শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

মহানবী (সা.)-এর যুগে যেমন ছিল মদিনার রাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   116 বার পঠিত

মহানবী (সা.)-এর যুগে যেমন ছিল মদিনার রাষ্ট্র

হিজরতের পর মদিনায় যে মুসলিমসমাজ গড়ে ওঠে, তার ভিত্তি হয়েছিল কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষার ওপর। মদিনা রাষ্ট্র বিভিন্ন দিক থেকে অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল। নিম্নে বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো—

সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর
এ রাষ্ট্রের প্রথম বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে একমাত্র মহান আল্লাহ সার্বভৌমত্বের অধিকারী। ঈমানদারদের শাসন হচ্ছে মূলত খিলাফত বা আল্লাহর প্রতিনিধিত্বশীল শাসন।

এবং তা আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাহ থেকে উৎসারিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করো, তাহলে তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসুলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী। ’ (সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ৫৯)

সব মানুষের প্রতি সুবিচার
দ্বিতীয়ত, যে বৈশিষ্ট্যের ওপর মদিনা রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল, তা ছিল সবার জন্য সমান আইন। রাষ্ট্রের সাধারণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত সবার ওপর তা সমানভাবে প্রয়োগ হতো।

তাতে কারো জন্য কোনো ব্যতিক্রমধর্মী আচরণের বিন্দুমাত্র অবকাশ ছিল না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে এ কথা ঘোষণা করার নির্দেশ দেন— ‘এবং আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে। ’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ১৫)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এ মূলনীতি বর্ণনা করেছেন, ‘তোমাদের আগে যেসব উম্মত ছিল তারা এ জন্য ধ্বংস হয়েছে যে নিম্ন পর্যায়ের অপরাধীদের আইন অনুযায়ী শাস্তি দিত, আর উচ্চ পর্যায়ের অপরাধীদের ছেড়ে দিত। ওই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, আমার কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করত, তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে ফেলতাম। ’ (বুখারি ও মুসলিম)

মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা
এ রাষ্ট্রের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য ছিল বংশ, বর্ণ, ভাষা এবং দেশ-কাল-নির্বিশেষে সব মুসলমানের অধিকার সমান—এ মূলনীতির প্রতিষ্ঠা করা। এ রাষ্ট্রের পরিসীমায় কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল, বংশ বা জাতিবিশেষ কোনো অধিকার লাভ করতে পারেনি, অন্যের মোকাবেলায় কারো মর্যাদা খাটো হতে দেওয়া হয়নি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। ’ (সুরা : আল-হুজরাত : ১০)

সরকারের দায়িত্ব ও জবাবদিহি
সরকারের দায়িত্ব ও জবাবদিহি এ রাষ্ট্রের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল, এ রাষ্ট্রের প্রশাসন, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা, ইখতিয়ার ও অর্থ-সম্পদকে আল্লাহর আমানত হিসেবে গণ্য করা হতো। আল্লাহভীরু, ঈমানদার এবং ন্যায়পরায়ণ লোকদের হাতে তা ন্যস্ত ছিল। কোনো ব্যক্তি নিজের ইচ্ছামতো বা নিজ স্বার্থে আমানতের খিয়ানত করার অধিকার রাখত না। এ আমানত যাদের ওপর সোপর্দ করা হয়েছিল তারা এর জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিল।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা কামনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কত উত্কৃষ্ট! আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। ’ (সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ৫৮)

শুরা বা পরামর্শ
এ রাষ্ট্রের পঞ্চম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো মুসলমানদের পরামর্শ এবং তাদের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে রাষ্ট্রের সব কার্যক্রম পরিচালিত হতো। রাষ্ট্রপ্রধান পরামর্শের ভিত্তিতে সব কাজ পরিচালনা করতেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে। ’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৩৮)

ভালো কাজে সরকারের আনুগত্য
যার ওপর এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত ছিল তাহলো, শুধু ভালো কাজেই সরকারের আনুগত্য অপরিহার্য। পাপাচারে (মাসিয়াত) আনুগত্য পাওয়ার অধিকার কারো নেই। অন্য কথায়, এ মূলনীতির তাৎপর্য এই যে সরকার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের শুধু সেসব নির্দেশই তাদের অধীন ব্যক্তিরা এবং প্রজাসাধারণ মেনে চলত, যা আইনানুগ ও বৈধ। আইনের বিরুদ্ধে নির্দেশ দেওয়ার তাদের কোনো অধিকার ছিল না। পবিত্র কোরআনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাইয়াত ও আনুগত্যের শপথ গ্রহণের ক্ষেত্রেও আনুগত্যের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং সৎ কাজে তোমাকে অমান্য করবে না। ’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ১২)

পদমর্যাদার দাবি ও লোভ নিষিদ্ধ
মদিনা ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি ও বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে সাধারণত রাষ্ট্রের দায়িত্বপূর্ণ পদের জন্য সে ব্যক্তিই বেশি অযোগ্য, অনুপযুক্ত, যে নিজে পদ লাভের অভিলাষী এবং সে জন্য সচেষ্ট। আল্লাহ তাআলা কোরআন শরিফে বলেন, ‘এ তো আখিরাতের সেই আবাস, যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য, যারা এই পৃথিবীতে উদ্ধত হতে এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। ’ (সুরা : আল-কাসাস, আয়াত : ৮৩)

কোরআনি শাসন
রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য এই রাষ্ট্রের শাসক এবং তার সরকারের সর্বপ্রথম কর্তব্য এই ছিল যে কোনো ধরনের পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই যথাযথভাবে সে ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা করবে, ইসলামের চারিত্রিক মানদণ্ডানুযায়ী ভালো ও সৎ গুণাবলির বিকাশ ঘটাবে এবং মন্দ ও অসৎ গুণাবলির বিনাশ সাধন করবে। কোরআন মজিদে এ রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আমি এদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ নিষেধ করবে। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৪১)

ভালো কাজে সহযোগিতা
এ রাষ্ট্রের আরো একটি বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে মুসলিমসমাজের প্রতিটি ব্যক্তি সত্য বাক্য উচ্চারণ করবে, সৎ ও কল্যাণের সহায়তা করবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের যেখানেই কোনো ভুল এবং অন্যায় কাজ হতে দেখবে, সেখানেই তাকে প্রতিহত করতে নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। মুসলিমসমাজের প্রত্যেক সদস্যের এটা শুধু অধিকার নয়, বরং অপরিহার্য কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের নির্দেশ হচ্ছে, ‘সৎ ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করবে এবং পাপ ও সীমা লঙ্ঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)

 

এসব বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, যা এর আগে কেউ দেখেনি। এ বৈশিষ্ট্যগুলোর কিঞ্চিৎ যদি বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আবার সমাজে ও রাষ্ট্রে শান্তির ফল্গুধারা প্রবাহিত হবে।

Facebook Comments Box

Posted ৭:০৪ এএম | রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।