নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 131 বার পঠিত
বরগুনার আমতলীতে ধর্ষণ মামলার বাদী মন্টু দাস হত্যার চারদিনেও খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও তিনজনকে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিজনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন, শ্রীরাম রায়, সিজীবের সহযোগী কালু ও রফিকুল ইসলাম।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের আগে নিহত মন্টুর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার হয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৫ মার্চ বরগুনা সদর থানায় নিজে বাদী হয়ে একটি মামলা করেন মন্টু। পরে ওই দিনই মামলার একমাত্র আসামি সৃজীব চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
মামলার এক সপ্তাহ পরে অর্থাৎ গত ১১ মার্চ রাতে বরগুনা পৌরসভার কালিবাড়ি এলাকার নিজ বসতবাড়ির পেছনের ঝোপ থেকে মন্টু চন্দ্র দাসের মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গত বুধবার মৃত মন্টু দাসের স্ত্রী শিখা রাণী বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। কিন্তু ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি।
এদিকে হত্যার ঘটনায় এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তিসহ মন্টুর পরিবারের নিরাপত্তার দাবি করা হচ্ছে।
মৃত মন্টুর বোন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আসামি সৃজীব আগে থেকেই অপকর্মে জড়িত। গত ৪ মার্চ সন্ধ্যা থেকেই মন্টুর মেয়ে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পরই খোঁজাখুজি হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর ৫ মার্চ সকালের দিকে মন্টুর বাড়ির পাশের ডিসি পার্ক সংলগ্ন জায়গা থেকে মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর মেয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করলে সে সবকিছু খুলে বলে। এরপরে আমরা থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ সৃজীবকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। এই মামলার ধার্য তারিখ ছিলো গত ১২ মার্চ।’
তিনি আরও বলেন, গত ১১ মার্চ মন্টু প্রতিদিনের ন্যায় দোকানে যায়। সন্ধ্যায় মন্টুর স্ত্রী ফোন দিয়ে জানায়, সৃজীবের পরিবার মীমাংসা করতে চাই। আমি মন্টুকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায়। সৃজীবের বাবা আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় মীমাংসার কথা বললেও পাশাপাশি হুমকি দেয়। মীমাংসা না করলে দেখে নেওয়ার কথা বলে। ওইদিন রাত ১টার সময় আবার মন্টুর স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বলে, মন্টু এখনও বাড়ি ফেরেনি। এ কথা শুনে আমি ওদের বাড়িতে আসি। ওর ফোনে ফোন দিতে থাকলে বাড়ির পেছন থেকে ফোনের শব্দ শুনতে পাই। পরে মন্টুর বড় মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির পেছনে গিয়ে মন্টুর মরদেহ দেখতে পাই।’
মেয়ের অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় সম্পৃক্তদের ছাড়া মন্টুর সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল না বলেও জানান এ বোন।
মৃতের স্ত্রী বলেন, ‘ধর্ষণ ও অপহরণ মামলার ধার্য তারিখের আগের দিন রাতেই আমার স্বামীকে হত্যা করে বাড়ির পেছনে ফেলে রেখে হলো। বর্তমানে আমি সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই আছি। সামনে আমি কি করবো বা আমার সংসার কীভাবে চলবে আমি জানি না।’
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ‘মন্টু দাসের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মামলাটিতে আরও সময়ের প্রয়োজন।’
মন্টু হত্যার ঘটনার দিন আটককৃত চারজনের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘সন্দেহজন চারজনের মধ্যে তিনজনকে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। একজনকে মুচলেকা নিয়ে তার অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।’
Posted ১১:০৫ এএম | শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।