বুধবার ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

পাকিস্তানে ভারত নিয়ে চিন্তা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   115 বার পঠিত

পাকিস্তানে ভারত নিয়ে চিন্তা নেই

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা আজকের জন্য শুধুই ভারত–পাকিস্তানের। বিশ্ব ক্রিকেটের দৃষ্টি আজ থাকবে কেবলই দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ম্যাচটার দিকে। রাজনৈতিক বৈরিতায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশী দেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক এমনিতেই অম্লাত্মক। ভারত নিজেদের ম্যাচগুলো পাকিস্তানে খেলছে না বলে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তার ঝাঁজ আরও বাড়িয়েছে। শুধু ভারতের কারণেই টুর্নামেন্টটা হচ্ছে দুই দেশে। যদিও ভারত নিজেরা খেলছে শুধু দুবাইয়ে।

তবে যদি বলা হয়, খোদ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক পাকিস্তানের দৃষ্টিই আজ পুরোপুরি দুবাইয়ের দিকে নেই, খুব বেশি ভুল বলা হবে না বোধহয়। অনেক বছর ধরেই পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানে দেশটির রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবার একটাই চিন্তা—অঘটন এড়িয়ে খেলাটা যেন ঠিকঠাকভাবে হয়, নিরাপদে থাকতে পারে অতিথি দলগুলো। দুবাইয়ের ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের চেয়েও তাই তাদের বড় চিন্তা পাকিস্তানে থাকা দলগুলোর নিরাপত্তা ও সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা।

পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক দলগুলোর নিরাপত্তা শঙ্কা অনেক আগে থেকেই ছিল। সেটি আরও বেড়ে যায় ২০০৯ সালের মার্চে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর। ওই ঘটনায় পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দূরে সরে ছিল পাকিস্তান থেকে। ২০১৫ সাল থেকে আবার বিদেশি দলগুলো দেশটিতে আসতে শুরু করে এবং তখন থেকে এই দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই সফরকারী দলগুলোর সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার শর্ত জুড়ে দেওয়া।

অতিথিদের স্বস্তি দিতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সে আয়োজনে ত্রুটি রাখে না কখনো। তা এতটাই যে অনেক সময় বাড়তি এ নিরাপত্তাব্যবস্থা কিছু সম্পূরক প্রশ্নও তুলে দেয়। যেখানে সেনা, পুলিশ আর ভারী অস্ত্র দিয়ে ক্রিকেটকে সুরক্ষিত রাখতে হয়, সেখানে খেলা হওয়ার দরকার কী?

এটা তো কোনো খেলার জন্যই স্বাভাবিক পরিস্থিতি হতে পারে না! হোটেল আর মাঠবন্দী জীবন কি একধরণের মানসিক চাপও তৈরি করে না ক্রিকেটারদের ওপর? কাল ইসলামাবাদে পিসিবি–সংশ্লিষ্ট একজনকে প্রশ্নটা করা হলে অবশ্য তিনি পাল্টা যুক্তি দিলেন, ‘বিদেশি দলগুলো চায় বলেই তো তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। এটা না হলে তারাই পাকিস্তানে আসবে না খেলতে।’

২০২০ সাল থেকে এ নিয়ে মোট পাঁচবার বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে এসে প্রতিবারই দেখছে একই দৃশ্য। টিম হোটেল, অনুশীলন, খেলার মাঠ—সর্বত্র সশস্ত্র প্রহরা। অবশ্য শ্রীলঙ্কা দলের ওপর হামলার আগের বছরও পাঁচ ওয়ানডের সিরিজ খেলতে এসে প্রায় শৃঙ্খলিত জীবনে আটকা পড়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। লাহোরের টিম হোটেলে সেবার খেলোয়াড়দের দরজায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল নিরাপত্তারক্ষীদের।

এবারও পরিস্থিতি অনেকটা সে রকমই। ইসলামাবাদে পুরো বাংলাদেশ দল আছে স্যারিনা হোটেলের একটি নির্দিষ্ট ফ্লোরে, যেখানে অন্য কোনো অতিথি নেই। ফ্লোরের বিভিন্ন জায়গায় আছে নিরাপত্তা প্রহরা। ফাঁকা সময়ে দলের কোনো সদস্য নিরাপত্তারক্ষী নিয়েও হোটেল থেকে বের হতে পারবেন না। কারণ, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নিরাপত্তা পুরো দলের জন্য যা, একজনের জন্যও তা।

বহুজাতিক টুর্নামেন্ট বলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তাটা আরও বেশি। তিন শহরে একসঙ্গে অনেক দলকে নিরাপদ আতিথেয়তা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ পাকিস্তানের সামনে। এ ছাড়া পাকিস্তানে আইসিসির কোনো ইভেন্ট হচ্ছে দীর্ঘ ২৮ বছর পর। এই টুর্নামেন্ট ভালোভাবে আয়োজন করতে পারলে আন্তর্জাতিক দলগুলো ভবিষ্যতে আরেকটু চিন্তামুক্ত থেকে এখানে খেলতে আসতে পারবে। স্বাভাবিকভাবে পাকিস্তানও তাই চাইবে আরও বেশি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটাকে ক্রিকেটের জন্য নিরাপদ পাকিস্তানের বিজ্ঞাপন হিসেবে দেখাতে।

কাল ইসলামাবাদ ক্লাবের ক্রিকেট ওভালে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনেও চোখে পড়েছে সেই চেষ্টা। সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনৈতিকদের অভিজাত এই স্পোর্টস এবং সোশ্যাল ক্লাবে অন্য সময়ও সবার প্রবেশাধিকার থাকে না। আর এখন তো আন্তর্জাতিক ইভেন্টেরই অংশ এটি। বাংলাদেশ দলের অনুশীলন দেখতে যাওয়া সাংবাদিকদের মাঠে যেতে হয়েছে দুই স্তরের নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে। অনুশীলনের আগে ইউনিসেফের উদ্যোগে শিশু–কিশোরদের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলোয়াড়দের একটা অনুষ্ঠান ছিল। নিরাপত্তাচৌকিতে আটকে গিয়ে অনুষ্ঠানের অফিশিয়াল ফটোগ্রাফারই নাকি শেষ পর্যন্ত ঢুকতে পারেননি ভেন্যুতে!

গত পাঁচ বছরে পাঁচবার পাকিস্তানে আসায় বাংলাদেশ দল অবশ্য এখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থায় অভ্যস্তই হয়ে গেছে। কখনো মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে, কখনো অন্য ভূমিকায় এই পাঁচবারই দলের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার রাবীদ ইমামও কাল ইসলামাবাদ ক্লাবে বলছিলেন সে কথাই, ‘পাঁচ বছর ধরে এখানে একই রকম নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখছি। খুবই কঠোর নিরাপত্তা প্রটোকল এবং বিশাল একটা ব্যবস্থা। তবে আমাদের খেলোয়াড়েরা এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আর শুধু জাতীয় দল নয়, আমাদের ‘এ’ দল, অনূর্ধ্ব–১৯ দল, নারী দলও পাকিস্তান সফর করেছে। তাদের ক্ষেত্রেও মোটামুটি কাছাকাছি মানের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল। গত কয়েক বছরে একাধিকবার পাকিস্তানে আসায় সবাই এটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে।’

শুধু খেলোয়াড়দের নয়, বিশাল নিরাপত্তাযজ্ঞের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সংশ্লিষ্ট সবাইকেই। ইসলামাবাদের সাধারণ মানুষও তার বাইরে নয়। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ দুবাইয়ে হওয়ায় এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। রোহিত–কোহলিরা এখানে খেলতে এলে তাদের যে পর্যায়ের নিরাপত্তা দিতে হতো, তাতে টুর্নামেন্টটা হয়ে যেত আরও বেশি ভারতকেন্দ্রিক। এখন তো অন্তত পাকিস্তানে ভারত নিয়ে চিন্তা নেই।

Facebook Comments Box

Posted ৩:৪৬ এএম | রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।