| শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 19 বার পঠিত
দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশের কাজ শেষ। তেজগাঁও থেকে মহাখালী অংশের ঢালাইয়ের কাজ চলছে। একই সঙ্গে ওঠানামার সব গার্ডারের কাজও প্রায় শেষ। কর্তৃপক্ষ বলছে, আর্থিক জটিলতা কাটিয়ে কাজ চলছে পুরোদমে। জুনের মধ্যে শেষ হবে এ অংশের কাজ। সেক্ষেত্রে চলতি বছরে উদ্বোধন হতে পারে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এই প্রকল্প। প্রায় তিন মাস আগে বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশের কাজ শেষ হয়েছে। গেল বছরের ডিসেম্বরে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অর্থ জটিলতায় কাজ তেমন এগোয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দুমাসের এ ফারাক পুষিয়ে নিতে এখন চলছে পুরো প্রকল্প জুড়ে ব্যস্ত সময়। কেটে গেছে আর্থিক সংকট। নতুন উদ্যমে কাজ করতে একই সঙ্গে কাজ করছে প্রায় চার হাজার শ্রমিক।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম শাখাওয়াত আখতার জানান, ব্যাংকের কিছু জটিলতার কারণে টাকা আটকে ছিল। এখন সমস্যা কেটে গেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে।
শাখাওয়াত আখতার আরও জানান, আর কয়েকটি টিগার্ডার বসালেই এ অংশের ভিত্তির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। তেজগাঁও থেকে মহাখালী অংশের ঢালাইয়ের কাজ চলছে। একই সঙ্গে ওঠানামার সব গার্ডারের কাজও প্রায় শেষ। সেক্ষেত্রে এ অংশের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
পুরোপুরি রেল লাইনের ওপরে হওয়ায় এ প্রকল্পের জনদুর্ভোগ তুলনামূলক কম। তবে আর্থিক জটিলতার কারণে কাজে কিছুটা দেরি হলেও চলতি বছরই এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ অংশের সংযোগ ও ট্রাফিক ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এশিয়ান হাইওয়ে করিডোর এ উন্নত পর্যায়ের সেবা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এটি আঞ্চলিক সংযোগকে উন্নতকরণ ও যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন, যোগাযোগ ব্যয় এবং যানবাহন পরিচালন খরচ হ্রাস করতে ২০১১ সালে নেয়া হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা।
বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার প্রকল্প নেয়া হয় ৩ ভাগে। এর মধ্যে মূল উড়াল সড়কের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ, নকশা বদল, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় ৪ বার পিছিয়ে দেয়া হয় নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা। এ সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।
প্রথমে প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালে শেষ করার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ২০১৮ সালে করা হয়। পরে আবার ২০২২ সাল করা হয়। সর্বশেষ কাজ শেষ করার সময়সীমা পিছিয়ে ২০২৩ সালের জুন নির্ধারণ করা হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ঢাকার যানজট নিরসনে এটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করবে। এটি হেমায়েতপুর-কদমতলী-নিমতলী-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলোও ঢাকাকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। ফলে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট কমবে।
সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) তথ্যানুযায়ী, এক্সপ্রেসওয়েটিতে ১১টি টোল প্লাজা থাববে, যার পাঁচটিই এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে। এর ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। যোগাযোগ ব্যয় ও ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। কমবে ভ্রমণের সময় ও খরচও। যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি এ প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Posted ১১:৪৯ পিএম | শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।