নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 124 বার পঠিত
প্রবীণের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ২০২৩ সালে প্রবর্তিত হইলেও বর্তমানে উহা খোঁড়াইয়া চলিতেছে। সোমবার এই সংক্রান্ত সমকালের প্রতিবেদন হইতে আরও জানা যাইতেছে, ইহার উল্লেখযোগ্য নিবন্ধনকারী যদ্রূপ চাঁদা দেওয়া বন্ধ করিয়াছেন, তদ্রূপ নূতন নিবন্ধনের হারও কমিয়াছে ব্যাপকভাবে। আমরা মনে করি, এহেন উত্তম উদ্যোগের করুণ পরিণতি দুঃখজনক। মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে সর্বজনীন পেনশন উদ্যোগকে আগাইয়া লইতে হইবে এবং ইহাকে জনপ্রিয় করিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
অস্বীকার করা যাইবে না, বিগত সরকার তড়িঘড়ি করিয়াই এই উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিল। তাহার পরও মানুষের মধ্যে এক প্রকার সাড়া পড়িয়াছিল। যেই কারণে গত জুলাই মাস পর্যন্ত সাড়ে তিন লক্ষ গ্রাহক সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির জন্য নিবন্ধন করিয়াছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের গত বৎসরের ৫ আগস্ট পতন হইবার পর এই কর্মসূচিতে স্বাভাবিকভাবেই ভাটা পড়ে। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৎসরের মে ও জুন মাসে যথায় দুই লক্ষেরও অধিক মানুষ এই কর্মসূচিতে যুক্ত হইয়াছিলেন, তথায় গত আড়াই মাসে নিবন্ধন করিয়াছেন প্রায় সাত শত। অন্যদিকে নিবন্ধন করিয়া চাঁদা দেওয়া শুরু করিবার পর অন্তত ২০ শতাংশ গ্রাহক বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। এই অবস্থা চলিতে থাকিলে সর্বজনীন পেনশনের ভবিষ্যৎ লইয়াই শঙ্কা তৈরি হইবে। তজ্জন্য সরকারের
উচিত হইবে সর্বজনীন পেনশনের ব্যাপারে জনমনে আস্থা আনয়নে যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করা।
স্বস্তির বিষয়, সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ সমকালকে জানাইয়াছে, এই কর্মসূচির সুফল জনসমক্ষে তুলিয়া ধরিতে প্রচারণার উদ্যোগ লওয়া হইতেছে এবং এই লক্ষ্যে গত অক্টোবরে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তও গৃহীত হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে পেনশনে চাঁদায় বীমার বিষয়টি যুক্ত করিবার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক এবং অনেকের আগ্রহের কারণ হইবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ইহার সহিত বীমা সুবিধা অন্তর্ভুক্ত। যাহার ফলে কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনায় পড়িয়া চাঁদা পরিশোধে অক্ষম হইলেও বীমা সুবিধা কাজে লাগিবে।
প্রশ্ন হইল, মধ্য অক্টোবরে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের বৈঠক হইলেও এখনও কেন নূতন উদ্যোগ লওয়া হইতেছে না? ইতোমধ্যে সকল স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাহাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নূতন স্কিম চালু করিবার ঘোষণা দেওয়া হইলেও বাধার মুখে তাহা কার্যকর করা যায় নাই। এমনকি আগামী জুলাই হইতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইহার আওতায় আনয়নের সিদ্ধান্ত হইতেও সরকার পিছাইয়া গিয়াছে। অথচ পেনশন স্কিম পরিচালনার জন্য গঠিত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন রাষ্ট্রীয় কোষাগার হইতে বহন করিতে হইতেছে, যাহার মাসিক ব্যয় ৩০ লক্ষ টাকা।
শুভস্য শীঘ্রম! আমরা মনে করি, সময় এখনও ফুরাইয়া যায় নাই। যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ঘুরিয়া দাঁড়াইতে পারে। আমরা মনে করি, সম্পূর্ণ কর্মসূচি ঘিরিয়া যেই সকল দুর্বলতা রহিয়াছে সেইগুলি প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ দিয়া চিহ্নিত করিয়া তাহাদের সুপারিশের আলোকে নূতন পদক্ষেপ গ্রহণ করা চাই। বিগত সরকার জনতুষ্টির জন্য তড়িঘড়ি করিয়া সর্বজনীন পেনশন প্রবর্তন করিলেও ইহার আবেদন অস্বীকার করিবার উপায় নাই। সরকারি চাকরিজীবী বর্তমানে যদ্রূপ পেনশন পাইয়া থাকেন, তদ্রূপ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনয়নে এই কর্মসূচিকে সরকারিভাবে গুরুত্ব দিতে হইবে। এই ক্ষেত্রে নাগরিকদের আস্থায় আনয়ন ও সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধির উপায় থাকিলে সেইভাবে পদক্ষেপ প্রত্যাশিত।
Posted ৮:১২ এএম | মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।