এন এস এম মঈনুল হাসান সজল | শনিবার, ০১ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট | 78 বার পঠিত
মা–বাবার বিচ্ছেদ মামলা চলছে পারিবারিক আদালতে। শুনানি শেষে দম্পতির কিশোরী কন্যাকে ডাকলেন বিচারক। বাইরে অপেক্ষায় বিচ্ছেদের রায়-প্রত্যাশী দম্পতির প্রতীক্ষার মুহূর্তগুলো যেন কাটেছে না। এদিকে ভেতরে বিচারক কন্যাটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তার কিছু বলার আছে কি না। কন্যাটির উত্তর—‘আমাকে কি বলতেই হবে?’ অস্কারজয়ী ইরানি চলচ্চিত্র ‘আ সেপারেশন’–এর শেষ দৃশ্যটি এটি।
বিয়ে, পরিবার, সন্তানপালন ইত্যাদি বিষয়ের গবেষক ও লেখক বারবারা ড্যাফো হোয়াইটহেড ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত দ্য ডিভোর্স কালচার নামের এক বইতে লেখেন, ১৯৫০ দশকে পৃথিবীর অধিকাংশ অসুখী দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাত না সন্তানদের কারণে আর সামাজিক দৃষ্টিতে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে, তবু তারা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অসুখী সম্পর্কটিই টিকিয়ে রাখত। ১৯৬০ দশকে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা বেশ বেড়ে যায়।
নারী অধিকার আন্দোলন, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, বর্ণবাদমুক্তি ও সমানাধিকারের আন্দোলনের প্রভাবে পরিবারের সনাতন চরিত্র টিকে থাকতে পারছিল না। পরিবারের শিশু-কিশোরদের মঙ্গলের কথা ভেবে যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহবিচ্ছেদ আইন কঠিন করা হলো এবং বিচ্ছেদপ্রার্থীদের ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা ও ক্ষতিপূরণ আরোপ করা হলো। কিন্তু আইনটি অচিরেই অকার্যকর প্রমাণিত হতে থাকল।
১৯৬২ সালে নারীদের ওপর একটি মতামত সমীক্ষায় ৫১ ভাগ নারীই বলেন, তাঁরা শুধু সন্তানের কথা ভেবে অসুখী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবেন না। জরিমানা দিতে হলে তা–ও দেবেন। তাঁরা রাষ্ট্রকে কর দিচ্ছেন, রাষ্ট্রও তাঁদের সন্তানদের দেখভালের কিছু কিছু দায়িত্ব নিক। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের নিয়মকানুন শিথিল করা হলো।
কিশোর বেলায় লিমা (ছদ্মনাম) নামে আমার এক সমবয়সী পরিচিতা ছিল। একদিন হঠাৎ তার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে লিমার বিয়ে হয়ে গেল। এক মাস পরে একদিন প্রচুর কোলাহলের শব্দ শুনতে পেয়ে আমরা দৌড়ে লিমাদের বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি, লিমাকে উঠানের মাঝখানে বসিয়ে চুলের মুঠি ধরে লিমার স্বামী বৃত্তের পরিধি তৈরি করার মতো করে ঘুরাচ্ছে। আর লিমার মা-বাবা, ভাইবোন ও প্রতিবেশীরা সেই দৃশ্য গভীর মনোযোগে পর্যবেক্ষণ করছে। উপস্থিত দর্শকদের কেউ প্রতিবাদ করছে না দেখে আমি জানতে চাইলাম, লিমার অপরাধ কী এবং জানতে পারলাম, লিমার স্বামীর বাড়িতে আর যেতে চায় না। স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চায় না। লিমার পরিবার, শ্বশুরবাড়ি ও সমাজের চোখে বিয়ের এক মাসের মধ্যে বিয়ে ভেঙে দেওয়া এক ঘোরতর অপরাধ। বিপরীতক্রমে, লিমার স্বামী কাবিননামায় স্বাক্ষর করার সঙ্গে সঙ্গে লিমার অভিভাবক হয়ে উঠেছে। অতএব লিমাকে সংসার করতে বাধ্য করানো যেন তার নৈতিক অধিকার। আমি সতীদাহ প্রথার গল্প কেবল বইয়েই পড়েছি, কিন্তু এ রকম শত শত রোমেলার স্বপ্নদাহ নিজের চোখে দেখেছি।
উল্টো গল্পও দেখা হয়েছে, যখন আমি নতুন কাজে যুক্ত হয়েছি। অফিসে ঢুকতেই বন্ধু সাগরের (ছদ্মনাম) বাবার ফোন, সাগরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এমন সহজ সরল বন্ধুটির কি অপরাধ হতে পারে? থানায় যেয়ে জানা গেলো সাগরের স্ত্রী মামলা করেছে। সে মামলার আসামী সাগর ও তার বাবা-মা। নারী নির্যাতন ও যৌতুক হতে শুরু করে নানা অপরাধ। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ছোট বেলা থেকে এই পরিবারটিকে জানি। সাগরের ছোট দুটি বোন আছে। পুরো পরিবারে কেউ কোন দিন জোড় গলায় কথা বলেছে বলে আমার মনে পরে না। অন্যদিকে এও জানি সাগরের স্ত্রীর প্রতিদিনকার চাহিদার মাত্রা সম্পর্কে। যাই হোক, পরে লোক লজ্জার ভয়ে বেশ মোটা অংকের টাকায় বিষয়টি সুরাহা হয়। সাগর আর বিয়ে করেনি।
‘ঢাকায় ৪০ মিনিটে ১টি তালাক’ শিরোনামে গত ১৩ জুন প্রথম আলো অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীরা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন বেশি করছেন। প্রতি ১০ জন বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনকারীর মধ্যে ৭ জনই নারী (প্রথম আলো অনলাইন, ১৩ জুন, ২০২৩)। এই পরিসংখ্যান কাজী অফিস সূত্রে পাওয়া। প্রতিবেদনটি দেখে আমি স্বস্তি পেয়েছি এটা ভেবে যে ২৫ বছর আগে রোমেলারা যেখানে স্বামীর ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছাকে বলি দিয়েছে, আজকের স্বাবলম্বী নারীরা সেখানে নিজের সম্মান ও অধিকার—দুটোই আদায় করতে সক্ষম। কিন্তু অন্য দিকটা দেখতে হবে, মানুষের চাহিদার মাত্রা প্রতিনিয়ত এতটাই বাড়ছে যে, সঙ্গীর সামর্থ্য অতিক্রম করে যাচ্ছে।
আমার কাছে মনে হয়, বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ ভুল সঙ্গী নির্বাচন এবং সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর চেয়ে পরিবারের চাহিদাকে অতিরিক্ত অগ্রাধিকার দেওয়া। এক জোড়া নর-নারী যখন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবনে অনুষঙ্গ হিসেবে কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং মানুষ যোগ হয়।
স্বামীর পরিবার, তথা স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন যদি সহযোগিতা না করেন এবং স্বামী যদি তাঁর পরিবারের অসহযোগিতাকে প্রশ্রয় দিতে থাকেন, সে ক্ষেত্রে একজন নারীর জন্য সংসার হয়ে ওঠে অসহনীয় ও বিষাক্ত। অনেক ক্ষেত্রেই স্বাবলম্বী নারী সেই বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বের হয়ে এসে স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের চিন্তা করেন। অন্যদিকে, পুরুষের ক্ষেত্রে একই অনুষঙ্গ চলে। স্ত্রীর দ্বারা স্বামী নির্যাতনের কিছুটা এককেন্দ্রিক। স্ত্রীর পরিবারের অন্য সদস্যরা সেখানে শুধুই পরামর্শ দাতা, তাই হয়তো নির্যাতিত পুরুষ সমাজ ও সন্তানের সুখের কাছে নিজের সুখকে বিসর্জন দেন। সম্মান ও স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকা ব্যক্তিমাত্রই রাষ্ট্রিক ও নৈতিক অধিকার বৈকি।
এবার আরও কিছুটা গভীরে যাওয়া যাক। দার্শনিক অ্যারিস্টটলের মতে, খাদ্য, পানীয় ও যৌনতা মানুষের মৌলিক চাহিদা। আর দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর যৌন চাহিদা পরিপূরণের বৈধ সামাজিক লাইসেন্স হলো বিয়ে। বিয়ের ফলে প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী যেমন একদিকে তাঁদের সহজাত জৈবিক চাহিদা বৈধভাবে পরিপূরণ করতে পারেন, তেমনি নর-নারীর বহুগামিতা প্রতিরোধেও বিয়ের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও এটি সত্যি যে আমাদের সমাজ একজন প্রাপ্তবয়স্ক নর বা নারীর এই স্বাভাবিক চাহিদাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা না করে বরং এই স্বাভাবিক যৌন চাহিদাকে বোতলবন্দী করে রাখেন। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্রতি উভয়ের যৌন চাহিদা পূরণের আবশ্যকতাকে উপেক্ষা করতে থাকেন। এ কারণে একটা পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁদের সম্পর্ক হয়ে ওঠে কেবল সন্তানকেন্দ্রিক এবং পারস্পরিক আকর্ষণহীন।
আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের আচরণ নিয়ে আছে একধরনের দীর্ঘ ট্যাবু। এ সমাজ আদর্শ নারী বলতে বোঝায় রান্নাবান্নায় পারদর্শী এবং সন্তান লালনে দক্ষ নারীকে। অন্যদিকে, আদর্শ পুরুষ মানে হলো জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যাঁর রয়েছে অবাধ বিচরণ। ফলে, অপরিণত ক্যারিয়ার ও দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রামের প্রথম জীবনে দুজন নর-নারী ভালোবেসে ঘর বাঁধলেও কালক্রমে দুজনের ফোকাস দুদিকে প্রসারিত হতে থাকে। একদিকে স্ত্রীর মনোযোগ থাকে আদর্শ স্ত্রী ও আদর্শ মা হওয়ার প্রতি, অন্যদিকে স্বামী ব্যস্ত নিজের ক্যারিয়ার ও জ্ঞানচর্চায়। এখন যেমন অনেক নারী তাঁর ক্যারিয়ারের ব্যাপারে বেশ সচেতন অন্যদিকে অনেক পুরুষ আছেন যারা প্রাত্যহিক সাংসারিক কাজে মনোযোগী।
সাধারণভাবে ক্যারিয়ার ও বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে বেশি যুক্ততার কারণে স্বামীর জগৎ যতটা প্রসারিত হয়, স্ত্রীর জগৎ ততটাই সংকুচিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে জ্ঞানের পরিসীমা, চিন্তার গভীরতা, বাক্য, কর্ম, মনন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় এক বিস্তর পার্থক্য। তখন তাঁদের জন্য বৈবাহিক জীবন মানেই যেন প্রতিদিনের অপছন্দের রুটিন মেনে চলা। এই রুটিন যিনি ভালোবেসে মানছেন, তাঁর জন্য এটি আশীর্বাদ, কিন্তু যিনি মেনে চলতে চাচ্ছেন না, তাঁর জন্য সেটি হয়ে ওঠে অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মতো। এ কারণে একদিকে স্ত্রী যেমন সংসারে তাঁর মর্যাদা হারান, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, অন্যদিকে স্বামীর জন্য সেই সংসার হয়ে ওঠে এক আকর্ষণহীন রুটিন।
তবে সমাজে বিবাহবিচ্ছেদের পর পুরুষের তুলনায় একজন নারী বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে পড়েন। এ সমাজে একজন অবিবাহিত নারী নিজের চেয়ে দ্বিগুণ বয়সী বিপত্নীক কিংবা তালাকপ্রাপ্ত পুরুষের একাধিক সন্তানের মাতৃত্ব মেনে নিয়ে বিয়ে করতে রাজি হলেও বাঙালি অবিবাহিত পুরুষ বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে করতে নারাজ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন পুরুষ নিজের বৈবাহিক অবস্থার সমপর্যায়ের কারও সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে অন্য জায়গায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর প্রথম পক্ষের সন্তানের প্রতি থাকে চরম বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ। যুগে যুগে সৎমায়ের নির্যাতনের গল্প সাহিত্যের পাতায় স্থান পেলেও সৎ বাবার অত্যাচার কিংবা অমানবিক আচরণের গল্প সবার অলক্ষ্যে নয়। মানুষ ভুলে যায় রক্তের বাঁধনের চেয়ে ভালোবাসার বন্ধন অনেক বেশী স্থায়ী।
সমাজের কিছু ভাবনার এখন পরিবর্তন হওয়া জরুরি। বিবাহপূর্ববর্তী সম্পর্কের ভাঙন যেমন সমাজ এখন ইতিবাচক হিসেবে দেখছে, তেমনি বিবাহপরবর্তী সম্পর্কের ভাঙনকেও সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ যদি অবশ্যম্ভাবী হয়, তবে তাঁকে সুন্দর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা হিসেবে দেখতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে যে পরিমাণ উদ্বেগ দেখা যায় বা সমাজে যেভাবে বিবাহবিচ্ছেদকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়, সেটা সভ্য সমাজের জন্য খুবই অনভিপ্রেত। আমরা ভুলে যাই যে বিয়ে একটা চুক্তি। আর এই চুক্তি ভঙ্গ করা ব্যক্তিমাত্রেরই অধিকার। দুজন মানুষ পাশাপাশি পথ চলতে গিয়ে যদি কখনো তাঁদের মাঝে দূরত্ব বাড়তে থাকে, তবে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে একটি অসুখী জীবনের বোঝা বহন করার চেয়ে সম্মান ও স্বস্তি নিয়ে আলাদা থাকা অনেক শ্রেয়।
সন্তান ও সমাজের কথা ভেবে অসুখী ও অসম বিয়ে টিকিয়ে রেখে জীবন পার করলে তাতে সমাজ জেতে ঠিকই, হেরে যায় মানবতা। একজন নারী বা পুরুষ যখন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হন, তখন তিনি সমাজের অন্যদের মতো নিজেকে সম্মান করতে শেখেন। অন্যের প্রতি অন্যায় যেমন কাম্য নয়, তেমনি নিজের প্রতি অন্যায়কেও প্রতিহত করাও মানুষের কর্তব্য। জীবন একটাই। এক জীবনে প্রতিটি মানুষের সুখী হওয়ার অধিকার আছে। যে সম্পর্কে সুখ নেই, যে সম্পর্ক প্রতি মুহূর্তে কেবল সমঝোতা করতে বাধ্য করে, যে সম্পর্ক নিজেকে বিসর্জন দিতে বাধ্য করে, সেই সম্পর্কের জালে আবদ্ধ থাকা অন্যায়। মানুষ পশু নয় যে তাঁর নিজের সুখকে কোরবানি করতে হবে। মানুষ গাধা নয়, যে তাঁকে অসুখী জীবনের বোঝা টানতে বাধ্য হতে হবে। মানুষ সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠতম প্রাণী। তাই একটি সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা যেমন নৈতিক, তেমনি সেই সম্পর্ক থেকে বের হওয়াও তাঁর অধিকার। সহনশীলতার মাত্রা অতিক্রম যেমন বর্জনীয়, ঠিক তেমনি সহযোগিতার মাত্রা থেকে যায় কিছু করণীয়।
পরিশেষে বলি, একটি সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য দুজনের বিয়ে নামক চুক্তির প্রতিটি শর্ত পালন করা জরুরি। যতক্ষণ উভয়েই নিজে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ না করছেন, ততক্ষণ তাঁদের সম্পর্ক অটুট থাকবে। মূল কথা হলো সংসার টিকে থাকে উভয়ের যৌথ প্রচেষ্টায়, আর সংসার ভেঙে ফেলার জন্য একজনের আচরণ বা ইচ্ছাই যথেষ্ট। অর্থাৎ, বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য দুজনের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ, একে অপরের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে হস্তক্ষেপ না করা খুব জরুরি। তার চেয়ে বেশি জরুরি নিজেদের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় পরিবারের অন্য সদস্যদের অযাচিত প্রবেশাধিকারকে প্রতিহত করা। একটি সুখী দম্পতি মানে এই নয় যে একজন চা পছন্দ করে বলে অপরজনকে চা-ই পছন্দ করতে হবে। সুখী দম্পতি মানে হলো একসঙ্গে একই টেবিলে বসে একজন গরম পানীয় এবং অপরজন ঠান্ডা পানীয় সেবনের অধিকার সংরক্ষণ করা।
Posted ৯:১৯ এএম | শনিবার, ০১ জুন ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।