শুক্রবার ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

ভোক্তার আয় বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ আইএমএফ’র শর্তে নেই

  |   শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   21 বার পঠিত

ভোক্তার আয় বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ আইএমএফ’র শর্তে নেই

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে তিন স্তরে নানা শর্ত বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে।

এর মধ্যে পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তার ভোগান্তি বাড়াবে-এমন শর্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে পণ্যমূল্য বেড়ে গিয়ে ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভোক্তার আয় বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ আইএমএফ’র শর্তে নেই। সংস্থাটি অর্থনৈতিক সংস্কারে ‘ধীরে চলো নীতি’র মতো শর্ত দিয়েছে। ফলে সংস্কারের সুফল অর্থনীতিতে দ্রুত আসবে না।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, আইএমএফ’র শর্তের কাঁধে ভর সরকার কোনো সমীক্ষা বা প্রভাব বিশ্লেষণ ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে দ্রুতগতিতে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি করছে। এতে বাজারে ভোক্তার ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না।

সরকার দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমিয়ে সাময়িকভাবে হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাবে। কিন্তু ভোক্তার ওপর খরচের যে বাড়তি চাপ পড়বে তা তারা সামাল দিতে পারবেন কিনা-সেটা দেখা উচিত। ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা কমে গেলে তারা খরচ কমিয়ে দেবেন। এতে বেচাকেনা কমে যাবে। অর্থনীতিতে লেনদেন কমে যাবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপিতে।

সূত্র জানায়, মন্দা মোকাবিলায় আইএমএফ থেকে সরকার ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ’র নির্বাহী বোর্ডে ঋণ প্রস্তাবটি অনুমোদন হতে পারে। এই ঋণ পেতে তিনটি স্তরে সরকারকে বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

এর মধ্যে প্রথম ধাপে করতে হবে সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গুণগত মান উন্নয়নের শর্তগুলো। এসব দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অবকাঠামোর উন্নয়নের আওতার শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে এক বছরের মধ্যে এবং সাধারণ মানের শর্তগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে দুই বছরের মধ্যে। সব খাতেই রয়েছে ভোক্তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট শর্ত। এগুলো বাস্তবায়ন করলে পণ্যেও দাম বাড়বে, চাপ বাড়বে ভোক্তার ওপর।

গুণগত মানের আওতায় দ্রুত ভর্তুকি কমাতে হবে। বাড়াতে হবে ভর্তুকি দেওয়া হয়-এমন সব পণ্য ও সেবার দাম। প্রয়োজনে একাধিকবার বাড়াতে হবে। এ জন্য সময় দেওয়া হবে এক বছর। এর মধ্যে বাজেট ঘাটতি সহনীয়মাত্রায় নামিয়ে আনতে হবে। এ ঘাটতি জিডিপির আকারের ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে।

পর্যায়ক্রমে আরও কমিয়ে ৩ শতাংশে নামাতে হবে। বর্তমানে ঘাটতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। গত নভেম্বর পর্যন্ত ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে ঘাটতি হয়েছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ। ঘাটতি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঘাটতি মেটাতে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।

গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ বাজারে দ্বিগুণের বেশি টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকাকে হাইপাওয়ার্ড মানি বলা হয়। এতে মূল্যস্ফীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। আইএমএফ’র মতে, ভর্তুকি কমালে সরকারের ঋণ কমবে। এতে মূল্যস্ফীতিতে চাপ কমবে। সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বস্তি ফিরবে।

কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ভর্তুকি কমাতে সরকার অপরিকল্পিতভাবে কোন নীতিমালা ছাড়াই দাম বাড়াচ্ছে। এতে বাজারে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। কোন খাতে কত দাম বাড়ানোর কি প্রভাব বাজারে পড়বে তার কোনো সমীক্ষা নেই। ফলে সব চাপ গিয়ে পড়বে ভোক্তার ওপর।

গুণগতমান উন্নয়নের আওতায় নিট রিজার্ভের হিসাবও প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা সময় নিয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় দিয়ে যখনই আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে, তখনই রিজার্ভে চাপ কমবে। এরপরই নিট রিজার্ভ প্রকাশ করা হবে। ডলারের দামও পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

এতে ডলারের দাম আরও বাড়বে। কমবে টাকার মান। এতে আমদানি পণ্যসহ সব পণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে ভোক্তার ওপর চাপ বাড়াবে। একই সঙ্গে বেড়ে যাবে সরকার ও সেরকারি খাতের বৈদেশিক দেনার পরিমাণ। দেশিয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও ডলারের হিসাবে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। বেড়ে যাবে টাকার হিসাবে। ফলে নিট প্রবৃদ্ধি হবে কম।

অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় এক বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো। এর সুদের হার বাজারভিক্তিক করার কাঠামো দুই বছরের মধ্যে তৈরি করতে হবে। ঋণ ও আমানতের সুদের হার পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।

এতে ঋণের সুদের হার বেড়ে গিয়ে শিল্পের ও ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। ফলে বাড়বে পণ্যের দাম। এর দায়ও চাপবে ভোক্তার ওপর। এটি দ্রুত করতে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতের সুদের হারের সীমা তুলে নিয়েছে। ঋণের ক্ষেত্রে ভোক্তা ঋণের সুদ ১২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো নানা ফি ও কমিশন আরোপের মাধ্যমে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে।

খেলাপি ঋণ কমাতে অচিরেই দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চায় আইএমএফ। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি ব্যাংকগুলোর এমডিদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন। খেলাপি ঋণ কমানোর একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আইএমএফ’র শর্ত সব সময়ই তাৎক্ষণিকভাবে ভোক্তার বিপক্ষে যায়। সরকারের পক্ষে যায়। কিন্তু এর মাধ্যমে সরকারকে অজনপ্রিয় করে তোলে। সরকার তাদের সহজ শর্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে। কিন্তু সংস্কারের ফলে যেগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবহিদিতা আসতে পারে, সেগুলোতে গড়িমসি করে।

তিনি আরও বলেন, খেলাপি কমানোর পদক্ষেপটি থাকবে শুভঙ্করের ফাঁকিতে ভরা। কারণ বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ আদায় করা কঠিন হবে। এগুলো রাইটঅফ বা নবায়ন করে খেলাপি ঋণ কমানো হবে। এতে প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকের স্বাস্থ্য ভালো হবে না।

সূত্র জানায়, জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা দেখতে চায় আইএমএফ। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে দ্রুত। যাতে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে এগুলোর দাম সঙ্গে সঙ্গে সমন্বয় করা যায়।

এ জন্য এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় দাম বাড়ানোর চাপ আছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দেশের বাজারে কমানোর চাপ নেই। আর্থিক খাতের বিভিন্ন আইন সংশোধন করতে হবে এক বছরের মধ্যে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ শুরু করেছে।

সাধারণ মান উন্নয়নের আওতায় শর্তগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে দুই বছরের মধ্যে। এর মধ্যে রয়েছে, রাজস্ব বাড়ানোর কাঠামো তৈরি, জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির হিসাব পদ্ধতি আধুনিকায়ন করা, তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরিভিত্তিতে।

টাকা শক্তিশালী করতে রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও রেমিট্যান্স বাড়ানোতে থাকতে হবে বিশেষ নজর। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের তুলনায় আয় বাড়লে টাকা শক্তিশালী হবে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরকারের ঋণ গ্রহন প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ কমিয়ে বিকল্প বাজার বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে হবে। এর মাধ্যমে সরকার ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ কর্পোরেট সংস্থা ও সাধারণ সঞ্চয়কারীদের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারবে। এতে ব্যাংকের ওপর চাপ কমবে। তারল্য ব্যবস্থাপনায় ও মুদ্রানীতিতে শৃঙ্খলা ফিরবে।

ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারের জন্য জরুরি প্রয়োজনে ঋণ নিতে এক দিনের বা ওভার নাইট অর্থায়ন প্রক্রিয়ার কাঠামো দ্রুত করতে হবে। এতে ব্যাংকের ওপর চাপ কমবে। ঋণের বহুমুখী দুয়ার খুলবে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে।

Facebook Comments Box

Posted ১২:০৩ এএম | শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(173 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।