নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 110 বার পঠিত
নকল ও ভেজাল পণ্যে বাজার সয়লাব– সংবাদমাধ্যমে এইরূপ শিরোনাম যদ্রূপ নূতন নহে, এতদ্বিষয়ে তদারক কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যও তদ্রূপ পুরাতন। এই চিত্র পুর্নবার স্পষ্ট হইয়াছে প্রসাধনীর আসল-নকলের চক্কর লইয়া রবিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের মোট পণ্যের ৬০-৭০ শতাংশই এখন ভেজাল আর নকল। দেশি-বিদেশি বিখ্যাত ব্র্যান্ডসমূহের প্রসাধনীর মোড়ক নকল করিয়া তাহা বাজারজাত করা হইতেছে। কখনও কখনও সেই ভেজাল প্রসাধনী বিক্রয় করা হইতেছে আসল পণ্যের দামে। পুরাতন ঢাকার ব্যবসায়ীর বরাতে প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, সাবান, পানি, রাসায়নিক আর কিছুটা সুগন্ধির মিশ্রণে শ্যাম্পু প্রস্তুত করা হয়। পুরাতন যন্ত্রপাতির মরিচা তোলায় ব্যবহৃত তৈলের সহিত সুগন্ধি মিশাইয়া তৈয়ার হয় মাথায় ব্যবহারের তৈল। অনলাইন-অফলাইনে মন-ভোলা বিজ্ঞাপন দেখিয়া ক্রেতারা কিনিতেছেন এই সকল নকল পণ্য। ইহাতে তাহারা একদিকে প্রতারণার শিকার হইতেছেন, অন্যদিকে পড়িতেছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এই সকল পণ্য ব্যবহারে ত্বকে দাগ পড়া, মাথার চুল পড়া, ত্বক বিকৃতিসহ বিভিন্ন চর্মরোগ, এমনকি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হইতেছেন ভোক্তারা। যাহা উদ্বেগজনক, বিশেষত পুরাতন ঢাকাকেন্দ্রিক এই সকল পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম অনেকাংশে উন্মুক্ত হইলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয় না। কখনও কখনও সংবাদমাধ্যমে ইহা লইয়া আলোচনা হইলে তদারক কর্তৃপক্ষ নকল-ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় বটে, তবে উক্ত আলোচনা থামিয়া গেলে রহস্যজনকভাবে ঐ অভিযানও বন্ধ হইয়া যায়।
অধিকতর সমস্যা হইল, দেশি পণ্য অপেক্ষা বিদেশি পণ্যের মান ভালো– এমন বিশ্বাস হইতে একটু অবস্থাপন্ন ক্রেতারা বিদেশি প্রসাধনীর দিকে ছুটিলেও সেখানে ঐ ভেজাল প্রসাধনীর কারবারিরা হাত বাড়াইতেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার সুযোগ লইয়া অথবা উহাদের সহিত অশুভ আঁতাত গড়িয়া প্রতি বৎসর অবৈধ উপায়ে আমদানি হইতেছে শত-সহস্র কোটি টাকার পণ্য। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে কালার কসমেটিকসের চাহিদা প্রায় ১৩ সহস্র কোটি টাকার। তৎসহিত স্কিন কেয়ার পণ্যের চাহিদা আছে প্রায় ২১ সহস্র কোটি টাকার। এই চাহিদার বৃহৎ অংশই আমদানি হয় চোরাকারবারির মাধ্যমে, যাহার মূল্য প্রায় ২৪ সহস্র কোটি টাকা। ইহার ফলে একদিকে মানহীন পণ্যে বাজার ভরিয়া উঠিতেছে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হইতে বঞ্চিত হয় দেশ। উপরন্তু দেশে যেই সকল কোম্পানি উন্নত ফর্মুলেশন-গবেষণা খাতে বিনিয়োগ করিয়া উন্নতমানের পণ্য উৎপাদনের চেষ্টা করিতেছে, তাহারাও ক্ষতিগ্রস্ত। জানা মতে, এই সকল পণ্যের কাঁচামালে শুল্ক-কর বেশি; বিপরীতে সরাসরি প্রসাধন সামগ্রীর আমদানিতে শুল্ক-কর কম।
খাত-সংশ্লিষ্টদের এই বক্তব্য ফুৎকারে উৎক্ষেপের অবকাশ নাই, সরকার প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা দিলে দেশে দ্রুত মানসম্মত প্রসাধন সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধি পাইবে। তৎসহিত আমদানিনির্ভরতাও হ্রাস পাইবে। শুধু উহাই নহে, তখন ভোক্তারা যদ্রূপ ভেজাল ও নকল পণ্য ক্রয়জাত বহুবিধ ক্ষতি হইতে মুক্তি পাইবেন, তদ্রূপ নূতন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ মিলিবে। অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশের (এএসবিএমইবি) সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য, স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী এই শিল্পে বিনিয়োগ হইলে ৫০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃজন সম্ভব। বিষয়টি বর্তমান সরকারের গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করা উচিত বলিয়া আমরা মনে করি। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে এই সকল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনেরও (বিএসটিআই) সামগ্রিক উন্নতিসাধন জরুরি।
প্রতিবেদনমতে, অদ্যাবধি বাজারে প্রসাধন পণ্যের অধিকাংশেরই মান ঠিক করিতে পারে নাই সংস্থাটি। সামগ্রিক উৎপাদনের মাত্র ৩০ শতাংশ পণ্য বিএসটিআইর মান সনদের আওতায় আসিয়াছে। বাকি ৭০ শতাংশে কী হইতেছে, সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি উহা বুঝিবার জন্য যথেষ্ট।
Posted ৮:০৭ এএম | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।