে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হইবার পর সংগঠনটি দলীয় লেজুড়বৃত্তির চর্চা শুরু করে, যাহা প্রকট হইয়া উঠে বিশেষত গত ১৫ বৎসর আওয়ামী লীগ একাদিক্রমে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়। শুধু তাহাই নহে; এই সময়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সোচ্চার না হইয়া সংগঠনটির নেতাকর্মী হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নারী নিপীড়নের ন্যায় ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হইয়া পড়িয়া ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ অতীতের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সংগঠনটির গৌরবময় ভূমিকাও ম্লান করিয়া ফেলে। সুতরাং ৭৬ বৎসর বয়সী প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধকরণের ঘটনা জনপরিসরে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেওয়াই স্বাভাবিক। আমরা জানি, গত ১৫ জুলাই হইতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর বেপরোয়া হামলা ও নির্যাতন, এমনকি হত্যার ন্যায় গুরুতর অভিযোগ রহিয়াছে। তাই ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের স্বীয় দাবির বাস্তবায়ন দেখিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী আনন্দ প্রকাশ করিয়াছে। একই সময়ে দেশের সচেতন মহলের অনেকেই যে নিছক নির্বাহী আদেশে একটা সংগঠনকে নিষিদ্ধকরণের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জন সম্পর্কে সংশয় ব্যক্ত করিয়াছেন, উহাও প্রণিধানযোগ্য।
এই প্রসঙ্গে শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেদনমতে, অভ্যুত্থানকারী ছাত্রনেতৃবৃন্দ এই সিদ্ধান্তে উল্লসিত হইলেও আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখাইয়াছে। এমনকি ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বর্তমানে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করিয়াছে ‘রাখঢাক’ সহযোগে। এই বিষয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলিয়াছেন, কেহ যদি মনে করেন, আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করিয়া এই সমস্যার সমাধান করা যাইবে, তাহা গ্রহণযোগ্য নহে। তিনি মনে করেন, ছাত্রলীগের যাহারা অপরাধ করিয়াছে, তাহাদের বরং বিচারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আমরা মনে করি, শিক্ষাঙ্গনকে কলুষমুক্ত করা যদি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রধান লক্ষ্য হয়, তাহা হইলে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের পরামর্শ মানিয়া ছাত্রলীগের মধ্যকার অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিক্ষাঙ্গনে হত্যাসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুধু ছাত্রলীগই করে নাই; অতীতে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার সহযোগী অন্যান্য সংগঠনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রহিয়াছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অদ্যাবধি শিক্ষার পরিবেশ বিপন্নকারী ঐ সকল অপরাধমূলক ঘটনার কোনোটারই বিচার হয় নাই। ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতাকর্মীকে উপযুক্ত আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে সেই সকল সংগঠনকেও স্পষ্ট একটা বার্তা দেওয়া যায়।
সর্বোপরি, ছাত্রলীগের অপকর্ম যতটা আইনগত, ততোধিক রাজনৈতিক সমস্যা। আর অস্বীকার করা যাইবে না, যেই কোনো রাজনৈতিক সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করাই উত্তম। অর্থাৎ যেই অপরাজনীতির কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এহেন অপরাধে যুক্ত হইল, সেই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করিলে সমস্যাটির টেকসই সমাধান মিলিতে পারে। তাই জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে পতিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও আদর্শিক লড়াই বজায় রাখাই জরুরি। ইহার অংশরূপে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবশ্যিকভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও সুস্থ ছাত্রনেতৃত্ব গড়িয়া তুলিতে হইবে। স্মরণে রাখিতে হইবে, এই সকল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ব্যতীত ছাত্রলীগের ন্যায় সংগঠনের বিরুদ্ধে নিছক আইনগত পদক্ষেপ বরং মানুষের মনে সংগঠনটির প্রতি এক প্রকার সহানুভূতি সৃষ্টি করিতে পারে।
Posted ১০:৫৭ এএম | শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।