| মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট | 24 বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে বলে ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা গেছে। এ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারবিরোধীরা ব্যাপক সমালোচনা শুরু করেছে। এমন সময় এই নথি ফাঁস হলো, যখন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার দাবি করেছে, ফাঁস হওয়ার পর এই নথির তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
ফাঁস হওয়া পেন্টাগনের গোপন রিপোর্টে যেটি বিবিসি দেখেছে যাতে পরিষ্কার বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করছে। রিপোর্টে ইউক্রেন যুদ্ধ ছাড়াও চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কটি মিত্র দেশের প্রসঙ্গও রয়েছে। রিপোর্টটি ফাঁস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক চাপে পড়তে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, ফাঁস হওয়া রিপোর্টের বিষয়গুলো তারা তদন্ত করছে, কিন্তু একই সঙ্গে সিউল জোর দিয়ে বলছে প্রেসিডেন্টের অফিসের ভেতর হওয়া ব্যক্তিগত আলাপে আড়িপাতা অসম্ভব। কীভাবে এবং কোন সূত্রে পেন্টাগনের এই গোপন রিপোর্ট ফাঁস হলো মার্কিন সরকার তা এখন তন্ন তন্ন করে খুঁজছে। পেন্টাগন বলছে, এই ফাঁসের ঘটনা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় রকমের হুমকি। গতকাল যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফোনালাপ করেছেন এবং বলেছেন যে, নথি ফাঁস হওয়ার পর পরিবর্তন করা হয়েছে। বিবিসির দেখা এই নথি পড়ে মনে হয়েছে, ইউক্রেন ব্যবহার করতে পারে এমন অস্ত্র-গোলাবারুদ বিক্রি করা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার নীতিনির্ধারকরা বড় ধরনের দোটানায় পড়েছেন। ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়াকে চাপ দিয়ে চলেছে, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া এখনো তা শোনেনি। যুক্তি হিসাবে তারা বলছে, যুদ্ধে লিপ্ত কোনো দেশে অস্ত্র পাঠানো তাদের জাতীয় নীতির পরিপন্থি।
গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কামানের গোলা বিক্রি করতে সম্মত হয়। কারণ ইউক্রেনকে দিতে গিয়ে আমেরিকার নিজের মজুতে টান পড়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া শর্ত দিয়েছে তাদের কাছ থেকে পাওয়া গোলাবারুদ যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দিতে পারবে না। ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, দক্ষিণ কোরিয়া এই অস্ত্র বিক্রি চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ তার আশঙ্কা করছে, যুক্তরাষ্ট্র এসব গোলা নিশ্চিতভাবে ইউক্রেনে পাঠাবে। এই উদ্বেগ নিয়ে এ বছরের পহেলা মার্চে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দুই জন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মধ্যে কথোপকথন ফাঁস হওয়া ঐ রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।
বলা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কিম সুং হানকে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই এসব অস্ত্র শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না, তা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। ঐ কথোপকথন থেকে বোঝা যায় যে, দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা এমন উদ্বেগেও রয়েছেন যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন হয়তো প্রেসিডেন্ট ইয়ুনকে সরাসরি ফোন করে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে অনুরোধ করবেন। দক্ষিণ কোরিয়াকে যদি তা মানতে হয়, তাহলে মানুষের কাছে এমন বার্তা যাবে যে, আমেরিকার চাপে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার তাদের নীতি বদলে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
গবেষণা সংস্থা ট্যাংক থার্টি-এইট নর্থের কোরিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক জেনি টাউন বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক চটে যাওয়ার ভয়ে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অনীহা রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কে সব সময় স্পর্শকাতর একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন। তিনি বিবিসিকে বলেন, গোপন রিপোর্টটি ফাঁস হওয়ার সময়টি খুবই স্পর্শকাতর। কারণ, দুই দেশের মধ্যে মৈত্রীর ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন দুই সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। গোয়েন্দা রিপোর্টে দক্ষিণ কোরিয়া সংশ্লিষ্ট অংশগুলো বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর সিউল সরকার বড় রকম বিড়ম্বনায় পড়েছে। কারণ, বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছে এমন গোপন শলা-পরামর্শ কীভাবে আমেরিকানরা শুনল। সোমবার এক বিবৃতিতে বিরোধী দল বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে এবং সেই সঙ্গে সরকার জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। —বিবিসি
Posted ১০:৪৯ পিএম | মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।