বৃহস্পতিবার ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

কেজি দরে গাড়ি বিক্রয় পরিমাপ মাত্রই পরিমিত নহে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   116 বার পঠিত

কেজি দরে গাড়ি বিক্রয় পরিমাপ মাত্রই পরিমিত নহে

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যেইভাবে কেজি দরে মার্সিডিজ বেঞ্জ বা রেঞ্জ রোভারের মতো দামি গাড়ি বিক্রয় করিবার উদ্যোগ লইয়াছে, উহা হতাশাজনক বাস্তবতা বটে। বস্তুত চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত এই সকল বিলাসবহুল গাড়ি যখন ৯ বার নিলামে তুলিয়াও বিক্রয় করা যায় নাই, তখনই এই পরিণতি নির্ধারিত হইয়া গিয়াছিল।

কেজি দরে বিক্রয় করিবার কারণে সরকার যদ্রূপ বিপুল পরিমাণ শুল্ক হইতে বঞ্চিত হইতেছে, তদ্রূপ মূল্যবান সম্পদও বিনষ্ট হইয়াছে। উহাদের এই পরিণতির দায় কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করিতে পারে না।

সমকালের বিশ্লেষণে যথার্থই উঠিয়া আসিয়াছে, চার কারণে নিলামে মূল্যবান এইসব গাড়ি বিক্রয় হইতেছে না। দীর্ঘ সময় পরিত্যক্ত থাকিবার কারণে গাড়ির নির্ধারিত আয়ুষ্কাল শেষ ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হইবার বিষয় বাস্তব হইলেও উহার নেপথ্যে নিলাম সিন্ডিকেটের সক্রিয়তা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে উপেক্ষা করিবার অবকাশ নাই। নিলাম প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতাও ধর্তব্য। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিলাম না হইবার কারণে বন্দর ইয়ার্ডে কিংবা কনটেইনারে পণ্য নষ্ট ও চুরি হইবার নজিরও আমরা দেখিয়াছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর হয়রানির কারণেও নিলামে তোলা গাড়ির ব্যাপারে মানুষ আগ্রহী হন না।

বিস্ময়কর হইলেও সত্য, যেই শতাধিক গাড়ি বিক্রয় হইতেছে, সেইগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে অন্তত দেড় দশক পরিত্যক্ত। দীর্ঘ সময় ধরিয়া গুরুত্বপূর্ণ এই সকল পরিবহন অলস থাকিবার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। এমনকি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানিনীতি অনুযায়ী, এত পুরাতন গাড়ি নিলামে বিক্রয়ের সুযোগই নাই। তজ্জন্য বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত কাস্টমস নিলাম কমিটি ২০২২ সালেই এই সকল গাড়ি ধ্বংসের সুপারিশ করিয়াছিল। তাহার বিকল্প হিসাবে গাড়িগুলি এখন কর্তন করিয়া স্ক্র্যাপরূপে কেজি দরে নিলামে বিক্রয় করিবে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। ধ্বংস অপেক্ষা কেজি দরে বিক্রয় উত্তম বটে, কিন্তু প্রত্যাশিত নহে। বলা বাহুল্য, এহেন সিদ্ধান্ত দেশের ইতিহাসে ইহাই প্রথম।

আরও উদ্বেগজনক খব, বন্দরে এখনও নিলামযোগ্য প্রায় চারশত গাড়ি পড়িয়া রহিয়াছে। আমরা চাহিব, এই সকল গাড়ির ভাগ্য অন্তত এইরূপ না হউক। তজ্জন্য প্রথমত নিলাম সিন্ডিকেট ভাঙা জরুরি। গাড়ি আমদানি করিবার পরও উহা কেন খালাস করা হয় না, তাহা লইয়াও বিস্তর ভাবিবার কারণ রহিয়াছে। আমরা জানি, এই ক্ষেত্রে বড় বৈষম্য রহিয়াছে, যেইখানে দেশের সংসদ সদস্যরা বিনা শুল্কে গাড়ি ছাড়াই লইতে পারিতেন। প্রভাবশালীদের জন্য এক রকম, অন্যদের ভিন্ন কেন? আমরা জানি, সেইখানে ৮০০ গুণ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। শুল্কের এই অতি অস্বাভাবিক হার হ্রাস করিবার বিষয়টি প্রশাসন ভাবনায় লইতে পারে।

তবে এই মুহূর্তের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত গাড়ি নিলামে দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটানো। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান বলিয়াছেন, দীর্ঘসূত্রতার সমাধান ও সিন্ডিকেট ভাঙিতে তাহারা অনলাইনে প্রস্তাব গ্রহণ করিতেছেন। আমরা মনে করি, ইহা উত্তম সিদ্ধান্ত। দীর্ঘদিন গাড়ি পড়িয়া থাকিবার ফলে ক্রেতা উহাতে অনাগ্রহী হইতে পারেন। তজ্জন্য প্রশাসনের সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করিয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএর তরফ হইতে হয়রানি বন্ধ হওয়া এই ক্ষেত্রে জরুরি।

সর্বোপরি কেজি দরে গাড়ি বিক্রয়ের মতো পরিস্থিতি সামাল দিতে নিলাম সংকট, কাস্টমসসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে ভাবিতে হইবে। রাষ্ট্র ও ব্যক্তি উভয়ের জন্য যাহাতে ‘উইন উইন’ ব্যবস্থা করা যায়, সেই দিকে নজর দিতে হইবে। কেজি দরে গাড়ি বিক্রয়ের ঘটনা ইহা প্রথম হইলেও ইহাই যেন শেষ হয়। সর্বক্ষেত্রে পরিমাপ মাত্রই যে পরিমিত নহে; আলোচ্য ঘটনার মধ্য দিয়া আরেকবার প্রমাণ হইল।

Facebook Comments Box

Posted ১:১৯ পিএম | বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।