নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 111 বার পঠিত
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল নির্দিষ্ট সময়ে দিতে পারে নাই বলিয়া রবিবার সমকাল যাহা জানাইয়াছে, তাহা হতাশাজনক। তবে যখন জানা যায়, এই বিলম্বের পশ্চাতে আছে তদন্ত দলের প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরবারহের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, তখন সেই হতাশা আরও বৃদ্ধি পায়। প্রতিবেদনে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করিয়া বলা হইয়াছে, বাংলাদেশে ১ জুলাই হইতে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত নৃশংস ঘটনার মূল উৎস বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ-সংবলিত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ডিসেম্বরের সূচনাতেই দিতে চাহিয়াছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিনিধি দল। কিন্তু অনেক অপরাধীর তথ্য প্রদানে সরকারের ‘অপারগতা’র কারণে তাহা সম্ভব হয় নাই। চাহিদা অনুযায়ী জাতিসংঘকে তথ্য দিতে ‘কিছুটা বিলম্ব’ হইয়াছে বলিয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্রও সমকালের নিকট স্বীকার করিয়াছেন। এমনকি তথ্যানুসন্ধান মিশনের চাহিদার ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগ যেই সকল তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাইয়াছে, সেইগুলি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে দেওয়া হইয়াছে মর্মে তিনি যেই বক্তব্য দিয়াছেন, উহাও সন্তোষজনক নহে। প্রথমত, তথ্য প্রদানে বিলম্বের দায়টি তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাঁধে চাপাইতে চাহিয়াছেন। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের চাহিদামাফিক সকল তথ্য প্রদানের তথ্য এই বক্তব্যে নাই। প্রতিবেদনমতে, হতাহতদের সুনির্দিষ্ট তালিকসহ বাংলাদেশের নিকট ১৬ প্রকার তথ্য চাহিয়াছিল জাতিসংঘের তদন্ত দল। কিন্তু সরকার তাহাদের ‘আংশিক’ তথ্য দিয়াছে। উপরন্তু বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার সহিত সাক্ষাৎ করিবার একাধিক অনুরোধেরও উত্তর মিলে নাই বলিয়া সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাইয়াছে।
সরকার হয়তো ভাবিতেছে, সরবরাহকৃত তথ্য সরকারেরই বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে যাইবে। ইহাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যদ্রূপ দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হইতে পারে, তদ্রূপ সংস্থাগুলিও সমালোচনা ও অসুবিধার সম্মুখীন হইতে পারে। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ গঠনকার্যে বিঘ্ন ঘটিতে পারে। কিন্তু এমন তো নহে, জাতিসংঘ দল অযাচিতভাবে উক্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করিতে আসিয়াছে। বরং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের নিমিত্তে তাহাদের আমন্ত্রণ জানায়। তখন এমনটাও বলা হইয়াছিল, বিষয়টি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। শুধু উহাই নহে, আমরা জানি, সরকারের আমন্ত্রণে আগস্টের শেষ দিকে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঢাকায় আসেন মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের তিন সদস্য। তাহারা কীভাবে কাজ করিবেন, কী সহযোগিতা লাগিবে; সরকারকে অবহিত করেন। তৎসহিত বাংলাদেশের চাহিদা সম্পর্কে অবগত হইয়া অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া লইয়া আলোচনা সমাপ্ত করেন। ইহার পরই মূল তদন্ত দল ঢাকায় আগমন করে সেপ্টেম্বরে। অর্থাৎ তদন্ত স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্যকরণে জাতিসংঘ কী কী তথ্য চাহিতে পারে, উক্ত বিষয়ে সরকার তদন্ত শুরুর পূর্বেই অবগত ছিল। তথ্যানুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের জনৈক কর্মকর্তাও বলিয়াছেন, ঢাকার পক্ষ হইতে তদন্তের স্বার্থে সকল প্রকার নথি যাচাইয়ের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেওয়া হইয়াছিল।
আমরা মনে করি, ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে তো বটেই, জুলাই-আগস্টের সকল হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে বিরাজমান সংশয়সমূহ দূরীকরণেও আলোচ্য তদন্তটি যথাযথভাবে সমাপ্ত হওয়া আবশ্যক। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার হইলে আন্তর্জাতিক পরিসরে বরং দেশ ও সংস্থাগুলির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হইতে পারে। তাই সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করিতে পারে। প্রতিবেদনে এই আশঙ্কাও প্রকাশিত, পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় হয়তো জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল নূতন করিয়া নির্ধারিত সময় অনুসারে জানুয়ারির মধ্যভাগে অসম্পন্ন প্রতিবেদন জমা দিতে পারে। এমনটা হইলে নিঃসন্দেহে তাহা হইবে দুর্ভাগ্যজনক। কারণ ইহার জের জাতিকে ভবিষ্যতে বিভিন্নভাবে টানিতে হইতে পারে।
Posted ৫:০০ এএম | সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।