বৃহস্পতিবার ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

অনিরাপদ এক্সপ্রেসওয়ে আর কত মৃত্যু হলে কর্তৃপক্ষ সজাগ হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   110 বার পঠিত

অনিরাপদ এক্সপ্রেসওয়ে আর কত মৃত্যু হলে কর্তৃপক্ষ সজাগ হবে

উন্নত দেশের পরিবহনের আদলে তৈরি দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়ার দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহজ হলেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি মোটেই কমেনি। এক্সপ্রেসওয়ে মানে নিরাপদ ও সময়সাশ্রয়ী যোগাযোগব্যবস্থা। কিন্তু এই সড়কে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার সংখ্যা এত বেড়েছে, একে ‘মৃত্যুফাঁদ’ বললেও অত্যুক্তি হবে না।

গত শুক্রবার ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় যে ‘দুর্ঘটনায়’ ছয়জন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হন, একে দুর্ঘটনা না বলে কর্তৃপক্ষগুলোর সম্মিলিত অবহেলা ও অমনোযোগের ফল বলা চলে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার সময় সেতুর টোল পরিশোধের জন্য একটি মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল মাওয়ামুখী দাঁড়িয়ে ছিল। তখন ঢাকা-কুয়াকাটা পথে চলাচলকারী বেপারী পরিবহনের একটি বাস ওই তিনটি যানবাহনকে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এ সময় মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার দুমড়েমুচড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

প্রথমেই প্রশ্ন আসে, টোল প্লাজায় কীভাবে অপেক্ষমাণ গাড়িকে পেছন থেকে বাস ধাক্কা দিল? সেখানে সব যানবাহনেরই গতি শ্লথ থাকার কথা। আর যদি বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তার কারণও খুঁজে বের করতে হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবের হাতে আটক চালক নূরুদ্দিন জানিয়েছেন, তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ দুই বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। তিনি যে বাসটি চালাচ্ছিলেন, সেটির ফিটনেস সনদ ছিল না। সড়কে বেশির ভাগ দুর্ঘটনায় একই অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের চিত্র আমরা দেখে আসছি। প্রশ্ন হচ্ছে, এ রকম একটি ফিটনেসবিহীন গাড়ি একজন লাইসেন্সবিহীন চালককে দিয়ে কীভাবে সড়কে নামিয়ে দেওয়া হলো? কর্তৃপক্ষগুলো কী করেছে? বাসমালিকেরা কি জবাবদিহি ও আইনের ঊর্ধ্বে?

এ রকম একটি আধুনিক ও দ্রুতগতির সড়কে কেন সেকেলে টোল ব্যবস্থাপনা থাকে, সেটাও একটি বড় প্রশ্ন। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসের মতো ছোট যান এবং বাস–ট্রাকের মতো বড় গাড়ির সঙ্গে এক প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে টোল দিতে হয়—সেটিও আরেকটি বড় প্রশ্ন। এটা নিশ্চিতভাবেই ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার প্রতি কম নজর দেওয়া হয়েছে। সড়কে বিভিন্ন যানবাহনের গতি বেঁধে দেওয়া হলেও চালকেরা মানেন না। হাইওয়ে পুলিশ কয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? মনে রাখতে হবে, গাড়ির গতিসীমা সাইনবোর্ডে টাঙিয়ে রাখলেই তাঁদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির যাত্রীরা বলেছেন, তাঁরা ঘন কুয়াশার মধ্যেও সড়কে পুলিশ দেখেননি। এই দায়িত্বহীনতার জবাব কী।

সড়ক নিরাপদ রাখতে হলে সড়ক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, হাইওয়ে পুলিশ, যাত্রী ও চালক—সবার সচেতনতা জরুরি। যেকোনো কোনো পক্ষ দায়িত্বে অবহেলা করলে বা অসতর্ক থাকলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, শুক্রবারের দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ।

এক্সপ্রেসওয়েতে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৮০ জন আহত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৬ জন।  মহাসড়কটির সাইন-সংকেতব্যবস্থাও আধুনিক নয়, গতানুগতিক।

এক্সপ্রেসওয়েতে সংঘটিত দুর্ঘটনার পেছনে হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট। অনেক দিন ধরেই টোল প্লাজার ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটি কেউ করেননি।

আশা করি, আর কোনো প্রাণহানির আগেই কর্তৃপক্ষের চৈতন্যোদয় হবে।

Facebook Comments Box

Posted ৫:৪৫ এএম | রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।