নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 128 বার পঠিত
রাজধানীতে খুন-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাগুলো বেড়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। সোমবার কালবেলায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও খুনের মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কালবেলার অনুসন্ধান বলছে, গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ২০টি ছোট-বড় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগও দেওয়া হচ্ছে না। ছিনতাইকারীদের ছুরিতে আহত হয়েছেন শিক্ষার্থী, এনজিওকর্মীসহ বেশ কয়েকজন। পাশাপাশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে খুনিচক্র। সড়ক ছাড়াও বাসার ভেতর ঢুকেও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে।
গত ২৭ আগস্ট ভোরে মিরপুরের দারুসসালাম সড়কে রিকশার গতিরোধ করে জাররাফ আহমেদ প্রীতম নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। দুই ছিনতাইকারী চাকু বের করে তার গতিরোধ করে কাছে থাকা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও টাকা নেওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করে। তখন তিনি বাধা দিলে ওই দুই ছিনতাইকারী তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এর তিন দিন পর শনিবার ভোরে বাসাবো ফ্লাইওভারের ঢালে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. ইউসুফ নামে এক অটোরিকশাচালক খুন হন। গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে মোবাইল ফোন খোয়ান একজন গণমাধ্যমকর্মী। গত ৩০ আগস্ট রাজধানীর হাজারীবাগে খুন হন ইফতেখার হোসাইন ইমন নামে এক তরুণ। এ ছাড়া একই দিন বনশ্রী এলাকায় নড়াই নদী থেকে মাহফুজুর রহমান বিপ্লব নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত শনিবার কদমতলীর মিনাবাগ থেকে মাহবুব নামে এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ২৭ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সীমা আক্তার নামে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় গর্ভে থাকা তার সাত মাসের সন্তানও মারা যায়। এসব ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই রাজধানীবাসীর মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আমরা জানি, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। এরপর জনরোষে পড়ে পুলিশ। দেশের বেশিরভাগ থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অস্ত্র লুট থেকে শুরু করে প্রাণ যায় ৪৪ পুলিশ সদস্যদের। অনেকেই আহত হন। অসংখ্য গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নিজেদের জীবনের নিরাপত্তায় একপর্যায়ে থানা ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয়ে চলে যান তারা। দেশব্যাপী পুরো পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। প্রায় ১০ দিন কোনো ধরনের থানা কার্যক্রম ছিল না। অর্থাৎ ১০ দিন পর চালু হয় সব থানা। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে ব্যাপক। ফলে ভেঙে পড়া ব্যবস্থাকে এখনো পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপরাধী চক্র। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তাদের পক্ষে পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। পুলিশের টহল গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়ায় টহল কার্যক্রমও এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত নয়। ইতিবাচক দিক হচ্ছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক তৎপরতা উল্লেখ করার মতো। পুলিশকে পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা ও পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ফেরানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। পাশাপাশি থানা কার্যক্রম স্বাভাবিকীকরণসহ থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারেও দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগামীকাল বুধবার থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে শুরু হচ্ছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে—এটিই চাওয়া।
Posted ৬:৪৪ এএম | মঙ্গলবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।