সোমবার ৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

গাজায় শেষ, পশ্চিম তীরে শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   143 বার পঠিত

গাজায় শেষ, পশ্চিম তীরে শুরু

গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার এক সপ্তাহ শেষ হলো। দখলকৃত পশ্চিম তীরে আমরা খবরটি পাওয়ামাত্র আনন্দ উদযাপন করেছি। স্বস্তি নিয়ে আমরা আশা করেছিলাম, গণহত্যা অবশেষে বন্ধ হয়েছে। কিন্তু না। আমরা এটাও বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের জন্য কোনো যুদ্ধবিরতি নেই। কয়েক দশক ধরে প্রতিদিন যে সহিংসতার শিকার হয়ে আসছি, তা হ্রাসের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আমাদের ওপর দখলদার বাহিনীর বর্বরতা কেবল বেড়েছে। আজ পশ্চিম তীরে জীবন চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পর এক বন্ধুর ছোট মেয়ে উল্লাস করে উঠল। সে তার দাদা-দাদির সঙ্গে জলপাই তুলতে যেতে চাইল। যখন শিশুটি জানল– এটা কঠিন; জবাবে সে বলল, ‘কেন? যুদ্ধ কি শেষ হয়নি?’ আপনি কীভাবে একটি শিশুকে বোঝাবেন, গাজায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার অর্থ এই নয়, পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো এখন তাদের জমিতে জলপাইয়ের চাষ করতে পারবে? ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বাধা এবং দখলদারদের আক্রমণের ভয়ে অথবা উভয় কারণেই গাজাবাসী এখনও তাদের ক্ষেতে যেতে পারে না।

রামাল্লার উত্তরে অবস্থিত রাওয়াবি। আমি এখানকার বাসিন্দা। এখনও প্রতিদিন দখলদারিত্বের কারণে আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। শহরের বাইরে কাজকর্ম, কেনাকাটা, অফিসিয়াল কাগজপত্র সংগ্রহ বা অন্য কিছুর প্রয়োজনে বের হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেকপয়েন্টে আটকে থাকতে হয়। কখনওবা গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। রাওয়াবি ও রামাল্লার মধ্যে রয়েছে চারটি লোহার গেট, একটি সামরিক টাওয়ার এবং একটি প্রাচীর। অথচ রাওয়াবি ও রামাল্লার মধ্যে যাত্রাকাল হওয়ার কথা মাত্র ১০ মিনিট।
পশ্চিম তীরজুড়ে রয়েছে ৯১৬টি ইসরায়েলি বাধা ও লোহার গেট, যার মধ্যে ২৪৩টি নির্মিত হয়েছে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর। এগুলো খোলা বা বন্ধ নির্ভর করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ইচ্ছার ওপর। যার অর্থ একজন ফিলিস্তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটি বাধায় আটকে থাকতে পারেন। এই অবস্থা জীবনের প্রতিটি দিককে ব্যাহত করে– পরিবারের সঙ্গে দেখা থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসাসেবা, স্কুলে যাওয়া
ও পণ্য পরিবহন।

জেরুজালেমে প্রবেশাধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে আল আকসা মসজিদ ও পবিত্র গির্জায় আমাদের উপাসনার স্বাধীনতা নেই। খুব অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে শহরে প্রবেশের জন্য বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়, তাও আবার বিশেষ প্রয়োজন সাপেক্ষে। ২০ বছরেরও বেশি আগে আমাদের জেরুজালেমে প্রবেশাধিকার ছিল। এর মানে, পুরো একটি তরুণ প্রজন্মের কাছে শহর হলো তাদের বাবা-মা এবং দাদা-দাদির বলা কেবল ছবি ও গল্প।

এমনকি রাতেও দখলদাররা কোনো ফিলিস্তিনিকে পেলে সহসাই ছেড়ে দেয় না। যে কোনো ফিলিস্তিনি বাড়িতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অভিযান চালাতে পারে। সৈন্যরা সদর দরজা ভেঙে ভেতরে থাকা সদস্যদের আতঙ্কিত ও বিনা অভিযোগে তাদের কাউকে কাউকে আটক করে। ইসরায়েলি সৈন্যরা বিনা কারণে কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টার ছোড়ে এবং এতে প্রতিবেশীরাও আতঙ্কিত হয়। আরও দুর্ভোগ দেখা দেয়।

১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে। এর পর থেকে কয়েক দশক ধরে তারা এ অঞ্চলের প্রায় অর্ধেক ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এখানে তারা বসতি স্থাপন এবং ‘রাষ্ট্রীয় ভূমি’ অথবা ‘সামরিক অঞ্চল’ বলে ঘোষণা দিয়ে ফিলিস্তিনি মালিকদের কাছ থেকে জমি বাজেয়াপ্ত করে। ৭ অক্টোবরের পর ফিলিস্তিনি জমি দখলের ঘটনা বেড়েছে; দুই বছরে কমপক্ষে ১২ হাজার ৩০০ একর (৪ লাখ ৯ হাজার ৭৮৭ হেক্টর) দখল করা হয়েছে।

এই অবৈধ বসতি স্থাপনের জন্য ইসরায়েল পশ্চিম তীরের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপরেও হাত বাড়িয়েছে। প্রায় সব জলসম্পদ এখন তাদের দখলে। ফলে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের জন্য পশ্চিম তীরে একটি বিশাল জলাধারও তারা নিশ্চিত করেছে।

ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তারা এখন প্রায় সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলি জল সংস্থা ‘মেকোরোট’-এর ওপর নির্ভরশীল, যা ঘনবসতিপূর্ণ ফিলিস্তিনি অঞ্চলে অত্যন্ত অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করে। অন্যদিকে দখলদাররা পেয়ে থাকে মাথাপিছু ফিলিস্তিনি অংশের কয়েক গুণ। প্রতি গ্রীষ্মে যখন খরা শুরু হয়, ফিলিস্তিনিদের মেকোরোট থেকে অতিরিক্ত দামে পানি কিনতে বাধ্য করা হয়। এদিকে ফিলিস্তিনি কূপ ও বৃষ্টির পানির ট্যাঙ্কগুলো প্রায়ই আক্রমণ করে ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে।

পশ্চিম তীরে এটাই আমাদের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও শান্তি সম্মেলন ও বিভিন্ন সভায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা এর কিছুই জানি না। প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টা, প্রতিটা মিনিটে আমাদের হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন, উচ্ছেদ ও হত্যা করা হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল রাজনৈতিক সমাধান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তারা ভূমি, মানুষ ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণের দিকে হেঁটেছে। বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়ে গেলেও তারা আমাদের ওপর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত শান্তি অর্জনের একমাত্র উপায় হলো দখলদারিত্বের ঘটনা চিহ্নিত করে তা বন্ধ করা।

Facebook Comments Box

Posted ৪:১২ পিএম | শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

মোদির নতুন চাল
(313 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।